রোযার ফাযীলত ও মাসায়েল
মুফতী হাফীজুদ্দীন
রোযার ফাযাইল
রমযান মাস রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। রমযান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজ করুণায় এই মাসে রহমতকে অবারিত করে দেন। দয়াসুলভ বিষয়গুলো সহজ করে দেন, আর ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করে দেন তাঁর ফরমাবরদার ও অনুগত বান্দাদের জন্য। তাই তো রহমাতুললিল আলামীন, নাসেহুল আমীন-বিশ্বস্ত হিতাকাংখী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর উম্মতকে এই মাসে আল্লাহ তা’আলার সেই সব অনুগ্রহ অর্জন করতে রাহনুমায়ী করেছেন। তিনি আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করতে উৎসাহিত করেছেন রোযা রাখার মাধ্যমে, রাতে নফল নামায পড়ার মাধ্যমে, দান-সদকা, যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াতসহ আরো আ’মালে সালেহ, অর্থাৎ নেক আমালের মাধ্যমে।
রোযার প্রতি প্রেরণা দিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
عن أبي هريرة رضي الله عنه: عن النبي صلى الله عليه و سلم قال من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه ومن قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه
সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালীন প্রতিদান কামনায় রমযানের রোযা রাখবে তার অতীত জীবনের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ: ১ম খন্ড ২৫৫ পৃ, মুসলি শরীফ)
দিনের বেলা রোযা রাখাকে ফরজ করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর । যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। ( সূরা বাকারা, আয়াত:১৮৩)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: আল্লাহ তা’আলা বলেন রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব ।
( হাদীসে কুদসী , বুখারী শরীফ,১ম খন্ড, ২৫৪ পৃ) ।
আরও বর্ণিত হয়েছে:
للصائم فرحتان يفرحهما إذا أفطر فرح وإذا لقي ربه فرح بصومه রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের বিষয় রয়েছে।(একটি হল): যখন ইফতার করবে। (অপরটি হচ্ছে) রোযার প্রতিদান হিসেবে যখন তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ২৫৫ পৃ)
রমযানের রাতে ইবাদতের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে
من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়তে রমযানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে (অর্থাৎ তারাবী পড়বে) তার অতীত গুনাহগুলো
মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাত শরীফ:১ম খন্ড, ১৭৩ পৃ: )।
রমযান মাসে দান সদকা করার ফযীলতও অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: এই মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে ইহা তার গোনাহ মাফ হওয়ার ও (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্তি লাভের উপায় হবে। আর ঐ রোযাদারের সাওয়াব মোটেও কম হবে না। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকে তো এই সামর্থ রাখে না, যা দ্বারা সে রোযাদারকে ইফতার করাবে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: (এই সাওয়াব পেট ভরে খাওয়ানের উপর নির্ভর করে না বরং) এই সাওয়াব আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে ও দান করবেন যে (নিজের সাধ্যানুসারে) রোযাদারকে এক চুমুক দুধ দিয়ে কিংবা একটি মাত্র খেজুর দিয়ে কিংবা এক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করাবে। যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে তৃপ্ত করাবে আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) থেকে এভাবে পান করাবেন যে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে আর পিপাসা লাগবে না। (মেশকাত শরীফ: ১৭৪)
এই মাসের যে কোন ইবাদতের ফযীলত অন্য যে কোন মাস অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: এই মাসে যে ব্যক্তি নফল নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় হবে যে রমযান ছাড়া অন্য সময় একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল। (মিশকাত শরীফ: ১৭৩পৃ)
সুতরাং প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানদের উচিত এই মাসে দান, সদকা, কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাযসহ বেশি বেশি ইবাদত করা। বিশেষত এই চারটি কাজ বেশি করা।
১. বেশি বেশি কালিমা পড়া। ২. এস্তেগফার বেশি বেশি করে পাঠ করা। ৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তির ও ৪. জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি বেশি দুআ করা।
রোযার বিধান ও মাসাঈল
মু’মিন মুসলমান প্রত্যেকের উপর রমযানের রোযা ফরয।
কুরআন হাদীসের সাথে সাথে ইজমা তথা উম্মতের সর্বসম্মত মত এবং কিয়াস তথা যুক্তির দ্বারাও রোযা ফরয হওয়াটা প্রমাণিত। অতএব যদি কোন ব্যক্তি রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ২য় খন্ড, ২০৯-২০১পৃ.)
রোযার পরিচয়
রোযার আরবী শব্দ হল সাওম ,যার আভিধানিক অর্থ হল -বিরত থাকা। আর রোযার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে শরীয়তের পরিভাষায় রোযা বলা হয়।
( আদ্দুররুল মুখতার: ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃ:, আল আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৫২ পৃ:, আলমগীরী :১ম খন্ড, ১৯৪ পৃ:)
রোযা ফরজ হওয়ার শর্ত
কোন ব্যক্তির উপর রোযা ‘ফরজ’ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।
১. মুসলমান হওয়া, সুতরাং কাফেরের উপর রোযা ফরজ নয়।
২. বিবেকবান হওয়া, সুতরাং পাগলের উপর রোযা ফরজ নয়।
৩. সাবালেগ হওয়া, সুতরাং নাবালেগের উপর রোযা ফরজ নয়।
(আলমগীরী: ১ম খন্ড,১৯৫ পৃ:, ফাতওয়া শামী:৩ য় খন্ড, ৩৩১ পৃ:, আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৮ পৃ:)
রমজান মাসেই রোযা আদায় আবশ্যক হওয়ার শর্ত
যদি কোন ব্যক্তির মাঝে নিম্নোল্লিখিত দু’টি শর্ত পাওয়া যায় তাহলে রমজান মাসে রোযা রাখতে হবে, স্বেচ্ছায় তা বিলম্বিত করা যাবে না। ১. সুস্থ হওয়া। ২. মুকীম হওয়া।
( আলমগীরী : ১ম খন্ড,১৯৫ পৃ:, আলআলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃ:)
হ্যাঁ কোন ব্যক্তি যদি অসুস্থ বা মুসাফির (শরয়ী ৪৮ মাইল দূরের সফরে যায়) হয় তাহলে সে রমজান মাসে রোযা না রেখে পরবর্তীতে সুস্থ বা বাড়িতে ফিরে কাযা করতে পারে।
রোযা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বর্জন করার সাথে সাথে যদি নিন্মোক্ত শর্তগুলোও পালন করা হয় তাহলে রোযা বিশুদ্ধ হবে-অন্যথায় ঐ রোযা বিশুদ্ধ হবে না। পরবর্তীতে আবার কাযা করতে হবে।
১. রোযার নিয়্যাত করা।
২. মহিলাদের জন্য হায়েয-নেফাছ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ।
(আলমগীরী:১ম খন্ড,১৯৫পৃ:,ফাতওয়া শামী :৩য় খন্ড, ৩৩১ পৃ:,আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃ:)
রোযার নিয়্যত
রোযা সহীহ হওয়ার জন্য নিয়্যত করা শর্ত, নিয়্যাত ব্যতিত রোযা বিশুদ্ধ হবে না। তবে নিয়্যত মুখে উচ্চারণ করা কিংবা আরবীতে বলা ফরজ বা জরুরি নয় । শুধু মনে মনে এতটুকু কথা থাকলেই যথেষ্ঠ হবে যে আমি রোযা রাখতেছি।
আলবাহরুর রায়েক:২য় খন্ড,৪৫২পৃ:, আলমগীরী : ১ম খন্ড,১৯৫পৃ:)
নিয়্যত করার পর পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম
শরীয়ত অনুযায়ী সুবহে সাদিক থেকে রোযা শুরু হয়। নিয়্যত করা থেকে নয়। সুতরাং নিয়্যত করার পরও সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম করতে পারবে। (মুসলিম-৩৪৯)
তবে সুবহে সাদিক হওয়ার আশংকা থাকলে এসব না করাই উচিত।
যে সমস্ত কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়
পানাহার ও যৌনাচার
রোযা অবস্থায় পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা জরুরি, সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি দিনের বেলায় ইচ্ছা করে উপরোল্লিখিত তিনটি কাজের যে কোন একটি কাজ করে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং তার উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
( আলবাহরুর রায়েক:২য় খন্ড,৪৮২পৃ:)
সময়ের আগে ও পরে পানাহার করলে
সুবহে সাদিক না হওয়ার পূর্ণ ধারণার উপর কেউ সাহরী খেল অথচ তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে ( সাহরী খাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে) অথবা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্ণ ধারণায় ইফতার করল অথচ বাস্তবে তখনও সূর্য অস্ত যায়নি, এমতাবস্থায় তাকে ঐ রোযাটির কাযা করতে হবে। তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। পক্ষান্তরে সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ সহরী খেয়ে নেয় আর বাস্তবেও সুবহে সাদিক হয়ে থাকে, তাহলে তার কাযা ওয়াজিব হবে, আর যদি সূর্য অস্ত না যাওয়ার প্রবল ধারণা সত্ত্বেও ইফতার করে নেয় আর বাস্তব দেখা যায় সূর্য অস্ত যায়নি তাহলে তার কাযা কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
(ফাতওয়ায়ে ফাতওয়া শামী ৩য় খন্ড, ৪৮০ পৃ:)
ভুল সংবাদে সাহরী খাওয়া
সুবহে সাদিক হয়নি এই সংবাদ পেয়ে কোন ব্যক্তি খানা খেল, কিন্তু পরবর্তীতে তার খবর ভুল বলে প্রমাণিত হলে তার ঐ রোযার কাযা করতে হবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না।
( আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৮৩ পৃ:)
ভুল সংবাদে ইফতার করা
সূর্য অস্ত চলে গেছে, ইফতারির সময় হয়েছে-দুই ব্যক্তির এই খবরের ভিত্তিতে রোযাদার ইফতার করল। কিন্তু অপর দুই ব্যক্তি বলল: না, এখনও ইফতারির সময় হয়নি। পরবর্তীতে দেখা গেল আসলেই ইফতারির সময় হয়নি-সূর্য অস্ত যায়নি। তাহলে ঐ রোযাদারকে রোযার কাযা করতে হবে, তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
( ফাতওয়ায়ে ফাতওয়া শামী, ৩য় খন্ড, ৩৮২ পৃ:)
রোযার কথা ভুলে পানাহার করলে
যদি কেউ রোযা রাখার কথা ভূলে গিয়ে পানাহার করে তাহলে তার রোযা ভাঙ্গবে না। তার রোযা বহাল থাকবে।
(মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড,৩৬৪ পৃ:, বুখারী ১ম খন্ড,২৫৯ পৃ:, ফাতহুল ক্বাদীর: ২য় খন্ড,২৫৪ পৃ:, ফাতওয়া শামী : ৩য় খন্ড,৩৬৫ পৃ:)
তবে কেউ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরও যদি খায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে, তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবেনা।
ভুলে খাওয়া শুরুর পর মুখে অবশিষ্ট খাদ্য খেয়ে ফেললে
কোন ব্যক্তি ভুলে আহার শুরু করার পর যদি রোযার কথা স্মরণ হয় তাহলে সাথে সাথে মুখে যা আছে – তা ফেলে দিতে হবে। যা পেটে চলে গেছে তা বের করার অনর্থক চেষ্টা করার দরকার নেই। কিন্তু স্বরণ হওয়ার পর যদি মুখের লোকমাটা খেয়ে ফেলে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে ।
(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী : ১ম খন্ড,২০৩ পৃ:)
নাকে বা পায়খানার রাস্তায় ঔষধ প্রবিষ্ট করানো
রোযা অবস্থায় নাকে অথবা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধ প্রবিষ্ট করালে অথবা কানে তেল বা ঔষধ দিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করা ওয়াজিব হবে,তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
( আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড,৪৮৬ পৃ:)
কানে পানি দেয়া
রোযা অবস্থায় যদি রোযাদার কানে পানি দেয় তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে। আর যদি গোসলের সময় অনিচ্ছায় পানি প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(ফাতহুল কাদীর : ২য় খন্ড, ৪৮৭ পৃ:)
বিড়ি, সিগারেট এবং হুক্কা পান করা
লোবান ইত্যাদির ধোঁয়া নাক দিয়ে গ্রহণ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং অনুরূপ রোযা রাখা অবস্থায় বিড়ি, সিগারেট ও হুক্কা পান করা যাবে না, কেননা এগুলো পানাহারের নামান্তর।
(ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ: ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪১৫ পৃ:)
দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যবস্তু গলায় প্রবেশ করলে
দাঁতের ফাকে আটকে থাকা খাদ্য বস্তু একটি ছোলার সমপরিমাণ বা তদপেক্ষা বেশি হলে তা খাওয়ার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা নয়। আর বস্তুটি ছোলার সমপরিমাণ থেকে যদি কম হয় তাহলে তা খাওয়ার দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে যদি সেই কম পরিমাণটা মুখ থেকে বের করার পর আবার মুখে দিয়ে খেয়ে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং ঐ রোযার কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা নয়। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী : ১ম খন্ড, ২০২পৃ:)
দাঁতের রক্ত গলায় চলে গেলে
যদি দাঁতের গোড়া হতে নির্গত রক্ত থু-থুর সাথে গিলে ফেলে ,আর থু-থুর অপেক্ষা রক্তের পরিমাণ বেশি হয় এবং রক্তের স্বাদ ও অনুভূত হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে। আর যদি থুথুর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না।
(আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড,৪৬৮ পৃ:)
পান তামাক ও গুল ব্যবহার
রোযা অবস্থায় পান তামাক চাবানো ও গুল ব্যবহার করা যাবে না, এর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেননা পান চাবানোর পর তার কিছু অংশ এবং থুথুর সাথে তার রস গলায় চলে যাওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে এবং সেই উদ্দেশ্যেই পান তামাক চাবানো ও গুল ব্যবহার করা হয়। সুতারাং পান-তামাক ও গুল ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ( ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ:৬ষ্ঠ খন্ড,৪০৪ পৃ:)
কুলি করার সময় গলায় পানি চলে গেলে
কুলি করার সময় বা নাকে পানি দেওয়ার সময় যদি আকস্মাৎ গলায় পানি চলে যায় আর রোযার কথা স্মরণ থাকে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম খন্ড,১০১ পৃ:)
অখাদ্য বস্তু খেয়ে ফেললে
রোযা অবস্থায় পাথরের টুকরা,মাটি ইত্যাদি অখাদ্য বস্তু খেয়ে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা নয়। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি এসব বস্তু খেতে অভ্যস্ত থাকে এবং খায় অথবা যদি কেউ এগুলো ঔষধ হিসেবে বা উপকার লাভের আশায় খায়, তবে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে ফাতওয়া শামী:৩য় খন্ড,৩৭৬পৃ:)
রোযা অবস্থায় যৌন কামনা চরিতার্থ করা
স্বামী -স্ত্রী উভয়ের ইচ্ছায় রোযা অবস্থায় যদি সহবাস করে তাহলে উভয় জনের রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং উভয়ের উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। আর যদি স্ত্রীর অনিচ্ছায় স্বামী জোর পূর্বক সঙ্গম করে তাহলে স্বামীর উপর কাযা কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হবে। আর স্ত্রীর উপর শুধু কাযা ও ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা নয়। আর যদি স্বামীর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী পক্ষ থেকে বাধ্য হয়ে সঙ্গম করে তাহলে স্ত্রীর উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে আর স্বামীর উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হেব।
(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম খন্ড,২০৬ পৃ:)
সহবাস ব্যতীত অন্য উপায়ে বীর্যপাত হলে
রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা, আদর সোহাগ করা বা একের যৌনাঙ্গ অপরের যৌনাঙ্গকে সম্পর্শ করার ফলে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে এর দ্বারা কাফফারা ওয়াজিব হবে না, শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
(ফাতওয়ায়ে ফাতওয়া শামী : ৩য় খন্ড,৩৭৮পৃ:)
রোযা অবস্থায় ইনহিলার ব্যবহার করা
ইনহিলার এর মাধ্যমে পেটে ঔষধ পৌছানো হয় তার পরিমান একে বারে অল্প হওয়া সত্বেও ইচ্ছাকৃত ভাবে তা ব্যবহারের কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে, এটাই সাভাবিক মাসয়ালা। কিন্তু এই ঔষধ ভেতরে গিয়ে গ্যাসে পরিনত হয় না খাওয়ার আগে গ্যাসে পরিণত হয় এব্যাপারে ডাক্তারদের দ্বিমত রয়েছে। বিধায় সর্তকতা ও উত্তম হলো এমন রোগী রোযা রাখবে এবং নিজ সামর্থ হিসাবে প্রত্যেক রোযার ফিদিয়াও দিয়ে দিবে, যাতে রোযা না হলে ফেদিয়া দ্বারা তার দ্বায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে দিনের বেলায় তা ব্যবহার না করে শুধু রাতে ব্যবহার করা আরো ভাল।
(কিতাবুল ফাতওয়া ৩য় খন্ড, ৩৯৩ পৃষ্ঠা)
যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না
ইনজেকশ বা স্যালাইন গ্রহণ
রোযা অবস্থায় প্রয়োজনবশত: ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করা জায়িয আছে। এমনকি প্রয়োজনে গ্লুকোজ সাল্যাইনও পুশ করা যাবে। এর দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কোন ঔষধ ব্যতীত যদি শুধু অক্সিজেন নেয়া হয় তাহলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
( জাদীদ ফিকহী মাসাঈল:১ম খন্ড,১৮৮ পৃ:)
রক্ত দেয়া বা নেয়া
নিজের কোন রোগের কারণে, বা অন্য রোগীর অপারেশন বা অন্য কোন প্রয়োজনে রোযা অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না এবং প্রয়োজনে রক্ত গ্রহণ করাতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
(আহসানুল ফাতওয়া:৪র্থ খন্ড, ৪২৫ পৃ:)
চোখে ঔষধ বা সুরমা দেয়া
রোযাদার দিনের বেলায় প্রয়োজনে চোখে ঔষধ দিতে পারে। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। ঔষধ চাই তরল জাতীয় হোক এমনিভাবে সুরমাও দিতে পারবে। এসব বিষয়ে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। যদিও ঔষধ বা সুরমার স্বাদ গলায় অনুভূত হয় না কেন। বা থু-থুর সাথে তা দৃষ্টিগোচর হয় না কেন।
( হিদায়া: ১ম খন্ড,২০১ পৃ:, আলবাহরুর রায়েক:২য় খন্ড, ৪৭৬ পৃ:)
রোযা অবস্থায় মা বাচ্চাকে দুধ পান করানো
রোযা অবস্থায় দিনের বেলায়ও মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবে। এর দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হবে না। এমনিভাবে এর দ্বারা অযুও ভাঙ্গবে না।
( ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ:৬ষ্ঠ খন্ড,৪০৮-৪১১ পৃ:)
রোযা অবস্থায় তরকারীর লবণ চাটা
স্বামী যদি তরকারীতে লবণ কম-বেশি হলে বা মসল্লা ঠিকমত না হলে গাল-মন্দ করে, মারপিট করে, তাহলে জিহ্বা দিয়ে তরকারীর লবণ দেখা যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন ভিতরে চলে না যায়। বরং জিহবায় দিয়ে সাথে সাথে থুথু করে ফেলে দিবে। (ফাতওয়ায়ে রহিমীয়া:২য় খন্ড, ৪১ পৃ:)
থু-থু বা গলার শ্লেস্মা গিলে ফেলা
রোযা অবস্থায় মুখের থু-থু অথবা সর্দির কারণে নাকের পানিও শ্লেস্মা উপরের দিকে টান দেয়ার কারণে যদি গলায় এসে যায় আর রোযাদার তা গিলে ফেলে তাহলে এর দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড, ৪৭৭ পৃ:)
কুলি করার পর থু-থু গিলা
কুলি করার পর মুখে যেই সিক্ততা বাকি থাকে থু-থুর সাথে তা গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী: ১ম খন্ড, ২০৩ পৃ:)
রোযা অবস্থায় স্নো-ক্রিম,পাউডার ও লোশন ব্যবহার করা
রোযা অবস্থায় মাথায় বা শরীরে তেল ব্যবহার করা জায়িয। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। বিধায় এই মাসআলার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, রোযা অবস্থায় স্নো ক্রিম, পাউডার ও লোশন জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে প্রসাধনীতেই যদি নাপাক বা ব্যবহার করা যায় না এমন কোন মেডিসিন থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। তাহলে তা রোযা ছাড়া অন্য অবস্থায়ও ব্যবহার করা যাবে না। (ফাতওয়া শামী :৩য় খন্ড,৩৬৬ পৃ:)
আতর ব্যবহার
রোযা অবস্থায় আতর ব্যবহার করা যাবে। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
(ফাতওয়া শামী ৩য় খন্ড,৩৬৬ পৃ:, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৭তম খন্ড,১৬০ পৃ:)
মিসওয়াক করা
রোযা অবস্থায় দিনের যে কোন সময়ে গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা যাবে, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। অনেকে মনে করে রোযা অবস্থায় আসরের পূর্বে মিসওয়াক করা যায় না। এটি একটি ভুল ধারণা । নিম গাছ, জয়তুন গাছ সহ আরো অন্যান্য গাছের ভিজা ডাল দিয়েও মিসওয়াক করা যাবে। মিসওযাক করার সময় যদি ডালের আশ গলায় চলে যায় তাহলে এর দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হবে না। ( ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়া: ১৭তম খন্ড,১৪৭ পৃ:)
টুথ পেষ্ট অথবা টুথ পাউডার ব্যবহার করা
রোযা অবস্থায় টুথ পেষ্ট বা টুথ পাউডার অথবা কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিস্কার করা মাকরূহ। দিনের বেলায় এসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে যদি একান্ত প্রয়োজন হয় যেমন এগুলো ব্যবহার না করলে দাঁতের ব্যথা হয় বা দাঁতের গোড়া ফুলে যায় তাহলে প্রয়োজনের কারণে ব্যবহার করতে পারবে তবে এ অবস্থায়ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে গলায় চলে না যায়। যদি সামান্য একটুও গলায় চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(জাদীদ ফিকহী মাসাইল: ১ম খন্ড,১৮৮ পৃ:)
বমি করা
রোযা অবস্থায় যদি কারো অনিচ্ছায় বমি হয় তাহলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তার পরিমাণ বেশি বা কম হোক । আর যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে এবং তা মুখ ভরে হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। মুখ না ভরলে রোযা ভাঙ্গবে না। বমি আসার পর যদি তা নিজে নিজেই আবার ভেতরে চলে যায় তাহলেও রোযা ভাঙ্গবে না। হ্যাঁ ইচ্ছা করে যদি বমিতে নির্গত খাদ্য খেয়ে ফেলে বা গিলে ফেলে এবং ছোলা পরিমাণ হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(ফাতওয়া শামী:৩য় খন্ড,৩৯২পৃ:)
নাইট প্রেসার হলে
কোন ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে যদি সঙ্গম করার পর ঘুমিয়ে যায়- আর সুবহে সাদিকের পর ঘুম থেকে উঠে অথবা দিনের কিয়দাংশ নাপাক অবস্থায় থাকে বা পুরো দিন নাপাক অবস্থায় থাকে অথবা দিনের বেলায় নাইট প্রেসার-স্বপ্নদোষ হয় তাহলে এসবের দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হবে না। রোযা আদায় হয়ে যাবে। বাকি নাপাক অবস্থায় থাকাটা গোনাহের কাজ । তাছাড়া দিনের নামাযগুলো পড়ার জন্য তো গোসল করতেই হেব। তাই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি গোসল করতে হবে। তবে এই গোসল করা না করার সাথে রোযার বিশেষ সম্পর্ক নেই । (আহকামুল কুরআন:১ম খন্ড, ১৭২ পৃ:)
যাদের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে
নিম্নোল্লিখিত সমস্যায় পতিত ব্যক্তিদের রমযান মাসে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যখনই সমস্যা কেটে যাবে তখনই তার কাযা করে নিতে হবে। আর যদি কখনই সমস্যা না কাটে এবং ঐ সমস্যায় জর্জরিত থাকা অবস্থায় মারা যায় তাহলে সমর্থ থাকা শর্তে ফেদিয়া দিলেই যথেষ্ট হবে।
১. মারত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
২. শরয়ী সফরে থাকা।
৩. রোযা না রাখতে সন্ত্রাসীদের চাপে বাধ্য হওয়া।
৪. গর্ভবর্তী বা দুধপানকারিণী হওয়া। যদি এমতাবস্থায় রোযা রাখলে নিজের অথবা সন্তানের মৃত্যু আশংকা থাকে।
৫. ক্ষুধা বা পিপাসায় মৃত্যু মুখে পতিত হওয়া।
৬. বয়োবৃদ্ধ হওয়া। (ফাতওয়া শামী :৩য় খন্ড, ৪০২ পৃ:)
রুগ্ন অবস্থায় রোযা
যদি কোন ব্যক্তি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় এবং এ কারণে রোযা রাখা সম্ভব না হয় অথবা মুসলমান দ্বীনদার অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি কোন ব্যাপারে বলে যে, রোযা রাখলে আপনি মারাত্মকরোগে আক্রান্ত হবেন-তাহলেঐ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। (ফাতওয়া শামী :৩য় খন্ড,৪০৩ পৃ:)
বয়োবৃদ্ধদের রোযার পরিবর্তে ফেদিয়া দেয়া
যদি কোন ব্যক্তি একেবারে বয়োবৃদ্ধ হয় আর এ কারণে সে রোযা রাখতে অক্ষম হয় তাহলে সে রোযা না রেখে ফেদিয়া দিতে পারে। রোযা রাখতে অক্ষম আবার ফেদিয়া দিতেও যদি অক্ষম হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। তাছাড়া তার করার আর কিছু নেই। (বাদায়ে : ২য় খন্ড,২৫২ পৃ:)
সফরের নিয়তের সাথে সাথে রোযা ভাঙ্গা যাবে না
কোন ব্যক্তি সফরের নিয়তের দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত ঐ দিনের রোযা ভাঙ্গা তার জন্য জায়িয নেই, রোযা ভেঙ্গে এরপর রওয়ানা করে তাহলে তার উপর ঐ রোযার কাযা কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী:১ম খন্ড,২০৬ পৃ:)
রোযার দিনে মহিলাদের করণীয়
ঋতু অবস্থায় রোযা রাখা যাবে না। তবে দিনের বেলায় যদি কোন মহিলা ঋত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বন্ধ হওয়ার পর থেকে দিনের বাকি অংশে পানাহার থেকে বিরত থাকবে রোযার সম্মানার্থে। তবে এই দিনটি রোযা হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে এর কাযা করতে হবে। (হিদায়া:১ম খন্ড,২০৫ পৃ:)
গড়গড়া করা
রোযা অবস্থায় অজু করার সময় গড়গড়া করা, নাকের ভিতর পানি টেনে নেয়া মাকরুহ। (আলমগীরী:১ম খন্ড,১৯৯ পৃৃ:)
শরীর দুর্বল করে দেয় এমন কোন কাজ করা
রোযা অবস্থায় এমন কোন কাজ করা মাকরুহ যার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য হয়।
(ফাতওয়া শামী : ৩য় খন্ড,৩৯৯ পৃৃ:)
সেহরী ও ইফতার
রোযার জন্য সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব এবং প্রায় শেষ সময়ে সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এতটুকু দেরী করবে না যার দরুন সোবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
(ফাতওয়া আলমগীরী:১ম খন্ড, ২০০ পৃ:)
ইফতারের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো তাড়াতাড়ি করা অর্থাৎ সময় হতেই সাথে সাথে ইফতার করা মুস্তাহাব।
(ফাতওয়া আলমগীরী:১ম খন্ড,২০০ পৃ:, ফাতওয়া শামী: ৩য় খন্ড,৪০০ পৃ:)
কাফফারা ও ফেদিয়া
রমযান মাসে শরীয়ত পক্ষ থেকে অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর ঐ রোযার কাযা করার সাথে সাথে কাফফারাও আদায় করতে হবে। কোন কোন সুরতে কাফফারা দিতে হবে তা বিভিন্ন মাসআলার আওতায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কাফফারার পরিচয়
রোযা না রাখার কারণে একটি গোলাম আযাদ করে দিতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে একাধারে দুই মাস রোযা রাখতে হবে। তাও সম্ভব না হলে ষাটজন মিসকীনকে দুবেলা খাওয়াতে হবে। এটা -ই হল রোযার কাফফারা। (আলবাহরুর রায়েক: ২য় খন্ড,৪৮৪ পৃ: )
কাফফারার পরিমাণ
কাফফারার পরিমাণ হল সদকায়ে ফিতরের ন্যাযয় অর্থ্যাৎ ষাটজন মিসকিনের প্রত্যেককে পৌণে দুই কেজি গম বা আটা বা তার মূল্য দিয়ে দেয়া। আর তা না দিয়ে যদি ষাটজন ফকীরকে দু’বেলা খানা খাওয়ায় তাহলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে ।
(আহসানুল ফাতওয়া:৪র্থ খন্ড, ৪৩৪ পৃ:)
ফেদিয়ার পরিচয়
যদি কোন ব্যক্তি রমযান মাসে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে রোযা রাখতে অক্ষম হয় – যার কারণে সে রমযানের কয়েকটি রোযা রাখতে পারেনি, পরবর্তীতে সুস্থ্য হয়ে ঐ কয়েক দিনের কাযা করতে সক্ষম হলেও সে রাখেনি এমতাবস্থায় যদি সে মারা যায় আর ঐ রোযাগুলোর ফেদিয়া দেয়ার অসিয়ত করে যায় তাহলে তার পরিত্যাক্ত সম্পদ থেকে এক তৃতীয়াংশ দ্বারা ঐ অসিয়ত পুরা করা আবশ্যক। ( ফাতওয়া শামী:৩য় খন্ড,৪০৬ পৃ:)
ফেদিয়ার পরিমাণ
ফেদিয়ার পরিমান হলো সদকায়ে ফিতরের পরিমাণের ন্যায়। অর্থাৎ পৌনে দুই সের গম বা তার সমমূল্য টাকা দিয়ে দিবে। তবে একজন ফকীরকে যদি সকাল -বিকাল খানা খাওয়ানো হয় তাহলেও ফেদিয়া
আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে রোযার এ ফেদিয়া অন্তত রমাযান মাসের চাঁদ উঠার পর আদায় করতে হবে। চাঁদ উঠার আগেই ফেদিয়া আদায় করলে তা আদায় হবে না।
(ফাতওয়া মাহমুদীয়া:৭ম খন্ড,২৯৩ পৃ:, ফাতওয়া শামী:৩য় খন্ড,৪১১পৃ:)
রমযানে করণীয় কিছু আমল
রমযান মাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে অহেতুক কাজে নষ্ট করা যাবে না, বরং সময়কে মূল্যায়ন করা এবং কাজে লাগানো উচিত, বিশেষ করে কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হল, এর প্রতি যত্মবান হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ।
১. রোযা রাখা: রমজানের রোযা রাখা। কারণ আল্লাহ তাআলা রোযা সম্পর্কে বলেন, রোযা আমার জন্য আর আমি নিজেই তার বদলা দিব।
২. তারাবী নামায পড়া: ইশার নামাযের পর বিশ রাকাত তারাবী নামায পড়া। খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে তারাবী নামায বিশ রাকাত পড়ার আমল চলে আসছে এবং প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্যে সমস্ত উম্মত যুগে যুগে এর উপর আমল করে আসছেন। হারামাইন শরীফেও তার উপর আমল বহাল রয়েছে। সুতরাং আমাদেরও উচিত বরকতময় এই মাসে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইম্যায়ে মুজতাহিদীনের অনুসৃত পথ অবলম্বন করে বিশ রাকাআত তারাবী নামায পড়া।
৩. তাহাজ্জুদ নামায পড়া: স্বাভাবিকভাবেই শেষ রাতে সাহরী খাওয়ার জন্য আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে থাকি। এই সময় অত্যন্ত বরকত পূর্ণ সময়। সুতরাং যথাসম্ভব চার থেকে বার রাকাত পর্যন্ত যত রাকাত সম্ভব তাহাজ্জুদ পড়ে নেয়া ভাল। তাহাজ্জুদ নামায পড়া রাসুল (সা:) এর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সাহাবায়ে কেরামও নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন।
৪. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকা: রাসূল (সা:)
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকতেন (মুসলিম শরীফ)। হযরত আনাস (রা:) বলেন রাসূল (সা:) বলেছেন,
যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্তআল্লাহর জিকিরে লিপ্ত থাকে তারপর দুই দুই চার রাকাত (ইশরাক) নামাজ পড়ে তাহলে সে পরিপূর্ণ একটি হজ্জ এবং একটি উমরার সাওয়াব পাবে। (তিরমিজি শরীফ)।
এটা তো অন্যান্য মাসের কথা, রমজানে তো এর সাওয়াব আরো অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
৫. বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা: এই মাসে বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তিলাওয়াতের সময় মনোযোগী হওয়া উচিত। হযরত জিব্রাইল ( আ:) রমজান মাসে রাসূল (সা:) এর সাথে কুরআনে কারীমের দাউর করতেন। সম্ভব হলে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শে কুরআনের তরজমা পড়া ।
৬. দান সদাকা করা: রাসুল (সা:) সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমযান আসলে দান আরো ব্যাপক হয়ে যেত্ । হযরত আনাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন যে, রমযান মাসে দান সদকা করা সব চেয়ে বেশি উত্তম সদকা । (তিরমিজী শরীফ)
সুতরাং আমাদের উচিত এই মাসে বেশি বেশি দান সদকা করা। এর বিভিন্ন পদ্ধতি হতে পারে -গরীব মিসকিনদেরকে খানা খাওয়ানো, রোযাদারকেত ইফতার করানো, টাকা পয়সা দান করা ইত্যাদি।
৭. শেষ দশকে ইতিকাফ করা: পুরুষলোক মসজিদ আন মহিলারা তাদের গৃহের নামাযের স্থানে ইতকাফ করবে। রাসূর (সা:) প্রত্যেক রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, তাঁর জীবনের শেষ রমযানে ইতিকাফ করেছেন বিশ দিনের। ইতিকাফ সম্পর্কে সামনে আরো আলোচনা রয়েছে।
৮. শবেকদর: রমযান মাসে একটি রাত রয়েছে যাকে শবে কদর বলা হয়। যে রাতের ইবাদত হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। আর সেই রাত তালাশ করতে হবে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে।
৯. দু’আর ইহতেমাম করা: দুআ একটি উচুঁ স্তরের ইবাদত। রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেন দুআ সকল ইবাদতের মস্তিস্ক। মূখ্য বিষয় তাই রমযান মাসে দুআন ইহতিমাম করবে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রমযান মাসে প্রত্যহ রাতে ও দিনে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের কয়েদীদের মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রত্যেহত মুসলমানের কমপক্ষে একটি দুআ কবুল করে থাকেন। তাই দিনে রাতে যখন সম্ভব হয় বিশেষ করে শেষ রাতেও ইফতারীর সময় নিজের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা, মৃতদের রূহের মাগফিরাত কামনা এবং সকল মুসলমান নর-নারীর কল্যান কামনা ও কাফেরদের হেদায়েতের দুআ করা উচিত।
১০. চারটি কাজ বেশি বেশি করা।
১. বেশি বেশি কালিমা পড়া। ২. এস্তেগফার বেশি বেশি করে পাঠ করা। ৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তির ও ৪. জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি বেশি দুআ করা।
বর্জনীয় কাজ
রোযা অবস্থায় করণীয় যেমন অনেক রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে বর্জনীয়ও অনেক কাজ রয়েছে। যেমন:
১. মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ করা: রাসূর (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা এবং অসৎ আমল বর্জন করে না, আল্লাহর নিকট তার ক্ষুধাও পিপাসার কোন মূল্য নেই। (বুখারী শরীফ)
২. জবানের হেফাজত: রোযা অবস্থায় বেফায়দা অনর্থক কোন কথা বলা যাবে না। অন্যকে গাল-মন্দ করা যাবে না। অশ্লিল কথা বর্জন করতে হবে রাসুর (সা:) বলেন রোযা হল (জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার) ঢাল স্বরূপ। সুতরাং যদি কেউ রোযাদার হয় তাহলে তার উচিত অশ্লিল কথা বা নির্লজ্জ কথা না বলা, গুনাহে লিপ্ত না হওয়া। কেউ যদি তোমাকে গালি দেয় তাহলে তাকে বলে দিবে ভাই আমি রোযাদার। সুতরাং রমযান মাসের সম্মানার্থে বিশেষ করে টেলিভিশন বন্ধ রাখা পত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক। (বুখারী মুসলীম)
৩. পুরো শরীরে রোযা রাখা: রোযা অবস্থায় হাত, পা, কানসহ পুরো শরীরও যাতে রোযা রাখে এমন কাজ করতে হবে অর্থাৎ এমন যাতে না হয় যে, রোযা রাখা ও না রাখা দু’টাই বরাবর। প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যেঙ্গকে গুনাহ থেকে হেফাজত রাখতে হবে টেলিভিশন দেখা, নাটক শুনা, গল্পের ও উপন্যাসের বই পড়া ইত্যাকার কাজ বর্জন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।
ইতিকাফ
ইতিকাফ” অর্থ পড়ে থাকা, অবস্থান করা। যেন আল্লাহর দরবারে এই উদ্দেশ্যে পড়ে থাকা হয় যে, যতক্ষণ মাগফিরাত-রহমত না হবে, ততক্ষণ দরবারে পড়ে থাকবো।
পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়: আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় তার পবিত্র ঘরে কিছু সময় অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে ।
(আলবাহরুর রায়েক ৫২২ পৃষ্ঠা)
ইতিকাফ তিন প্রকার: ১. নফল ইতিকাফ যা সামান্য সময়ের জন্য হতে পারে। ২. সুন্নত ইতিকাফ যা রমযানের শেষ দশকে হয়ে থাকে। ৩. ওয়াজিব ইতিকাফ যা মান্নত করার দ্বারা রোযাসহ পূর্ণ দিন করতে হয়।
পুরুষের জন্য যেমন এতেকাফের সুযোগ রয়েছে, মহিলাদের জন্যও এ সুযোগ রয়েছে। পুরুষগণ যেমন ইতিকাফ করতে পারেন, মহিলাগণও তেমনি ইতিকাফ করতে পারেন। বরং মহিলাদের জন্য ইতিকাফ করা বেশী সহজ। তারা ঘরের একটা কোণাকে নির্দিষ্ট করে সেখানেই ইতিকাফের নিয়তে থাকবেন। সুন্নত ইতিকাফের সময় শুরু হয় রমযানের একুশতম রাত থেকে। ২০শে রমযান সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই ইতিকাফের স্থানে চলে আসতে হয়। এরপর ঈদের চাঁদ দেখা গেলে ইতিকাফের সময় শেষ হয়।
ইতিকাফের ফযীলত ও ফায়দা
ইতিকাফের বিশেষ তিনটি ফায়দা ও ফযীলত রয়েছে। তা হলঃ ইতিকাফের একটি বিশেষ ফায়দা এইযে, ইতিকাফ করা দ্বারা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পাওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা রমযানের শেষ দশকই শবে কদর হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনাময়ী সময় । আর এতেকাফকারী এই গোটা সময়েই আল্লাহর দরবারে পড়ে থাকে। তাই রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করা দ্বারা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
ইতিকাফের একটি ফযীলত সম্পর্কে হাদীছে এসেছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি দিলে একদিন নফল ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে তিন খন্দক দূরে সরিয়ে দিবেন। এক “খন্দক” বলে বোঝানো হয় আসমান জমিনের যে দূরত্ব তার চেয়েও বেশী দূরত্বকে ।
(শুআবুল ঈমান)
এক দিনের ইতিকাফ দ্বারা জাহান্নাম এরকম অনেক অনেক দূরে সরে যায়। আর জাহান্নাম তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার অর্থ সে জান্নাতের কাছে চলে আসে।
ইতিকাফের আরেকটি ফযীলত বয়ান করে আরেক হাদীছে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফকারীর ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন: ইতিকাফকারী ব্যক্তি সর্ব রকম গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য সব ধরনের নেক আমলকারীর মত নেকী লেখা হয়।
(ইবনে মাজা)
ব্যাখ্যা : ইতিকাফ করার কারণে যেসব নেক কাজ সে করতে পারবে না যেমন জানাযায় শরীক হওয়া, রুগীর সেবা করা ইত্যাদি, এগুলোর ছাওয়াবও সে পাবে। সার কথা হল-
ইতিকাফ দ্বারা লাইলাতুল কদর পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
ইতিকাফ দ্বারা জাহান্নাম বহু দূরে সরে যায়।
ইতিকাফ দ্বার যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
ইতিকাফ করলে যেসব নেক কাজ সে করতে পারবে না, সেসব নেক কাজ অন্যরা করেও সেগুলোর ছওয়াব পেয়ে যাবে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, রাসূল (সা:) নিজে সবসময় রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন।
রমযানে ইতিকাফের হুকুম
পবিত্র রমযান মাসের শেষ দশকে ই’তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কোন মহল্লার মসজিদে কেউ যদি না বসে তাহলে মহল্লাবাসী সবাই গোনাহগার হবে। আরন একজনও যদি বসে তাহলে সবাই গোনাহ থেকে বেচে যাবে। (রাদ্দুল মুহতার:৩য় খন্ড, ৪৩০ পৃষ্ঠা)
ইতিকাফের পদ্ধতি
অনেকের ধারণা যে, ইতিকাফ অনেক কঠিন আমল, যার ফলে ভয়ে ইতিকাফে বসতে চায় না। অথচ বিষয়টি এমন কঠিন নয় বরং তা সহজ একটি ইবাদত। পাক সাফ বিছানা ও হালকা সামানা নিয়ে মসজিদে চলে যাবে। সময়মত সেখানে ঘুমাবে, খাওয়ার সময় আদবসহ খাবে, প্রয়োজনে টয়লেটে যাবে আর বাকী সময়টা সুয়ে বসে তাসবী তাহলীল বা তিলাওয়াত ও বিভিন্ন আমলের, বুযর্গদের বই পড়বে। কথা বর্তা কম বলবে। এইতো ইতিকাফ ভয়ের কি আছে?
সদকাতুল ফিতর এর বিধান ও তা আদায় পদ্ধতি
ঈদুল ফিতরের দিন যে ব্যক্তির মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে আর তা নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে অতিরিক্ত হবে তার উপর সদকাতল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো গম, আটা, ছাতু বা কিশমিশ দ্বারা প্রদান করলে পৌনে দুই সের আর খেজুর বা যব দ্বারা আদায় করলে সাড়ে তিন সের দিতে হবে। উক্ত বস্তু দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। আবার তার সমমূল্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখতে হবে যে, সদকাতুল ফিতরের উক্ত পরিমাণের দান নিজ পক্ষ থেকে এবং নিজ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে দিতে হবে। স্ত্রী বা ঘরের অন্যান্য সদস্যদের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব নয়। তবে তাদের অনুমতিক্রমে যদি আদায় করে দেয় তাহলে আদায় হয়ে যাবে। গরীব মিসকিন লোককে উক্ত পরিমাণ সম্পদের মালিক বানিয়ে দিতে হবে। এ দেয়াটা ঈদের আগে বা পরের দিন দিলেও আদায় হবে। তবে উত্তম হল ঈদের দিন ঈদের নামাযে যাওয়ার আগে আদায় করা। {ফাতাওয়া শামী, ৩য় খন্ড ৩০৯-৩২৬ পৃষ্ঠা, আলবাহরুর রায়েক, ২য় খন্ড, ৪৩৭-৪৪৬ পৃষ্ঠা}
vaer nice
আসসালামুআলাইকুম।হুজুরের কাছে দরখাস্থ এই যে,মসজিদের ভিতরে প্রতিদিন ইফতার করা জায়েজ কি না।আমাদের গ্রামের মসজিদের সাভাপতি সাহেবের কৃত লিষ্ট অনুযায়ী রমজান মাসের প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি সকল মুসল্লীর ইফতারের আয়োজন করে থাকে।এটা বিদআত নাকি খারাপ রুসুম নাকি উত্তম। (বিঃদ্রঃ অনেকের সম্মতি না থাকলেও অপমানের ভয়ে আয়োজন করতে বাধ্য হয়)।আর মসজিদে দেখলাম লিষ্ট দেওয়া হয়েছে এবং উপরে বড় করে লিখা হয়েছে “জান্নাতীদের তালিকা”।এটা লিখা কি জায়েজ। অনুগ্রহ করে জানিয়ে উপকৃত করবেন।যেন নিজে বুঝতে বা তাদেরকে বোঝাতে পারি।
আল্লাহতালা আমাকে আমল করার তৌফিক দান করুন।আমিন
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নেক হায়াত দান করুন