ইলমী প্রাজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি জাতিকে কিছু দেবার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে – মাওলানা মকবুল হুসাইন
(অতিথি বক্তা, প্রিন্সিপাল জামেয়া কারিমিয়া রামপুরা, ঢাকা)
نحمده و نصلى على رسوله الكريم – اما بعد – فقد قال الله تعالى: من يؤتى الحكمة فقد اوتي خيرا كثيرا – و قال النبى صلى الله عليه و سلم: من يرد الله خيرا يفقهه فى الدين – اما بعد ..
উপস্থিত উচ্চতর ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলাময়ার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার শেষান্তে আয়োজিত মাহফিলের ওলামায়ে কিরাম ও প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! মাদরাসার নেজামুল আওকাত শুনে খুশি হলাম যে, ছাত্ররা সবাই নেজাম অনুযায়ী চলে। সময় নষ্ট করে না। ইলম অর্জনে পূর্ণতা পাবার জন্য প্রথম শর্তই হল সময়কে কাজে লাগানো। এই মাদ্রাসার নামটাই বলে দিচ্ছে এই জামিয়ার সাথে মিশে আছে আওলাদে রাসূলের মহব্বত। হক ও দ্বীনের মশাল বাহী মাদরাসা। আল্লাহ তাআলা এই জামিয়ার সবাইকে আসআদ মাদানী রহ. এর মতো হওয়ার তাওফীক দান করুন।
ইংরেজদের সীমাহীন অত্যাচার ও জুলুমে গোটা ভারতবর্ষ থেকে যখন দ্বীনে ইসলামের পতাকা ভূলুণ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা লাভ করে দ্বীনকে সমুন্নত করার প্রত্যয় নিয়ে। প্রতিষ্ঠাতাদের ইখলাস ও তাওয়াক্কুলের বরকতে আল্লাহ তাদের সীমাহীন সাহায্য করেন। আজ এ কথা জাতির কাছে সুস্পষ্ট যে, ওলামায়ে দেওবন্দের অবদানেই গোটা ভারতবর্ষে আজও টিকে আছে মুসলমানদের ঈমান-আকীদা। এ ধারার মাদরাসাগুলোর অবদানেই নাস্তিক্যবাদ ও আধিপত্যবাদ, কুফর ও বেদআত সয়লাব হতে পারেনি আমাদের সমাজে।
দারুল উলূম দেওবন্দের সেই চেতনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই জামিয়ার ছাত্রদের প্রতিও আমার প্রত্যাশা, তোমরাও হবে আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের মতো। দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী,যারা ইলম শেখার সাথে সাথে নিজেদের আমলকে করেছেন পূর্ণাঙ্গ। সাথে সাথে তারা জাতির মাঝে ইলম বিলাতে ছিলেন তৎপর। জাতিকে বাঁচানোর জন্য আমৃত্যু মেহনত করেছেন। যেমন আমাদের নিকটতম আকাবির সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ., হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রমুখ আকাবিরগণ।
হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. বলেছেন, পাকিস্তান কী লোগো ঈমান কী খতরা মে হ্যায় – পাকিস্তানের মুসলমানরা ঈমানের খতরায় আছে। আর ভারতের মুসলমানরা ঈমানের খতরায় নয়, বরং, হিন্দুদের আক্রমণের খতরায় রয়েছে। দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট কথা বলেছেন হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.। আজ আমরা বাংলাদেশীরা সত্যিই ভয়ংকর ঈমানী খতরায় আক্রান্ত। আমাদের দেশে নব্বই ভাগ মুসলমান। সংখ্যার দিক থেকে আমরা অনেক। কিন্তু ঈমানী মজবুতের দিক থেকে খুবই কম।
যে দেশে অধিকাংশ মুসলমান, সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অবশ্যই ইসলামি শিক্ষা হওয়া উচিৎ ছিল বাধ্যতামূলক ভাবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। বর্তমানে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে ইসলামী শিক্ষাকে করা হয়েছে পুরোপুরি উপেক্ষিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে গান শেখা ও ছবি আঁকাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে দ্বীনের প্রাথমিক শিক্ষাকে। যে শিশু শিখত কালিমা, সে শিশু এখন শিখবে গান।
রাসূল সা. বলেছেন, ছোট সময় কোনো কিছু শেখা পাথরে কোনো কিছু খোদাই করে লেখার মতো। পাথরে খোদাই করা লেখা যেমন কখনো মোছা যায় না, ঠিক তেমনি শৈশবের শিক্ষাও মানুষ কখনো ভুলে না। সুতরাং, একবার ভেবে দেখুন, আমাদের কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক ক্লাসে ইসলাম শিক্ষার বদলে নাচ-গান বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে কীসের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?! হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর কথাই সত্য। আমরা সংখ্যাধিক্য হলেও ঈমানী খতরায় ভুগছি।
সুতরাং, বোকা এই জাতিকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে, বে-দ্বীনী থেকে সমাজ সংস্কারে তোমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ইলমী প্রাজ্ঞতার সাথে সাথে সমাজ সংস্কারেও তোমরা হও সফলকাম। আমীন।