জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও এর বাস্তবায়ন
(এই লেখাটি গত ২২শে এপ্রিল জামিয়ার ২য় সাময়িক পরীক্ষা সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলের জন্য লেখা হয়েছিল। জামিয়ার ওয়েব পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।)
প্রতিষ্ঠা:
মহান রাব্বুল আলামীন এর অপার রহমত ও কৃপায় গত ১৪৩০ আরবি সনের জিলকদ মাসে (২০০৯ ইংরেজী সালের অক্টোবর মাসে) জামতলা, পূর্ব রামপুরার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এ জামিয়ার। ৩রা অক্টোবর রোজ শনিবার বাদ মাগরীব ২০০৯ ইং তারিখে বরেন্য আলেম-ওলামার উপস্থিতিতে দোয়ার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় জামিয়ার মূল কার্যক্রম।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
ইলম বা-আমল একদল মুখলিস যুগ সচেতন নায়েবে নবী মুফতীয়ান তৈরিতে জোড়ালো ভূমিকা রাখা এবং আম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা মাসায়েল এর সঠিক সমাধান তৃণমূল জনগণ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করে মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্ট লাভে ধন্য হওয়া।
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন পদ্ধতি:
১. প্রতি ইংরেজি মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার, বাদ আসর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ইসলাহী মজলিসের মাধ্যমে ছাত্রদের আখলাকী ও আমলী প্রশিক্ষণ প্রদান।
২. বছরের শুরু থেকেই সূচিবদ্ধ নিজামের মাধ্যমে জামিয়ার ছাত্রদেরকে পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগী করে রাখা।
৩. বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিদিন একটি বা দু’টি জরুরী মাস’আলা গ্রহণযোগ্য আরবি কিতাব থেকে উদ্ধৃতিসহ তামরীন লিখে দেখানো।
৪. দুই তিন মাস অন্তর অন্তর প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকে শরীয়তের সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে ফিক্বহী সেমিনার আয়োজন করা।
৫. জামিয়ার নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শরয়ী সমাধানমূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করা।এবং ই-মেইলের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে জামিয়ার মুফতীয়ানের কাছে সমৃদ্ধ শরয়ী সমাধান জানার সুযোগ।
৬. ইংরেজির উপর বেসিক নলেজের জন্য সাপ্তাহিক ইংরেজি ক্লাস চালু করা।
৭. হিফজ বিভাগে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার এবং ইফতা বিভাগকে সমৃদ্ধ ইফতা বিভাগে উত্তীর্ণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। সেই সাথে স্বতন্ত্র সিলেবাসে বয়স্কদেরকে (জেনারেল শিক্ষিতদের) অল্প সময়ে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা তৈরিতে চেষ্টা করা।
৮. মজলিসুল ফিক্বহ ওয়াল ইফতা প্রতিষ্ঠা করে তার অধীনে বিরোধপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাগুলোকে মুরুব্বী আলেমদের দস্তখত সহকারে প্রবন্ধ আকারে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা।
অর্জিত সফলতা:
আলহামদুলিল্লাহ মহান রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের কার্যক্রমের বেশ কটিতেই সফলতার মুখ দেখতে পেরেছি। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল:
১. ইতোমধ্যে জামিয়ার তিনটি ইসলাহী মজলিস সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২. ইসলামী ব্যাংকিং ও ইসলামী বীমা শিরোনামে জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের উপর ঢাকার ইফতা বিভাগের ছাত্রদের জন্য প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। এবং মাকতাবাতুল আযহারের সৌজন্যে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী ও বাদায়ে সানায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়ার কিতাব তাতে পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
৩. ইসলামী ব্যাংকিং ও ইসলামী বীমার উপর বরেন্য মুফতীদের উপস্থিতিতে গত ২৫শে মার্চ ২০১০ ইং, রোজ বৃহস্পতিবার, বাদ জোহর থেকে বাদ মাগরীব পর্যন্ত এক ব্যতিক্রমধর্মী ফিক্বহী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৪. জামিয়ার ত্রৈসাময়িক পরীক্ষা শেষে বরেন্য আলেম-ওলামার উপস্থিতিতে যে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আলেমদের প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যগুলোর একটি সংকলন ‘আল আস’আদ’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
৫. ইতোমধ্যে জামিয়ার নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.jamiatulasad.com) খোলা হয়েছে। এবং তাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে। জামিয়ার ফতোয়া বিভাগে প্রশ্ন করার অপশনও তাতে যুক্ত করা হয়েছে।
৬. বিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ইংরেজি ক্লাসও চলছে নিয়মিত।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা :
১. আগামী ২০শে মে ২০১০ ইং, রোজ বৃহস্পতিবার, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলায় মুফতীয়ানে কিরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্তে মজলিসুল ফিক্বহ ওয়াল ইফতার প্রথম অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ইনশা’আল্লাহ।
২. ইফতা বিভাগের ছাত্রদের সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য জামিয়া কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি বিষয়ের যে কোনো একটি বিষয়ে থিসিস বা গবেষণাপত্র জমা দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গবেষণাপত্র জমা দেয়া ছাড়া কাউকে ইফতার সার্টিফিকেট দেয়া হবে না মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
৩. কম্পিউটার ক্লাস চালু করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত তা শুরু করা হবে ইনশা’আল্লাহ।
৪. বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও আইন অধ্যয়ন করে সেগুলোতে মুসলমানদের জন্য প্রণীত আইনে ইসলাম বিরোধী কী কী বিষয় রয়েছে, তা প্রবন্ধ আকারে জাতির সামনে তুলে ধরা ও মিডিয়াতে প্রকাশ করার পরিকল্পনা জামিয়ার রয়েছে। প্রয়োজনে আইন সংশ্লিষ্টদের সাথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হবে। যেন অন্তত মুসলিম আইন পালনের নামে মুসলমানদেরকে ইসলামবিরোধী আইন পালন করতে না হয়।