ছবি বিকৃত করা প্রসঙ্গে
Muhammad Zahirul
আসসালামু আলাইকুম।
প্রশ্নঃ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কারো সাথে মতবিরোধ হলেই তার ছবি নিয়ে বিকৃত করা হয়।
এ বিষয়ে ইসলাম কী দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, অনুগ্রহ করে জানাবেন।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তাআলা তার অগনিত সৃষ্টির মাঝে মানবজাতিকে করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টিকুলের সেরা। তিনি মানুষকে সুন্দর অবয়ব ও গঠনের অধিকারী করেছেন। অন্য কোন সৃষ্টিকে এতটা সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে সৃষ্টি করেননি। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন,
(لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ (سورة التين-4
আমি মানুষকে সর্বোতকৃষ্ট ছাঁচে ঢেলে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন ৪)
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
বাস্তবিকপক্ষে আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও জলে তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমরা বহু মাখলুকের উরপ তাদেরকে শেষ্টত্ব করেছি।(সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে মানবজাতীর সৌন্দর্য, সম্মান ও শ্রেষ্টত্বের বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের উচিৎ অপর মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে আচরণ করা। কারো ইজ্জত-সম্মানে আঘাত হানে এমন ব্যবহার ও আচরণ সর্বক্ষেত্রে পরিহার করা।
উল্লেক্ষ যে,ফিতনা ফাসাদের এই যামানায় কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবাইয়ে কেরামের অনুসারী মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত করার লক্ষে ইহুদি-খৃস্টান থেকে শুরু করে নান দল, উপদল, ব্যক্তি ও গোষ্টি নামে বেনামে কাজ করে যাচ্ছে।
তন্মধ্যে কারো সাথে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বীদা বিশ্বাসের বিরোধ আছে, আবার কারো সাথে আছে আমলের বিরোধ। আক্বীদার বিরোধ হোক কিংবা আমলের বিরোধ, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গঠনমূলক, প্রামানিক সমালোচনা করার অধিকার ইসলাম প্রদান করে। এতে সাধারণ মানুষ পক্ষপাত ও প্রান্তিকতা মুক্তভাবে সঠিক সমাধান গ্রহণ করার সুযোগ পায়।
কিন্তু কোন ব্যক্তির দৈহিক অবকাঠামো, ছবি বিকৃত করে ব্যাঙ্যাত্নক ভাবে উপস্থাপন করে অপমানিত করা, প্রহসনের পাত্রে পরিনত করা ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা। এব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (10) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (11)
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দ’ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করা হয়। হে মুমিনগ! কোন পুরুষকে উপহাস না করে। সে (অর্থাৎ যাকে উপহাস করা হচ্ছে) তার চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারীও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। সে (অর্থাৎ যে, নারীকে উপহাস করা হচ্ছে) তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করোনা এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকনা। ঈমানের পর গোনহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম। (সূরা হুজরাত-১০, ১১)
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
(2564) حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ يَعْنِي ابْنَ قَيْسٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، مَوْلَى عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا» وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ»
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না, ধোকা দিও না, বিদ্বেষ পোষণ করো না। বরং সকলে আল্লাহর বান্দা এবং ভাই ভাই হয়ে যাও। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করেনা। তাকে অপমান করেনা, অবজ্ঞা করেনা।তিনি তিনবার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তাকওয়া হল এখানে। কোন ব্যক্তি খারাপ হবার জন্য তার কোন মুসলমান ভাইকে অবজ্ঞা করাই যতেষ্ট। এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের জানমাল ও সম্মান সবই হারাম।( সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৩৫৮)
উক্ত আয়াত এবং হাদিসে মুসলমান ভাইয়ের দোষ ও অপমানজঙ্ক বিষয় চর্চা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব বুঝা গেল কোন মুসলমানের ব্যপারে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। যাতে কারো ইজ্জত, আব্রু নষ্ট না হয়। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন!
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে
মুফতী মোস্তফা কামাল
মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
সত্যায়ন সত্যায়ন ও সার্বিক তত্তাবধানে
মুফতী আব্দুল হাসিব দা. বা. মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
মুফতী প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
ইমেইল: jamiatulasad@gmail.com