অপারগতা বশত ঘুষ দেয়া যাবে কিনা?
মুহাম্মদ আল-আমীন
মাধবদি, নরসিংদী
প্রশ্নঃ
আমার বড় ভাই এক প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজ থেকে এবার বি.ডি.এস. ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন।
তার মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট ছিল ৪.৪৪ এবং ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট ৩.২। উক্ত ডেন্টাল কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মেট্রিক এবং ইন্টার পরীক্ষার পয়েন্টের যোগফল কমপক্ষে ৭.০ হলেই সে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে, বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই লেখা ছিলো, ভাইয়ার এই সম্মিলিত পয়েন্ট (৪.৪৪+৩.২০ = ৭.৬৪) হওয়ায় সে ভর্তি হয়ে যায়।
কিছুদিন আগে জানা গেছে, ডাক্তারদের লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান BMA এর ছাত্র ভর্তির নিয়মানুযায়ী, ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের মেট্রিক ইন্টার উভয়ের ফলাফলের যোগফল কমপক্ষে ৭.০ হওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেকটিতে পৃথকভাবে ৩.৫ থাকতে হবে যেটা আমার ভাইয়ের ছিলো না ( যেহেতু ইন্টারে ভাইয়ের রেজাল্ট ৩.২), কিন্তু ডেন্টাল কলেজ ভর্তির সময় এই নিয়মকে গোপন রাখে এবং ভাইসহ কিছু ছাত্র ভর্তি করে নেয়।
এখন সমস্যা হোল, নিয়মানুযায়ী আমার ভাইয়ের লাইসেন্স না পাওয়ারই কথা এবং লাইসেন্স ছাড়া ডাক্তারি করাটাও আইনসম্মত হবে না। অপরদিকে এই অবস্থার জন্য কলেজকে BMA’র নিয়ম গোপন করায় দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
লাইসেন্স সমস্যা সংক্রান্ত কোন দায়ভার নিতে কলেজ রাজি না। আবার ছাত্রদের কোন মামলা বা আন্দোলন সামলানোর জন্যও কলেজ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
এই লাইসেন্সের সাথে যেহেতু এত বছরের পরিশ্রম, অর্থব্যয় ইত্যাদি জড়িত এই পরিস্থিতিতে প্রাপ্য লাইসেন্স আদায়ের জন্য ঘুষ দেয়ার কোন সুযোগ আছে কি?
بسم الله الرحمن الرحيم
উত্তরঃ
প্রশ্নোল্লিখিত বিবরণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, উক্ত প্রাইভেট মেডিকেল ভর্তির সময় BMA-এর আইন গোপন করে আপনার ভাই ও অন্যান্য দের সাথে প্রতারণা করেছে। তদের এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনী লড়াই করে কোন সমাধান বা বৈধ পন্থায় লাইসেন্স প্রাপ্তির সম্ভবনা খুবি ক্ষীন।
এখন লাইসেন্স পেতে হলে ঘুষ দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর লাইসেন্স না পেলে তাদের দীর্ঘ দিনের শ্রম ও অর্থ উভয়ই নষ্ট হয়ে যাবে। এতে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
যারা এভাবে প্রতারিত হয়েছেন। তারা যদি মেডিকেলের অন্যান্য শ্ররতাদি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করে থাকেন। তাহলে ধরা হবে, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন। তদের পক্ষ থেকে কোন অবহেলা বা ছল-চাতুরী ছিলনা। লাইসেন্স পাবার জন্য যতটুক যোগ্যতা দরকার তাদের মাঝে একটি ছাড়া সবই রয়েছে। আর যেটা নেই, সেটা তাদের ইচ্ছাকৃত নয় বরং প্রতারণার শিকার হবার কারনে হয়েছে। এমতাবস্থায় আশা করা যায়, লাইসেন্সের জন্য ঘুষ দিলে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিবেন।
উল্লেক্ষ্য, ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ উভয়টি মারাত্মক গুনাহের কাজ। তবে অন্যায়, অবিচার অপসারণ ও নিগ পাওনা, অধিকার আদায় করার জন্য অপারগতা বশত, ঘুষ প্রদান করলে, আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাবার আশা রাখা যায়। তবে ঘুষ গ্রহণ করা কোন অবস্থাতেই বৈধ হবেনা।
শরয়ী দলীল
رواه الإمام أبو داود في سننه)ج1ص478- رقم:3580 )- حدثنا أحمد بن يونس ثنا ابن أبي ذئب عن الحارث بن عبد الرحمن عن أبي سلمة عن عبد الله بن عمرو قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم الراشي والمرتشي . صحيح
في رد المحتار:(ج9ص607) دفع المال للسلطان الجائر لدفع الظلم عن نفسه وماله ولاستخراج حق له ليس برشوة يعني في حق الدافع ا هـ .
ج8ص35) الثالث : أخذ المال ليسوي أمره عند السلطان دفعا للضرر أو جلبا للنفع وهو حرام على الآخذ فقط………….. الرابع : ما يدفع لدفع الخوف من المدفوع إليه على نفسه أو ماله حلال للدافع حرام على الآخذ
প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীঃ
১। সুনানে আবু দাউদ- ৩৫৮
২। সুনানে তিরমিযী- ১৩৩৬
৩। সুনানে ইবনেমাজা- ২৩১৩
৪। ফাতাওয়া শামী- ৮/৩৫, ৯/৬০৭
৫। ফাথুল কাদীর- ৭/২৫৫
৬। আল বাহ্রুর রায়েক- ৬/ ২৬২-২৮৫
৭। আপকী মাসায়েল- ৭/২১২
৮।ফাতাওয়া মহমুদিয়া- ২৮/৪০৮
. والله اعلم بالصواب
. উত্তর প্রদানে
. (মুফতী) আরমান সাদিক
. ইফতা বিভাগ
. জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
. সত্যায়ন সত্যায়ন ও সার্বিক তত্তাবধানে
. মুফতী আব্দুল হাসিব দা. বা. মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
. প্রধান প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
.ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com