সহীহ হাদীসের আলোকে নামাযের কিছু জরুরী মাসয়ালা
১. নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁকা রাখা
ইমাম, মুক্তাদী কিংবা একা নামায আদায়কারী প্রত্যেকেই নিজ নিজ শরীরের গঠন অনুযায়ী দুই পায়ের মাঝখানে এতটুকু ফাা রেখে দাঁড়াবে যেন পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী হয়ে থাকে এবং দাঁড়ানো, রুকু ও সেজদার সময় ব্যবধান বৃদ্ধি করার বা সংকোচ করার কোনো প্রয়োজন না হয়। উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাসূল (সা.) বলেন, যখন তোমারা নামাযে দাঁড়াবে (ইচ্ছা করবে) তখন ভালোভাবে অযু করবে। অতঃপর পরিপূর্ণরূপে কেবলামুখী হবে এবং তাকবীর বলবে। (বুখারী শরীফ ২/৯২৪, হা.৬২৫১, তিরমিযী শরীফ ১/৬৬ ত্বা. ৩০৪ সহীহ)
বিজ্ঞ ইমামগণের গবেষণা মতে পুরুষের উভয় পায়ের মাঝে নিম্নে চার আঙ্গুল ঊর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাকা রাখা হবে স্বাভাবিক পরিমাণ।
আর মহিলাগণ উভয় পায়ের গোড়ালি মিলিয়ে রাখবে। হযরত আব্দুল্লহ্ ইবনে আব্বাস (রা) কে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : সংকোচিত ও (শরীরের অঙ্গ) মিলিয়ে নামায পড়বে। (মুসান্নাফে আবী শায়বা : ১/২৭০, হা. ২৭৯৪ সহীহ)
২. তাকবীরে তাহরীমার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠানো
তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কান পর্য উঠানো সুন্নত। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত উঠানো। (মুসলিম শরীফ ১/১৬৮ ত্বা ৩৯১)
হযরত মালেক ইবনে হুয়াইরিস (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা) যখন তাকবীর বলতেন তখন দুই কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন। (মুসলিম)
মহিলাগণ তাদের হাত বুক বা কাধ পর্যন্ত উঠাবে এবং কাপড়ের ভেতর থেকে হাত বাহিরে রাখবে না। (তিরমিযী ১/২২২ ত্বা ১১৭৩ সহীহ)
৩. নামাযে কব্জির উপর হাত বাঁধা এবং নাভীর নিচে রাখা সুন্নাত
নামাযে বাম হাতের কব্জির উপর ডান হাত রাখা এবং দুই আঙ্গুল দ্বারা চেপে ধরা সুন্নাত। একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা এ আমল প্রমাণিত। চার মাযহাবের ইমাম এবং জমহুর আলেমগণ এটাকেই সুন্নাত পদ্ধতি আখ্যা দিয়েছেন।
প্রমাণ :
১. হযরত সাহল ইবনে সা‘দ (রা) বলেন, মানুষকে এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন নামাযে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৭৪০)
এই হাদীসটি সম্পর্কে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেন, বাহুর কোনো জায়গায় রাখতেন সেটা এই হাদীসে অস্পষ্ট।
আবূ দাঊদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল (রা)-এর হাদীসে বলা হয়েছে, অতঃপর তিনি তার ডান হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন। ইবনে খুযায়মা (র) প্রমুখ এটিকে সহীহ বলেছেন। (ফাতহুল বারী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৫)
আর আল্লামা শাওকানী রহ. নায়লুল আওতার গ্রন্থে বলেছেন : হাদীস শরীফে যে বলা হয়েছে, ‘বাম হাতের বাহুর উপর” বাহুর কোন্ জায়গা তা এখানে অস্পষ্ট রাখা হয়েছে।
মুসনাদে আহমাদ ও আবূ দাঊদ শরীফে বর্ণিত হাদীসে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে আর তা হলো তিনি তার ডান হাত বাম হাতের পিঠ কব্জি ও বাহুর উপরে রেখেছেন। তাবারানী রহ. এর বর্ণনায় এসেছে, তিনি নামাযে তার ডান হাত বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে রেখেছেন। (খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৮৭)
২. হযরত হুলব আততাঈ (রা) বলেন, রাসূল (সা) আমাদের ইমাম হতেন। তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরতেন। (তিরমিযী শরীফ : হাদীস নং ২৫২)
এ বিষয়ে আরো যত সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে সবগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে চার মাযহাবের আলেমগণ সেই পদ্ধতিকেই অবলম্বন করেছেন, যেভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ আমল করে থাকেন। একেই বলে হাদীসের অনুসরণ। এরাই প্রকৃত হাদীস অনুসারী। আর যারা একটি হাদীস নিয়ে সবগুলো উপেক্ষা করে তারা মূলত নামের আহলে হাদীস। প্রকৃত হাদীস অনুসারী নয়।
* নাভীর নিচে হাত রাখা সুন্নাত
উল্লিখিত পদ্ধতি অনুযায়ী হাত বাধার পর নাভীর নিচে হাত রাখা সুন্নাত। তবে ইমাম শাফয়ী রহ. বুকের নিচে রাখার কথা বলেছেন। কিন্তু বুকের উপর হাত বাধার সুন্নত হওয়ার কথা কেউ বলেননি। বুকের উপর হাত বাঁধার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।
প্রমাণ :
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা) কে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভীর নিচে রাখতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৯৫৯)
২. হযরত আলী (রা) বলেন, নামাযের সময় সুন্নত হলো হাত তালুর উপর রেখে নাভীর নিচে রাখা। (আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং ৭৫৬)
৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, হাতের তালু অপর তালুর উপর রেখে নাভীর নিচে রাখতে হবে। (আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং ৭৫৮)
৪. সানা পড়া
তাকবীরে তাহরীমার পর সানা পড়া সুন্নাত। (আবূ দাঊদ শরীফ : ১/১১১ ত্বা. ৭৬৪)
সানা হলো : সুবহানাকা سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَহযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেছেন, রাসূল (স) নামায শুরু করার সময় বলতেন সুবহানাকা سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَনাসায়ী শরীফ হাদীস নং ৮৯৯
৫. ইমামের পেছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে না
অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেঈনের মতে ইমামের পেছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না। ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) তিনজনই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। শুধুমাত্র ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন কেবল জোহর ও আসরের নামাযে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে। সুতরাং সূর ফাতিহা ছাড়া মুক্তাদীর নামায হবেই না, ঢালাওভাবে একথা বলা বিভ্রান্তিমূলক।
প্রমাণ :
১. মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৭৪ নং পৃষ্ঠায় হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল (সা) ওয়াজ করেন। তখন আমাদেরকে সুন্নত শিক্ষা দেন। এবং নামাযের পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন, যখন তোমরা নামাযে দাঁড়াবে তখন কাতার ঠিক করে নিবে। এরপর তোমাদের একজন ইমাম হবে। আর সে (্ইমাম) যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরা তাকবীর বলবে। তবে সে যখন কেরাত পড়বে তখন তোমরা নীরব থাকবে।
২. হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা) বলেন যে ব্যক্তি ইমাম রয়েছে, (অর্থাৎ যে ইমামের পেছনে নামায পড়ছে) তার ইমামের কেরাতই তার কেরাতের জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ :পৃ. ৬১ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খ. ১, পৃ ৩৭৬)
৩. তাবেয়ী হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (র) বলেন যে, তিনি ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়া সম্পর্কে যায়েদ ইবনে ছাবিত (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি জবাব দিলেন যে, কোনো নামাযেই ইমামের সঙ্গে কোনো কিছু পড়বে না। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৫৭৭)
সূরা ফাতিহা না পড়েই যদি আগন্তুক মুক্তাদী ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হতে পারে তাহলে সে রাকাত পেল বলে গণ্য করা হয়। সুতরাং বিবেকবান সবার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না।
৬. নামাযে একান্তে অনুচ্চস্বরে আমীন বলা সুন্নত
ইমাম যখন সূরা ফাতিহা শেষ করবে তখন সকলে আমীন বলা সুন্নত। তবে এ ক্ষেত্রে আস্তে ও অনুচ্চস্বরে আমীন বলবে। কেননা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল দ্বারা তা প্রমাণিত। সুতরাং যারা বলেন আস্তে বলা সুন্নত পরিপন্থী তাদের কথা সঠিক নয়।
প্রমাণ :
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে নিয়ে রাসূল (স) নামায পড়লেন। তিনি যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَপড়লেন তখন آمِينَআমীন বললেন। এবং আমীন বলার সময় তার আওয়াজকে নিম্ন (আস্তে) করলেন। (তিরমিযী শরীফ : ২৪৯)।ইমাম হাকেম রহ. যাহাবী রহ. এবং ইবনে জারীর তাবারী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
২. ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (র) তার তাহযীবুল আছার গ্রন্থে বলেছেন, সঠিক কথা হলো আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার উভয় হাদীস সহীহ। এবং দুটি পন্থা অনুযায়ী এক এক জামাত আলেম আমলও করেছেন। যদিও আমি আস্তে আমীন বলাই অবলম্বন করেছি। কেননা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী এ অনুযায়ীই আমল করতেন। Ñ(আল জাওহারুল নাকী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৮)
অধিকন্তু আমরা বলব যে, মদীনা শরীফে ইমাম মালেক (র) এর নিবাস ছিল। তার মূলনীতি ছিল, কোনো বিষয় সহীহ হাদীসে পাওয়া গেলেও মদীনাবাসীর আমল কি ছিল সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন। তিনিও ফতুয়া দিয়েছেন যে, মুক্তাদী আস্তে আমীন বলবেন। (আল মুদাওয়ানা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭১)
৩. হযরত উমর (রা) এর ফতুয়া: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবী লায়লা (রা.) বলেন, হযরত ওমর (রা) বলেছেন যে, ইমাম চারটি বিষয় আস্তে পড়বে, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও রাব্বানা লাকাল হামদ। Ñ(আল মুহাল্লা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৮০)
৭. শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত তোলা সুন্নাত
নামায শুরু করার সময় যখন প্রথম তাকবীর বলবে তখনই শুধু কান পর্যন্ত হাত তোলা সুন্নাত। রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উঠানো হবে না। একাধিক সহীহ হাদীস, অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল দ্বারা তা প্রমাণিত।
দলীল :
১. হযরত আলকামা রহ. বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূল (স) এর নামাযের মতো নামায পড়ব না? একথা বলে তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে শুধু প্রথম বারই হাত তুলেছিলেন। (আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং ৭৪৮, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৫৭, নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৫৮)
২. হযরত আসওয়াদ রহ. বলেছেন, আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) কে দেখেছি, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন, পরে আর তুলতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৯)
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেন, আমি রাসূল (স)-এর পেছনে আবূ বকর ও ওমর (রা)-এর পেছনে নামায পড়েছি। তারা কেবল তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন। (সুনানে বায়হাকী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৯)
৮. সেজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু, পরে হাত, তারপর নাক এরপর কপাল রাখা সুন্নাত
দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সেজদায় যাওয়ার সময় আগে হাটু জমিনে রাখবে, এরপর মাটিতে হাত রাখবে। এরপর নাক, এরপর কপাল, এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সুন্নত।
দলীল :
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) বলেন, আমি রাসূল (স)-কে দেখেছি তিনি যখন সেজদায় যেতেন তখন হাত রাখার আগে হাটু রাখতেন। আর যখন সেজদা থেকে উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। (আবূ দাঊদ শরীফ, হাদীস নং ৮৩৮, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ৩৬৮, নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৮৯)
ইমাম তিরমিযী রহ. এই হাদীস উল্লেখ করে বলেন, এই হাদীস অনুসারে অধিকাংশ আলেমের আমল। তারা মনে করেন, হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখবে। এবং হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাবে না।
৯. প্রথম রাকাত শেষ করে সোজা উঠে দাঁড়ানো সুন্নাত
প্রথম রাকাতের সেজদা শেষ করে সরাসরি দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং না বসা সুন্নাত।
দলীল :
১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, নবী করীম (স) নামাযে ভুলকারী অনেক ব্যক্তিকে বলেছেন, তুমি যখন নামায পড়তে ইচ্ছা কর তখন ভালোভাবে অযু করে নাও। অতঃপর কিবলামুখী হও। আল্লাহু আকবার বলো এবং কুরআনের যতটুকু তোমার জন্য সহজ হয় পাঠ কর। অতঃপর রুকু কর এবং স্থিরভাবে রুকু করে এরপর মাথা তোল এবং স্থির হয়ে দাঁড়াও। এরপর সেজদা কর এবং সেজদায় স্থির হয়ে থাক। অতঃপর ওঠ এবং স্থির ও শান্ত হয়ে বসে পড়। এরপর আবার সেজদা কর এবং সেজদায় স্থির হয়ে থাক। অতঃপর সোজা দাঁড়িয়ে যাও। পুরো নামাযে এভাবেই সব কাজ কর। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৬৬৫৭)
২. হযরত ইকরিমা রহ. বলেন, আমি মক্কা শরীফে এক শায়খের পেছনে নামায পড়লাম। তিনি নামাযে ২২বার আল্লাহু আকবার বললেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে বললাম লোকটি আহমক। তিনি বললেন, (তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক) এটা তো আবুল কাসেম (রাসূল) সা-এর সুন্নাত। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৭৮৮)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায় প্রথম ও তৃতীয় রাকাতের পরে না বসেই উঠে পড়বে। অন্যথায় বসাই যদি সুন্নাত হতো তাহলে তাকবীর ২৪ বার হওয়া উচিত ছিল। কেননা একথা স্বীকৃত এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (সা) প্রত্যেক উঠাবসায় তাকবীর বলতেন।
১০. নামাযে বৈঠকের মাসনূন পদ্ধতি
নামাযে প্রথম ও শেষ বৈঠকে বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখা সুন্নাত।
দলীল :
১. হযরত আয়েশা (রা) বলেন, তিনি (রাসূল সা) প্রত্যেক দুই রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। এবং বাম পা বিছিয়ে দিতেন ও ডান পা খাড়া রাখতেন। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪৯৮)
২. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) বলেন, আমি মদীনা শরীফে আসলাম, আর (মনে মনে) বললাম আমি অবশ্যই রাসূল (সা)-এর নামায দেখবো। (তিনি বলেন) যখন তিনি বৈঠক করলেন অর্থাৎ তাশাহহুদের জন্য তখন তার বাম পা বিছিয়ে দিলেন আর ডান পা খাড়া রাখলেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৯২)
১১. বিতর নামায তিন রাকাত
রাসূল (সা) এর কর্ম আমল ও নির্দেশনা এবং তার একনিষ্ঠ অনুসারী খুলাফায়ে রাশেদীন অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীনের বর্ণনাও আমল থেকে প্রমাণিত যে, বিতর নামায তিন রাকাত। দ্বিতীয় রাকাত শেষে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। তৃতীয় রাকাতে সূরা মিলানোর পর তাকবীর বলে দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
দলীল :
১. হযরত আবূ সালামা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসূল (স)-এর নামায কেমন হতো? তিনি উত্তরে বললেন, রাসূল (সা) রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহীহ বুখারী শরীফ, হাদীস নং ১১৪৭)
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন আমি হযরত আয়েশা (রা)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবীজী (সা) বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে বলেনÑ চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন বরং দশ ও তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। (সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৩৫৭)
৩. সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে যে, অতঃপর রাসূল (সা) এভাবে তিন বার ছয় রাকাত নামায আদায় করলেন। প্রতি বারই মিসওয়াক ও অযু করেছেন। এবং উপরোক্ত আয়াতগুলো পড়েছেন। সবশেষে তিন রাকাত বিতর পড়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩)
৪. হযরত উবাই ইবনে কা‘ব (রা) বলেন, রাসূল (সা) তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে সূরা আলা। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফেরুন তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দোয়া কুনুত পড়তেন। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৯৯)
৫. হযরত যাযান র. বলেন যে, হযরত আলী (রা) তিন রাকাত বিতর পড়তেন। (ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৬৯১৪)
৬. হযরত ছাইব ইবনে ইয়াযীদ রহ. বলেন, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব (রা) তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৬৬১)
৭. হযরত মাকহুল রহ. বলেন, হযরত ওমর (রা) তিন রাকাত বিতর পড়েছেন। এবং দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফেরাননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৬৯০১)
৮. হযরত আবুয যিনাদ রহ. বলেন, আমি মদীনায় সাত ফকীহ অর্থাৎ ইবনুল মুসায়্যিব, কাসিম ইবনে মুহাম্মদ, উরওয়া ইবনে যুবাইর, আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান, খারিজা ইবনে যায়েদ, উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ও সুলায়মান ইবনে ইয়াসার এর যুগ পেয়েছি। যাঁরা ইলম ও তাকওয়ায় অনন্য ছিলেন। কখনো তাদের মধ্যে মতভেদ হলেও তাদের অধিকাংশের মত অনুযায়ী কিংবা জ্ঞানের বিচারে যিনি অগ্রগামী তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হতো। এই মূলনীতি অনুসারে তাঁদের যেসব সিদ্ধান্ত আমি ধারণ করছি তন্মধ্যে একটি হচ্ছেÑ তাঁরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, বিতর নামায তিন রাকাত। আর শেষ রাকাতেই কেবল সালাম ফিরাবে। (তাহাবী : ২/২০৭)
উল্লিখিত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সাহাবা তাবেয়ীগণ ও নবীজীর (সা)-এর মতোই তিন রাকাত বিতর পড়তেন। নবীজী (সা) এক রাকাত বিতর পড়েছেন এমন একটি সহীহ হাদীসও পাওয়া যাবে না।
১২. তারাবীহ নামায বিশরাকাত
রাসূল সা., সাহাবায়ে কেরাম রা., তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবী নামায বিশ রাকাত।
কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবী নামায পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন।
কিন্তু কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবীর মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীর আমলকে অব্যহত রাখেন। যা আজো অব্যাহত রয়েছে।
সুতরাং আট রাকাত তারাবী পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হল, সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা।
হাদীসে বিশ রাকাত তারাবী
১.হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. ইরশাদ করেন, একদা রমজান মাসে রাসূল সা. তাশরীফ নিয়ে আসলেন, লোকদের নিয়ে চব্বিশ রাকাত তথা চার রাকাত ফরজ ও বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়েছেন। {হাফেজ হামযা বিন ইউসুফ সাহমীকৃত তারীখে জুরজান-১৪৬}
২.হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. ইরশাদ করেন, রমজান মাসে রাসূল সা. বিশ রাকাত নামায [তারাবীহ] এবং বিতির পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/২৮৬, আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী-৫/৪৩৩}
৩.হযরত সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা হযরত উমর রা. এর জমানায় বিশ রাকাত [তারাবীহ নামায] পাবন্দির সাথে পড়তেন। তিনি বলেন, এমনকি কুরআনে কারীমের দুইশত আয়াত তিলাওয়াত করা হতো। আর হযরত উসমান রা. এর আমলে লোকেরা দাঁড়ানোর [দীর্ঘতার কারণে] নিজের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়াতেন। {সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/৪৯৬}
৪.হযরত হাসান রহ. বলেন, হযরত উমর রা. রমজান মাসে তারাবীহ পড়ানোর জন্য হযরত উবাই বিন কাব রা. এর ইমামতীতে সকলকে একত্র করেন। তখন হযরত উবাই বিন কাব রা. লোকদের বিশ রাকাত [তারাবীহ নামায] পড়ান। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৪২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/১৭৬}
৫.হযররত আবুল হাসনা ইরশাদ করেন, হযরত আলী রা. এক ব্যক্তিকে আদেশ দিলেন, সে যেন রমজান মাসে লোকদের বিশ রাকাত [তারাবীহ নামায] পড়ায়। {মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/২৮৫}
৬.হযরত জায়েদ বিন ওহাব রহ. বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. রমজান মাসে আমাদের নামায [তারাবীহ] পড়াতেন। অতঃপর ঘরে যখন ফিরে যেতেন তখনও রাত বাকি থাকতো। তিনি আমাদের বিশ রাকাত [তারাবীহ] এবং তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {কিয়ামুল লাইল লিলমারওয়াজী-১৫৭}
যারা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সকল সাহাবীগণ।
ইমাম আবু হানীফা রহ.।
ইমাম শাফেয়ী রহ.।
ইমাম মালিক রহ.।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ.।
১৩ জুমআর আগের ও পরের সুন্নাত
জুমআর নামাযের আগে ও পরে চার রাকাত করে আট রাকাত নামায সুন্নাত। যারা বলেন জুমার আগে ও পরে সুন্নাত নেই তারা মৌলিকভাবে নবীজী (সা) এর হাদীস সাহাবা ও তাবেয়ীনদের আমল সম্পর্কে বেখবর।
দলীল :
১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন জুমআ (ফরজ) পড়ে সে যেন বা’দাল জুমা চার রাকাত পড়ে নেয়। (মুসলিম শরীফ : হাদীস নং ৮৮১)
২. হযরত জাবাল ইবনে সুহায়ম (সা) হযরত ইবনে ওমর (রা) সম্পর্কে বলেছেন, তিনি কাবলাল জুমা (জুমার পূর্বে) চার রাকাত পড়তেন। মাঝখানে সালাম ফিরাতেন না। জুমার ফরজের পর তিনি প্রথমে দুই রাকাত, পরে চার রাকাত পড়তেন। (তাহাবী শরীফ, এর সনদ সহীহ)
৩. হযরত আব্দুর রহমান সুলামী রহ. বলেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) আমাদেরকে কাবলাল জুমা চার রাকাত, বাদাল জুমা চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিতেন। অবশেষে হযরত আলী (রা) যখন আমাদের এখানে (কূফায়) আসলেন, তখন তিনি আমাদেরকে বা‘দাল জুমা দুই রাকাত তারপর চার রাকাত (মোট ছয় রাকাত) পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৫৫২৫, এর সনদ সহীহ)
৪. হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম কাবলাল জুমআ চার রাকাত বা‘দাল জুমা চার রাকাত পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৪০৪, ৫৪২২)
১৪. ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর
ঈদের দুই রাকাত নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকু সেজদার তাকবীর ছাড়া আরো ছয়টি তাকবীর বলা সুন্নাত।
একাধিক সহীহ হাদীস এবং বহু সাহাবী ও তাবেয়ী এর ফতোয়া ও আমল দ্বারা তা প্রমাণিত।
দলীল :
১. কাসেম আবূ আব্দুর রহমান রহ. বলেন আমাকে নবী (সা.) আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন নামায পড়লেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ভুলে যেয়োনা, জানাযার তাকবীরের মতো, এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন। (তাহাবী শরীফ : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০০)
২. হযরত সাঈদ ইবনে আদী, হযরত ইবনে মাসঊদ (রা) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চার তাকবীর দেবে, অতঃপর কেরাত পড়বে। অতঃপর তাকবীর বলে রুকু করবে। এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে পরে কেরাত পড়বে। কেরাতের পরে চার তাকবীর দেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৯৩ – ২৯৪)
৩. ছয়জন সাহাবী থেকে সহীহ সনদে ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই ছয় সাহাবী হলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা), হযরত আনাস (রা), হযরত জাবের (রা), হযরত মুগীরা ইবনে শো‘বা (রা)।আর তিনজন মাসঊদ (রা) ইবনে মাসঊদের মতকে সমর্থন করেছেন। সুতরাং বলা চলে নয়জন সাহাবী থেকে সহীহ হাদীসে ছয় তাকবীরের কথা বর্ণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যেখানে নয় তাকবীর বলার কথা উল্লেখ আছে, সেখানে প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর সহ পাঁচ তাকবীর গন্য করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রাকাতে চার তাকবীর। আর যে হাদীসে চার বলা হয়েছে, সেখানে প্রথম রাকাতের রুকুর তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে রাকাত শুরুর তাকবীরসহ চার ধরা হয়েছে।
১৫. জানাযার নামায পদ্ধতি
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহ. -এর থেকে জানাযার নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নাত নয়। বরং প্রথম তাকবীর বলে সানা পড়বে, দ্বিতীয় তাকবীর বলে দুরূদ শরীফ পড়বে, তৃতীয় তাকবীর বলে দোয়া পড়বে এবং চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে। হ্যাঁ সানা হিসেবে (অর্থাৎ সানার পরিবর্তে) সূরা ফাতেহাও পড়তে পারবে। কেরাত হিসেবে নয়। রাসূল (সা)-এর হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের আমল দ্বারাই একথা প্রমাণিত।
দলীল :
১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা জানাযার নামায পড়বে, তখন তার জন্য একনিষ্ঠভাবে দোয়া কর। (আবূ দাঊদ শরীফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫৬)
২. হযরত নাফে রহ. থেকে বর্ণিত যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) জানাযার নামাযে কেরাত পড়তেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২)
৩. আবুল মিনহাল রহ. বলেন, আমি আবুল আলিয়াকে জানাযার নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি মনে করি সূরা ফাতিহা শুধু সে নামাযেই পড়া যাবে সেখানে রুকু ও সেজদা রয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২৪)
১৬. মহিলাদের নামায
১. দাড়ানো অবস্থায় যথা সম্ভব দু’নো পা মিলিয়ে রাখবে।
দলীল: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: কে মহিলাদের নাময সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সংকোচিত ও (শরীরের অঙ্গ) মিলিয়ে নামায পড়বে। (মুসান্নাফে আবী শায়বা:১/২৭০, হা.২৭৯৮
২. তাকবীরে তাহরীমার সময় বুক বরাবর হাত উঠাবে।
দলীল: আমি রাসূল সা: এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে এ কথাও) বলেছিলেন: হে ওয়াইল ইবনে হুজর। যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর । (আলমুজামুল কাবীর, তাবরানী ১২০/২২ এই হাদিসটি হাসান)
মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে:
মহিলাগন ডান হাতের তুলূ বাম হাতের পিঠের উপর রেখে বুকের উপর হাত বাঁধবে। পুরুষের মত নাভীর নীচে তাহ বাঁধবে না। মহিলাদের জন্য শরীয়তের মূলনীতি হলো তারা তাদের শরীরকে এক অঙ্গকে আরেক অঙ্গের সাথে মিলিয়ে রাখবে, তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, মহিলা কীভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন খুব জড়সড় হয়ে তাদের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)।
তাই আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী রহ: বলেন যে, মহিলাদের ব্যপারে সবাই ঐকমত্য পোষন করেছেন যে, তাদের জন্র সুন্নত হল বুকে হাত রাখা। এটাই তাদের জন্য বেশী সতরোপযোগী। সেআয়াহ ২য় খন্ড,১৫৬ পৃ:)
মহিলাদের সেজদার পদ্ধতি:
মহিলাগন সেজদার সময় পেট রানের সাথে এবং বাহুও প¦ার্শদেশের সাথে মিলিয়ে রাখবে। এমনিভাবে তারা তাদের পাকে ডান দিক দিয়ে বের করে মাটিতে বিছিয়ে দিবে। খাড়া রাখবে না।
দলীল: রাসুল সা: নামায আদায়কারী দুই মহিলাকে অতিক্রম করেন। তখন তিনি (তাদের উদ্দেশ্যে) বলেন, যখন তোমরা সিজদা আদায় করবে তখন দেহের কিছু অংশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে ( অর্থাৎ শরীরকে সংকুচিত করে রাখবে) ।কারন এ ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের মত নয়।
(আবু দাউদ ১ম / ১১৮ পৃ:)
মহিলাদের বৈঠক পদ্ধতি:
মহিলাগন দুই সেজদার মাঝখানে এবং উভয় বৈঠকের সময় বাম পার্শ্বের নিতম্বের উপর বসবে এবং উভয় পা ডানদিকে বের করে দিবে। হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ, রহ. বলেন, মহিলাদেরকে আদেশ করা হত তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে।
আবরন যোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-১/৩০৩।
আল্ হামদুলিল্লাহ ! অনেক গুরুত্বপূর্ন মাসয়ালা ।
যাযাকাল্লাহ।
সঠিক তথ্য দিলেন না, সরি।
আমিতো র্যাফারেন্সসহ দিয়েছি। কোথায় বেঠিক তথ্য দিলাম দয়া করে বলবেন কি?