কুরআন মাজীদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হকসমূহ
মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
১. কুরআন মাজীদর প্রতি পরিপূর্ণ উপলব্ধির সাথে ঈমান আনা।
এ ঈমানের কয়েকটি দিক আছে, যথা-
ক. বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এটা আল্লাহ তা’আলার কালাম যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিল করেছেন। এ কিতাব যে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ এবং এর যাবতীয় বিষয়বস্তু সত্য এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, নাযিলের সময় থেকে আজ অবধি এ কিতাব যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামতকাল পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে , বর্তমানে গ্রন্থাকারেযে কুরআন আমাদের হতো আছে, যা সূরা ফাতিহা দ্বারা শুরু হয়ে সূরা নাস এ সমাপ্ত হযেছে। এটাই আল্লাহতাআলার সেই কিতাব যা নবী মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিল হয়েছিল।
খ. বিশ্বাস রাখতে হবে যে , মানুষের হিদায়াত ও সফলতা কুরআনের প্রতি ঈমান আনার মাধ্যেই নিহিত। এ ঈমানের মাধ্যমেই মানুষ তার স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করতে ও আখেরাতের মুক্তি পেতে পারে। যে ব্যক্তি এ কুরআনকে নিজের দিশারী ও আদর্শ রূপে গ্রহণ করবে দোজাহানের সফলতা কেবল তারই নসীব হবে।
গ. কুরআনের প্রতি ঈমান কেবল তখনই গহণযোগ্য হবে, যখন সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ইমান আনা হবে। কুরআন মাজীদের কিছু বিধান মানা ও কিছু না মানা এবং কুরআন মাজীদকে জীবনের ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধান্তদাতা বলে স্বীকার করা ক্ষেত্র বিশেষে স্বীকার না করা,সম্পূর্ণ কুফরী আচরণ। গোটা কুরআনকে অস্বীকার করা যে পর্যায়ের কুফর এটাও ঠিক সে রকমরেই কুফর।
ঘ. কুরআন মাজীদের প্রতি ঈমান গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য এটাও শর্ত যে, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা মোতাবেক হতে হবে, যে শিক্ষা মহান সাহাবীগণ হতে প্রজন্ম পরস্পরায় চলে আসছে। সুতরাং কোন আয়াতকে তার প্রজন্ম প্রজন্ম পরস্পরায় চলে আসা সর্বাবাদী সম্মত ব্যাখ্যার পরিবর্তে নতুন কোনও ব্যাখ্যা গ্রহণ করলে সেটা কুরআন মাজীদকে সরাসরি অস্বীকার করার নামান্তর ও সেই রকমেরই কুফর গণ্য হবে।
২. কুরআন মাজীদের আদব ও সম্মান রক্ষা করা।
কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা, তেলাওয়াতকরা, লেখা, দেখা ও রেখে দেয়া ইত্যাদি কাজসমূহ আদব ও প্রযতেœ সহকারে করা, কুরআন সম্পর্কে কথাবার্তা বলার সময় এবং এর অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে আলোচনাকালে আদব রক্ষায় যতœবান থাকা,সামান্যতম বেআদবী হয় কিংবা কিছুমাত্র অমর্যাদা প্রকাশ পায় এ জাতীয় আচরণ ও কথাবার্তা হতে বিরত থাকা, মোদ্দাকথা অন্তরকে কুরআরে প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভক্তি -ভালবাসায় পরিপ্লুত রাখা, এবং সর্বতোভাবে আদব-ইহতারাম বজায় রাখা কুরআন মাজীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হক।
৩. কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত:
এটা পবিত্র কুরআনের একটি স্বতন্ত্র হক এবং আল্লাহ তা’য়ালার অতিবড় এক ইবাদত। তাজবীদের সাথে পড়া, মাখরাজ ও সিফাতর প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং পাঠরীতির অনুসরণ করা, মশক করা তিলাওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অনেকে মশকে কুরআনকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কুরআনের অর্থ বুঝাকে ও কুরআনের প্রতি দাওয়াত দেওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে মারাত্মক অবহেলা ও উদসীনতায় লিপ্ত । কেউবা আবার কুরআন শুদ্ধ পড়াতে জেনেও দ্বীনি বা দুনিয়াবী কাজের দোহাই দিয়ে এ বিষয়ে অবহেলা প্রদর্শ করছে। সম্প্রতি এক শ্রেণীর নব্য পন্থী তাদের অজ্ঞতার ফলে আল্লাহর কালাম কুরআনকে মানব রচিত বই পুস্তকের সাথে তুলনা করার কারণ এবং কুরআরে শব্দমালায় নূর,হিদায়াত, বরকত, প্রশান্তি, হৃদয়ের উদ্ভাস ও উদ্দীপণতা এবং কুরআনের শব্দমালার সাথে বহু বিধান ও বহু সৎকর্মের সম্পৃক্তার বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে এই চিন্তা ধারা পোষন করে থাকে যে, অর্থ না বুঝে তেলাওয়াতের কোনওফায়দা নেই বরং এরুপ তেলাওয়াতএকটি গুনাহেরকাজ (নাউজুবিল্লাহ) বস্তুত এমন চিন্তাধারা সম্পূর্ণ গুরুতর অপরাধ ,চরম বেআদবী এবং মস্তিকবিকৃতিরই বহি:প্রকাশ। তবে,গভীর ভাবে কুরবআন অধ্যায়ন ও উপদেশ গ্রহণের বিষয়টি কখনোই অনস্বীকার্য নয়।
৪. কুরআন মাজীদের হিদায়াতও বিধানাবলীর অনুসরণ।
এটাও কুরআন মাজীদের একটি পৃথক হক। কুরআনের প্রতি ঈমান আনার পর পরই এর পর্যায় চলে আসে। ঈমান ও ইসলামের আরকান (মৌলিক বিষয়সমূহ) ও অবশ্য পালনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে নির্দেশনা তো কুরআন মাজীদে আছে, কিন্তু তার জ্ঞান ইসলামী সমাজে এমনিতেই চালু রয়েছে,যেমন প্রত্যেক মুসলিম জানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরয ,জুমুআর দিন জুহরের পরিবর্তে জুমু’আর নামাজ পড়া ফরজ, নেসাব পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করা ফরয়,রমযান মাসে রোযা রাখা ফরজ সামর্থ্যবানের উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরজ, পর্দা করা ফরজ, সূদ-ঘুষ হারাম, জুলম করা হারাম ইত্যাদি।
এসব বিধান মানার নিয়ম এই যে, আগে জানতে হবে এসবের কোনটি কুরআন মাজীদের কোন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এবং তারপর সেই জ্ঞান অনুসারে তা পালন করা ফরজ হবে। বরং ঈমানের পরই আমল শুরু করে দিতে হবে কুরআনী বিধানাবলীর জ্ঞান কুরআনের তাফসীর শিখে অর্জন করা জরুরী না এবং এরূপ জ্ঞানার্জনের উপর হুকুম পালকে মওকুফ রাখাও জায়েয নয় সাহাবায়ে কিরাম যে বলেছেন- تعلمنا الايمان ثم تعلمنا القران فازددنا ايمانا “আমরা আগে ঈমান শিখেছি, তারপর কুরআন শিখেছি, ফলে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে”। এর অর্থ এটাই যে, তারা ঈমান, ঈমানের আরকান ও বিধানা বলী সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেছিলেন আমল ও পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। তারা এটাকে কুরআনের তাফসীর শেখার উপর মওকুফ রাখেননি। বস্তুত তাদের সে পন্থাই দ্বীন শেখার স্বভাবসিদ্ধ পন্থা।
৫. কুরআনের তাদাব্বুর (চিন্তা-ভাবনা) ও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ:
তাদাব্বুরের সত্তাসার হল – ‘ উপদেশ গ্রহনের লক্ষ্যে ভক্তি ও ভালোবাসা সহকারে চিন্তা ও ধ্যানমগ্নতার সাথে আয়াতসমূহ পাঠ করা।
তাদাব্বুরের কয়েকটি শর্ত:
১. আল্লাহ তা’আলার উদ্দিষ্ট মর্ম বোঝার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মেজাজ মর্জি, ভাবাবেগও চিন্তা-চেতনার কিছু মাত্র প্রভাব না পড়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
২. লক্ষ্য রাখতে হবে তাদাব্বুরের ফল যেন প্রজন্ম পরম্পরায় প্রাপ্ত “আকীদা বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, চূড়ান্ত শরঈবিধান ও সালাফেসালিহীন বা মহান পূর্বসূরীদের ঐক্যমত ভিত্তিক তাফসীরের পরিপন্থি না হয়, সে রকম হলে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে, তাদাব্বুর সঠিক পন্থায় হয়নি।
৩. তাদাব্বুর নির্ভর নিত্যনতুন তাৎপর্য খুজে বের করার বিষয়টি ওয়াজ নসীহত কিংবা সৃষ্টিরহস্য, তত্বজ্ঞান ও শরঈ বিধানাবলীর হিকমতের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। আকাইদ ও আহকামের ময়দান এর থেকে ভিন্ন । এখানে যে কেউ চাইলে গোটা উম্মতের ঈজমার বিপরীতে স্বীকৃত বিশ্বাস ও বিধান পরিপন্থী কোন তাফসীর করতে পারবে না।
তাদাব্বুরের ফায়দা:
১. এর দ্বারা ঈমান নসীব হয় ও ঈমান সজীব হয়।
২. এর দ্বারা উপদেশ গ্রহনের নিয়ামাত লাভ হয়্
কিন্তু ঈদানীং লক্ষ্য করা যায়,কিছু লোক কুরআনের ভাষা ও কুরআন বোঝার মৌলিক বিষয় সমূহ সম্পর্কে অজ্ঞতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থের উপর ভিত্তি করে কুরআনের গবেষণায় নেমে গিয়েছ্ ে।
অথচ অর্থ বোঝাই যথেষ্ট হলে কুরআনের অর্থ উপলব্ধকারী আরবের কাফের মুশরিকদেরকে তাদাব্বুর না করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যে সকল নিন্দা করেছেন সে সকল নিন্দার কোন প্রয়োজন ছিল না।
৬. কুরআন মাজীদের তা’লীম ও তাবলীগ:
এটাও কুরআন মাজীদের এক গুরুত্বপূর্ণ হক। এর বিভিন্ন পর্যায় ও নানা রকম পদ্ধতি আছে এবং তার জন্য সুনির্দিষ্ট শর্ত -শারায়েত ও আদব-কায়দা আছে। যে ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে এ হক আদায়ের কাজে অংশগ্রহণে সক্ষম নয়, সে আদব ও বিনয়ের সাথে যে কোনও ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে। এ পন্থায় তার জন্য ছাওয়াবের হকদার হওয়ার ও নিজের জন্য সৌভাগ্যের দুয়ার খোলার সুযোগ রয়েছে।
৭. নিজেকে নিজের আওলাদকে এবং অধীনস্থদেরকে কুরআনের শিক্ষা ও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত না রাখা।
কুরআনের হুকূক সম্পর্কিত আলোচনা অনেক দীর্ঘ। এ প্রসঙ্গে এ স্থলে সর্বশেষ যে কথা আরয করতে চাচ্ছি তা এই যে,কোনও মু‘মিন কুরআন ও কুরআনের হিদায়াতথেকে নিজে বঞ্চিত থাকবে কিংবা নিজের আওলাদ ও অধীনস্থদেরকে বঞ্চিত রাখবে – এটা কিছুতেই শোভনীয় ও গ্রহণীয় হতে পারে না। মাদ্রাসা ও উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে যে সব প্রোপ্রাগান্ডা চালানো হয়,তাতে প্রভাবিত হয়ে অথবা বিশেষ কোনও ছাত্র বা আলেমের ভ্রান্ত কর্মপন্থাকে অজুহাত বানিয়ে অথবা মাদ্রাসাগুলোর দুরবস্থার কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কিংবা যে রিযকের যিম্মাদারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তার নিজের কাছে রেখেছেন, নিজেকে তার যিম্মাদার মনে করে নিজের সন্তানকে কুরআন ও কুরআনের হিদায়াত শেখানো থেকে বঞ্চিত রাখাটা কিছুমাত্র বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়, বরং এটা মারাত্মক রকমের লোকসান। আপনি পদ্ধতি যেটাই অবলম্বন করুন, নিজের আওলাদ ও অধীনস্থদেরকে সহীহ তেলাওয়াত অবশ্যই শিক্ষা দিন এবং সালাফে সালিহীন ’ (মহান পূর্বসুরীগণ) থেকে প্রজন্ম পরস্পরায় প্রাপ্ত শিক্ষা-দীক্ষা ও কুরআনী হিদায়াত দ্বারা তাদেরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করে তুলুন।
পরিতাপের বিষয় হল, বহু লোক কুরআনী তা’লীমের কার্যক্রমে আর্থিক সাহায্য করছে, কুরআনী মকতব , হিফজখানা ,মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করছে, কিন্তু নিজের সন্তানকে ঈমান ও কুরআন শেখানোর ব্যাপারে তাদের কোনও আগ্রহ নেই। এটা নিজেদের লোকসান তো বটেই, সেই সঙ্গে র্কুআন মাজীদের প্রতিভক্তি ভালোবাসার সীমাহীন ঘাটতিরও দলীল।
৮. হিফযে কুরআন:
কুরআন মাজীদের যতটুকু সম্ভব হিফয করা, সন্তান-সন্ততি ও অধীনস্তদের হিফজ করানো এবং সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে হিফয কুরআনের প্রচলন ও ব্যবস্থা করা কুরআন মাজীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হক। হাদীস শরীফে কুরআন শেখা ও তা শেখানোর যে তাকীদ আছে তার উপর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে আমল করেছেন যে,প্রথমে বারবার শুনে আয়াতটি মুখস্থ করেছেন। এর পর তার মর্ম ও বিধান শিক্ষা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ হিফযে কুরআনের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। এর মৌলিক কারণ তিনটি:-
১. ঈমানের কমযোরিও কুরআনের প্রতি মহব্বত ও ভালবাসার অভাব।
২. এই ভুলধারনা যে হাফেজ হওয়া শিশুদের কাজ । সুতরাং শৈশবে যদি অভিভাবকরা হিফজ খানায় ভর্তি করান তাহলেই শুধু হাফেজ হওয়া যায়। অন্যথায় যায় না।
৩. এই ভুল ধারনা যে, হয় কুরআনের হাফেজ হও, নতুবা কেবল এতটুকু মুখস্থ কর যে, কোন মতে নামাজ আদায় করা যায়। মাঝামাঝি কোন ছূরত নেই।
আসলে হিফজের কোন বয়স নেই বরং যত বেশি হিফজ করতে থাকাই মুমিনের শানও সৌভাগ্য। বরং ঈমানের দাবি তো এই যে , প্রত্যেক মুমিন নিজ নিজ পরিবারে এই নীতি নির্ধারণ করবেন যে, আমরা জীবিকার প্রয়োজনে পরবর্তী জীবনে যে পেশাই প্রহণ করি না কেন আমাদের সূচনা ও ভিত্তি হবে কুরআন। আমাদের দেশের শায়খুল হাদীস মাও: আযীযুল হক (রহ) এর সকল সন্তান ও নাতী নাতনী সবাই হাফেয এবং এদের নতুন প্রজন্ম হাফেযে কুরআন হওয়াকে তাদের খান্দানের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছে। হিফযে কুরআন যেন হয় আমাদেরও খান্দানের পরিচয় চিহ্ন । আমীন।
কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের আদব:
১. কুরআন মাজীদের উপর ঈমানকে দৃঢ় করুন এবং পুন:পুন: তার নবায়ন করুন।
২. অন্তরে কুরআনের আকর্ষণ ও ভালবাসা বৃদ্ধি করুন।
৩. বিশ্বাস রাখুন যে, কুরআন মজীদের বিধান ও শিক্ষা চিরন্তন ও শাশ্বত, যা বিশেষ স্থান বা কালের গন্ডিতে সীমবদ্ধ নয় কিংবা বিশেষ শ্রেণী ও জনগোষ্ঠীর জন্যও প্রদত্ত নয়; বরং স্থান-কাল কাল নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য তা অবশ্য গ্রহনীয় ও অপরিহার্যরূপে অনুসরণীয়। এর প্রতি বিশ্বাস ও ঈমান এবং এর মার্যাদা ও ইহতিরাম মানুষ মাত্রেরই অপরিহার্য কর্তব্য। বিশ্বাস রাখুন যে, উন্নতি ও অগ্রগতির এই যুগেও প্রকৃত জ্ঞান ও আলো শুধু কুরআন থেকেই পাওয়া যেতে পারে।
৪. বিশ্বাস রাখুুন যে, আমাদের পূর্বসূরী সালাফে সালেহীন কুরআন আমাদেরচেয়ে বেশি বুঝতেন এবং কুরআনের প্রতি তাদের ভক্তি ভালবাসা তাঁদের বেশি ছিল। তেমনি জীবনের সকল অঙ্গনে কুরআনের অনুসরণ , কুরআনী বিধান বাস্তবায়ন এবং এ পথে সর্বস্ব ত্যাগের প্রেরণা ও আকাঙ্খাও তাঁদের অন্তরে বহু গুণ বেশী ছিল।
৫. ইয়াকীন করুন যে, দ্বীনের আমানত বহনকারী আলিমগণ, যারা রাতদিন কুরআন-হাদীস,সুন্নাহ ও সীরাতের পঠন-পাঠনে মশগুল তাঁরা আমাদের চেয়ে কুরআন বেশি বোঝেন। কুরআনের মর্যাদা ও ইহতিরাম তাঁদের অন্তরে আমাদের চেয়ে বেশি এবং সমাজে কুরআনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খাও তাদের অন্তরে প্রবল।
৬. বিশ্বাস রাখুন যে,কুরআন বোঝা,কুরআনের শিক্ষা ও বিধান মুখস্থ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা আজকের নতুন বিষয় নয়। কুরআন নাযিলের যুগ থেকেই তা চলে আসছে। আর ইসলামের প্রথম যুগে, বিশেষতখাইরুল কুরূনে (সাহাবা-তাবেয়ীন যুগে) তা হয়েছে সম্পূর্ণ নববী তরীকায়। এজন্য কুরআনের কোনো আয়াত বা পরিভাষার এমন কোন ব্যাখ্যা যদি কেউ করে , যা ইসলামরে কোন মুতাওয়ারছ ও খাইরুল কুরূন থেকে চলেআসা আকীদা কিংবা ইজমায়ী ও সর্বসম্মত বিধানের পরিপন্থী তাহলে বুঝতে হবে, লোকটি হয় নিজেই বিভ্রান্তির শিকার কিংবা পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে লিপ্ত।
৭. ইয়াকীন রাখুন যে, কুরআন হল আসমানী ফরমান ও ইলাহী – নসীহতনামা, আহকামুল হাকিমীনের আইন-কানূন ও তাঁর দেওয়া বিধান শরীয়ত। কুরআন হল আসমানী ওহীর শাশ্বত, চিরন্তন ও সুসংরক্ষিত সূত্র। কুরআন হল নূর ও জ্যোতি এবং শিফা ও উপশম। কুরআন হল সত্য-মিথ্যা,ন্যায় – অন্যায় এবং আলো – অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নিরুপনকারী। হেদায়েত ও গোমরাহি এবং স্ন্নুত ও বিদআতের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্যরেখা। কুরআন হল মাওলার যিকর ও স্মরণের সর্বোত্তম উপায়। যে আল্লাহকে ভালবাসে কুরআন তার প্রেম-যন্ত্রণার উপশম, যে আল্লাহকে পেতে চায় কুরআন তার সান্নিধ্য-পিপাসার ‘আবে যমযম।
কুরআন কি শুধু জ্ঞানের সূত্র? কেবল জ্ঞানার্জনের জন্যই কি আপনার কুরআন -অধ্যয়ন? বরং কুরআনের যতগুলো গুণ কুরআনে লেখা আছে সবগুলোকে চিন্তায় হাজির রাখুন এবং সে হিসেবেই কুরআনের সাথে আস্থা ও সমর্পণের সম্পর্ক গড়–ন।
কুরআনের জ্যোতিতে শুধু চিন্তা ও মস্তিস্ক নয় , কর্ম ও হৃদয়কে ও উদ্ভাসিত করুন। আপনার সর্বসত্তা ঐ আদর্শ-মানবের অনুকরণে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন, যাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং যাার চেয়ে কুরআনের সাথে অধিক অন্তরঙ্গও কুরআনের প্রতি অধিক সমর্পিত আর কেউ নেই।
৮. বিশ্বাস রাখুন যে, কুরআনের সাথে যুক্ত হতে পারা মানব-সন্তানের পরম সৌভাগ্য এবং কুরআনকে শিক্ষক ও রাহনুমা এবং বিচারক ও সিদ্ধান্তদাতা বলে গ্রহণ করতে পারা ব্যক্তি ও সমাজের চূড়ান্ত সফলতা। সুতরাং এই মহাসৌভাগ্য কিছুমাত্র অর্জিত হলেও আপনার হৃদয় যেন আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং যবান আল্লাহর শোকরে তরতাজা হয়।
৯. কুরআনের নূর ও হেদায়েত থেকে বঞ্চিতকারী সকল দোষ ও দুর্বলতা পরিহার করুন। বিশেষত অহঙ্কার ,বিবাদ-বিসংবাদ, দুনিয়ার মোহ ও আখেরাত-বিস্মৃতির মতো ব্যাধি থেকে দিলদেমাগ ও আচরণ ও উচ্চারণকে পবিত্র করুন।
১০. কুরআনের সঠিক মর্ম অনুধাবনে সহায়ক সকলগুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের চেষ্টা করুন। বিশেষত সত্যিকারের অন্বেষণ, শ্রবণ ও সমর্পণ, গাইবের প্রতি ঈমান, তিলাওয়াত ও তাদাব্বুর (চিন্তা-ভাবনা) , আল্লাহর ভয়, তাকওয়া ও তহারাত দ্বারা কুরআনের জ্যোতি লাভের চেষ্টা করুন।
কিছু উসূল ও নিয়মকানূন
১. সবার আগে সহীহ -শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে শিখুন । এটি খুবই জরুরি। কিছু সূরাও মুখস্থ করুন। ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ,যরূরিয়াতে দ্বীন বা দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়াদি এবং সার্বক্ষণিকফরয আমলসমূহের জ্ঞান অর্জন করুন। এগুলো যেহেতু কুরআন মজীদের বিধান ও আহকাম তাই এগুলো যখন জানছেন তখন আপনি কুরআনের ইলমই হাসিল করছেন।
২. কোন তরজমা বা তাফসীর পাঠ করবেন তা আলিমের পরামর্শক্রমে নিবাচন করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখুন সকল দ্বীনদার ব্যক্তি মাওলানা নন। আর সকল মাওলানা আলেম নন।
পরামর্শ না করলে এমন কারো তরজমা বা তাফসীর পাঠের আশঙ্কা থাকে, যে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদার লোক নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এ জাতীয় লোকের ইচ্ছায় -অনিচ্ছায় তরজমা ও তাফসীরের স্বীকৃত মূলনীতি লঙ্ঘন করে থাকেন। তাছাড়া লেখকের রুচিও প্রবণতা এবং চিন্তা ও চরিত্র পাঠককে কিছু না কিছু পরিমাণে প্রভাবিত করেই থাকে। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা খুবই জরুরী।
৩. তরজমা ও তাফসীর পাঠের ক্ষেত্রেও সম্পূর্ন ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই কোনো আলেমের কাছে অল্প অল্প করে তরজমা ও তাফসীর পাঠ করুন। কারো মনে হতে পারে,তরজমা ও তাফসীর যখন মাতৃভাষায় করা আছে তখন আলেমের কাছে পড়ার আর প্রয়োজন নেই। এই ধারণাটি ভুল এবং একাধিক কারনে ভুল। সংক্ষেপে এটুকু কথা সবাই মনে রাখতে পারেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কুরআন শেখার আদেশ করেছেন। তাই আমরা যেমন সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত উস্তাদের কাছে শিখি তেমনি কুরআনের অর্থ ও মর্মও উস্তাদের কাছেই শিখতে হবে । কুরআনের শব্দ উস্তাদের কাছে শিখবে আর অর্থ ও মর্ম শিখবে নিজে নিজে এমন কথাতো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সাহাবায়ে কেরাম, কুরআনের ভাষাই ছিল যাদের মাতৃভাষা, তারা তোকুরআনের মর্ম ও ব্যাখ্যা এবং কুরআনী বিধানের প্রায়োগিক রূপ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকেই শিখেছিলেন। এরপর তাবেয়ীন ও তাবেতাবেয়ীনও উস্তাদের কাছ থেকেই শিখেছিলেন। তাহলে কুরআনের ভাষা যাদের মাতৃভাষা নয় তারা কিভাবে উস্তাদথেকে বে-নিয়ায হবে? বিভিন্ন ভাষায় আলেমগণ যে তরজমা ও তাফসীর লিখেছেন তা এ জন্য লেখেননি যে, যার যেভাবে ইচ্ছা পাঠ করবে: বরং সঠিক পদ্ধতিতে পাঠ করার জন্যই ঐসব গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনেক আলেম তা স্পষ্ট ভাষায় বলেও গেছেন।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহ) এর পুত্র হযরত আব্দুল কাদের দেহলভী ( ১১৬৭হি:-১২৩০হি)“ মুযিহুল কুরআন এর ভূমিকায় বলেছেন:-
“আর যদিও ( উর্দু তরমাজার দ্বারা) কুরআনের অর্থ বোঝা সহজ হয়েছে তবুও উস্তাদের সনদ প্রয়োজন। কারণ একে তো সনদ ছাড়া কুরআনের মর্ম গ্রহনযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত পূর্বাপর মিলিয়ে সঠিক অর্থ বোঝা এবং ভুল ও বিছিন্ন অর্থ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকা উস্তাদের সহায়তা ছাড়া হয় না। কুরআনের ভাষা আরবী হওয়ার পর তো আরবদের উস্তাদের প্রয়োজন হয়েছে”।
একই কথা কিছুটা বিস্তারিতভাবে বলেছেন শায়খুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমূদহাসান রাহ: ( ১২৬৮হি: ১৩৩৯হি:) তাঁর কুরআন তরজমার ভূমিকায়।
হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রাহ; এর কাছে এক ব্যক্তি একটি দীর্ঘ প্রশ্ন লিখেছিলেন এবং দলীল-প্রমাণের সাথে এই প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে , ছেলে-মেয়েদেরকে (এবং বিশেষভাবে মযদুর ও শ্রমজীবী পরিবারের ছেলেমেয়েদেরকে) কুরআন তিলাওয়াত ও মাতৃভাষার শিক্ষা গ্রহণের পর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কোন আলেমের কুরআন তরজমা পড়িয়ে দেওয়া উচিত, আরবী ভাষা ও নাহব-ছরফের জ্ঞান অর্জনের উপর তা মওকুফ রাখা ঠিক নয়।
হযরত (রাহ) জবাবে যা লিখেছেন তার সারকথা এই যে, কুরআন মজীদের শিক্ষা সকল শ্রেণী-পেশার ও সকলবয়সের নারী -পুরুষের জন্য । এ কথা তরজমা শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে শরীয়তের নীতিমালা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তরমজার পঠন পাঠন তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন নিম্নোক্ত শর্তগুলি পালন করা হয়:-
১. শিক্ষককে বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ আলেম হতে হবে,যাতে তরজমা বোঝানোও তাফসীরের বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শ্রোতার বুঝ-বুদ্ধির দিকে লক্ষ রাখতে পারেন।
২. ছাত্রকে অনুগত ও মেধাসম্পন্ন হতে হবে। নিজের বুঝ-বুদ্ধি সম্পর্কে অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবেনা । অন্যথায় তাফসীর ভুল বুঝতে পারে কিংবা তাফসীর বির রায়ের দুঃসাহস করতে পারে।
৩. কোনো বিষয় যদি ছাত্রের ধারণ শক্তির তুলনায় সুক্ষ্ম ও জটিল হয় তাহলে শিক্ষক তাকে উপদেশ দিবেন যে,“ এই অংশের তরজমা শুধু বরকতের জন্য পড় বা আপাতত এটুকুই মনে রাখ। এর চেয়ে গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করো না”। ছাত্রও এই উপদেশ মান্য করবে। এরপর যখন সে তাফসীর বোঝার যোগ্য হবে, তা অধ্যায়নের দ্বারা হোক, জ্ঞান বৃদ্ধির কারণে হোক কিংবা আলেমগণের সাহচর্যের দ্বারা হোক তখন কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে ব্যাখ্যা সহ তরজমা পাঠ করবে। প্রাথমিক পাঠের উপর সমাপ্ত করবে না।
হযরত থানবী রাহ: আরো লেখেন,একইভাবে যারা (শিক্ষিত বয়স্ক ব্যক্তিবর্গ ) উস্তাদ ছাড়া তরজমা ও তাফসীর অধ্যয়ন করেন তাঁদের জন্যও অনেক বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ এটাই। তবে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না গেলে তারা পরামর্শ দেন যে, প্রথমে দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করবে,যাতে কুরআনের বিষয়বস্তুর সাথে পরিচিতি গড়ে উঠে। এরপর অধ্যয়নের সময় কোথাও সামান্যতম খটকা হলেও নিজে নিজে চিন্তা না করে জায়গাটি চিহ্নিত করে রাখবে এবং কোন বিজ্ঞ আলেমের সাক্ষাত পেলেতারকাছ থেকে সমাধান নিবে। ( ইমদাদুল ফাতওয়া খন্ড:৪ পৃ: ৭৯-৮৫)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা কুরআন মুখস্ত করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ করে দিয়েছে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। কুরআনের শব্দ তো আল্লাহ তাআলা অর্থের চেয়েও সহজ করে দিয়েছেন। এর পরও সহীহ শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা এবং হিফজ করার জন্য উস্তাদের প্রয়োজন হয় কেন? তাহলে অর্থ শেখার ক্ষেত্রে উস্তাদের প্রয়োজন অস্বীকার করার কী অবকাশ থাকতে পারে?
৪. কুরআন মজীদের সাথে শুধু তরজমা ও তাফসীর ভিত্তিক পরোক্ষ সম্পর্ক নয়, প্রত্যক্ষ সম্পর্ক তৈরিরও চেষ্টা করুন। এর প্রথম উপায় তিলাওয়াত। দৈনিক তারতীলের সাথে এবং অর্থ জানা থাকলে তারতীল ও তাদাব্বুরের সাথে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবশ্যই তিলাওয়াত করুন। দ্বিতীয় উপায় এই যে, কুরআনের ভাষা অন্তত এটুকু শেখার চেষ্টা করুন যে, আয়াতের অর্থ বোঝার সাথে সাথে কোন শব্দের অর্থ কী এবং কোন বাক্যের বিষয়বস্তু কী তাও যেন বুঝে আসে। কুরআনের ভাষার সাথে যদি এটুকু সম্পর্কও হয়ে যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ তিলাওয়াতের স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, নামাযে ইমামের তিলাওয়াত শুনতে আনন্দ লাগবে এবং কুরআনের মিষ্টতা আগের চেয়ে অনেক বেশী অনুভত হবে। কুরআনের ভাষার এই প্রাথমিক ইলমের জন্য হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা:বা: এর আতত্বরীক ইলাল আরাবিয়্যা ( এসো আরবী শিখি) এর তিনটি খন্ড ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। এর সাথে যদি আততামরীনুল কিতাবী আলাত ত্বরীক ইলাল আরাবিয়্যা’ অনুশীলনের সাথে সমাপ্ত করা যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা । এর পর তাঁর কিতাব আতত্বরীক ইলাল কুরআনিল কারীম”( এসো কুরআন শিখি) এর সবক নেওয়া যায়।
হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব দামাতবারাকাতুহুমও দীর্ঘদিন যাবত আলইবতিদা মাআল মুবতাদিঈন’ (খবধৎহরম ঃযব ষধহমঁধমব ড়ভ যড়ষু য়ঁৎধহ) ( খখঐছ) নামে কুরআনের ভাষা শিক্ষার একটি প্রাথমিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। বুয়েট বাইতুস সালাম মসজিদে প্রতি মঙ্গলবার বাদ ঈশা তার একটি দরস হয়ে থাকে আলহামদুলিল্লাহ এর দ্বারা অনেক ফায়েদা হচ্ছে। হযরত প্রফেসর সাহেব সব সময় সাবধান করে থাকেন যে,এটি একটি প্রাথমিক মেহনত এর উদ্দেশ্য শুধু কুরআনের শব্দাবলির প্রাথমিক অর্থ জ্ঞান অর্জন করা, যাতে ভাষাগত দূরত্ব হ্রাস পায়। এটুকু শিখে না একথা ভাবার সুযোগ আছে যে,আমরা আরবী ভাষা শিখে ফেলেছি, আর না এই চিন্তার বিন্দুমাত্র অবকাশ যে, নাউযুবিল্লাহ আমরা তাফসীরুল কুরআনের উপযুক্ত হয়ে গেছি এই সচেতনতা খুবই জরুরি। কুরআনের ভাষা বা কুরআনের তরজমার সাথে কিছুটা জানাশোনা ও পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে যারা আরবী ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করবেন তাদের একথা সব সময় মনে রাখা উচিত। অন্যথায় যদি উজব ও অহঙ্কার সৃষ্টি হয় এবং এই সামান্য জেনে কেউ যদি আত্মবিস্মৃতির শিকার হয়ে যায় তাহলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি!
উপরোক্ত ক্ষেত্রে কুরআন মাজীদের এমন কোন তরজমা ,যাতে শব্দে শব্দে অনুবাদকরা হয়েছে কিংবা লিসানুল কুরআন ও লুগাতুল কুরআন বিষয়ে বাংলা বা ইংরেজি কোন বইয়ের সহায়তা নেওয়া যায়। তবে গ্রন্থ নির্বাচনে অবশ্যই কোন বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. সবশেষে যে কথাটি আরজ করতেচাই তা এই যে, কুরআনমাজীদের অর্থ শেখা অনেক বড়নেক আমল। তাই তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ন্নুততরীকায় । অর্থাৎ এই কাজেও ইখলাস ও ইহতিসাব এবং ইহসান ও ইত্তেবায়ে সুন্নত লাগবে।আর চেষ্টা করতে হবে, কুরআন মাজীদের শিক্ষা গ্রন্থের পাতা থেকে গ্রহণ করার পাশাপাশি জীবনের পাতা থেকেও গ্রহণ করার, যেমনটি সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাহলে ইলমের নূরের সাথে সাথে ঈমান ও আমলের নূরও হাসিল হতে থাকবে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদীসও আমাদের সামনে থাকা চাই-
من طلب العلم ليجارى به العلماء ، وليماري به السفهاء او يصرف به و جوه الناس اليه ادخله الله النار
যে আলেমদের সাথে (আলেম নামে) গর্ব করার জন্য , কিংবা জাহিলদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য অথবা মানুষের মনোযোগ নিজের দিকে আকর্ষিত করার জন্য ইলম অন্বেষণ করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন। ( জামে তিরমিযী:২৬৫৪)
কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালার কালাম বেশী বেশী তেলাওয়াত করতে হবে। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তেলাওয়াত করতেন, সাহাবায়ে কেরামকে শোনাতেন এবং নিজেও সাহাবায়ে কেরামের তেলাওয়াত শুনতেন। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত কা’ব রাযি. কে তেলাওয়াত করে শোনাতে বললেন। হযরত কা’ব রাযি. বললেন: হুযুর! আপনার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে, আর আমি আপনাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে তোমার তেলাওয়াত শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। কা’ব রাযি. বললেন হুযুর! আল্লাাহ কি আমার নাম নিয়ে বলেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ! আল¬াহ তোমার নাম নিয়ে বলেছেন। তখন কা’ব রাযি. খুশিতে কেঁদে ফেললেন। এবং তেলাওয়াত শুরু করলেন। (সুরা নিসা: ৪১ আয়াত )فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدا আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করলেন তখন রাসূল সাল্ল¬াল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম কেঁদে ফেললেন এবং তাকে থেমে যেতে বললেন। কেমন ছিলো আল্লাহর ভয়!
মুহাব্বতের সাথে তেলাওয়াত করতে হবে। এক সাহাবী প্রতি রাকাতে সুরা ইনশিরাহ বা সুরা ইখলাস পড়তেন। অন্য সুরা পড়ার পর সুরা ইখলাস পড়তেনই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি এত বেশী পরিমাণে সুরা ইখলাস পড় কেন? সাহাবী আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই সুরাটা আমার বড় ভালো লাগে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এই সুরার মুহাব্বত তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! কুরআনের একটি সুরার সাথে মুহাব্বত থাকার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাই পুরা কুরআনের প্রতি তো মহব্বত রাখবোই, সাথে সাথে কুরআনের একটি অংশের প্রতি বিশেষ মুহব্বতের সম্পর্ক রাখবো। রাখা উচিৎ।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত যিমাম ইবনে ছা’লাবা রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন, যার বদৌলতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়। সাথে আরো কয়েকটি আমলের কথা বললেন। তখন সাহাবী বললেন والله لا أزيد علي هذا ولا أنقص অর্থাৎ আল্লাহর শপথ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যা বলেছেন তারচে বাড়িয়েও কিছু করবো না এবং কমও করবো না। একথা বলে তিনি চলে গেলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মজলিসে বসা সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা যদি দুনিয়ার বুকে কোন জান্নাতী লোক দেখতে চাও তাহলে তাকে দেখে নাও। সুবহানাল্লাহ!
মুহাদ্দীসগণ এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। আমার মত হলো এই সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপদেশ পরিপূর্ণ পালন করার সংকল্প করার জন্যই তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কথা বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার উপর সাহাবায়ে কেরামের এমনই অগাধ বিশ্বাস ছিল, ইয়াকিন ছিলো।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফ উত্তম ও সুন্দর আওয়াজে তেলাওয়াত করতে বলেছেন। হযরত কা’ব রাযি. সবচে সুন্দর করে তেলাওয়াত করতেন। তাই আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার তেলাওয়াত শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। সুন্দর করে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। খতমের নিয়তে কুরআন তেলাওয়াত করলে তাড়াতাড়ি পড়া হয়। কি পড়া হয় কোন খোঁজ খবর থাকে না। তাই মুহাব্বতের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহর সাথে মুহাব্বত রেখে তেলাওয়াত কর। আর রূহানিয়াত ছাড়া শুধু মাসআলা মুখস্ত করায় কোন ফায়দা নেই। তাই রূহানিয়াত সৃষ্টির জন্য ফিকির করতে হবে।
তেলাওয়াত সুন্দর করার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য কণ্ঠ সুন্দর হতে হবে এটা জরুরী নয়। বরং আল্লাহ তায়ালার মুহাব্বত নিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করলে তেলাওয়াত এমনিতেই সুন্দর হয়ে যাবে। সুদাইসীকে চিনো? তার তেলাওয়াত শুনেছো কখনো? তার তেলাওয়াতে কি খুব সুর ব্যবহার করে? কিন্তু তার পরেও নামাজ পড়ালে বাইতুল্লায় আজীব অবস্থা সৃষ্টি হয়। মানুষ যে যেখানেই থাকুক, ছুটে আসে বাইতুল্লাহর দিকে। কারণ কি? কারণ হলো তার তেলাওয়াতে আল্লাহর মুহাব্বত আছে। আল্লাহর মুহাব্বত নিয়ে তেলাওয়াত করেন বলে সবার কাছে তার তেলাওয়াত ভালো লাগে।
এছাড়া ও তার মাঝে অনেক মাহাসিন আছে। আমি তার অফিসে গিয়েছিলাম দেখা করতে। তিনি ছিলেন না, তাই দেখা হয়নি। এক সূত্রে শুনেছি তার কাছে এক মহিলা ফোন করে স্বপ্নের তাবীর জিজ্ঞাসা করলেন। মহিলা স্বপ্নে দেখেছেন যে, এক ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে বাইতল্লাহ তাওয়াফ করছে। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ নবম হিজরীতেই উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঐ বছর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও আলী রাযি.কে আমীর বানিয়ে দুটি নির্দেশ দিয়ে হজ্ব পালনের জন্য পাঠান। একটি হলো মক্কায় কোন মুশরিক থাকতে পারবে না। দ্বিতীয়টি হলো আগামী বচর থেকে আর কেউ উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করতে পারবে না। যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগামী বছর হজ্ব করবেন তাই যেন তখন কেউ উলঙ্গ হয়ে করতে না পারে। তাই এই নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর মহিলার স্বপ্নের তাবীরে সুদাইসী সাহেব বললেন “আল্লাহ তায়ালা ঐ লোককে মাফ করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! স্বপ্নের বিভিন্ন ধরণের তাবীর হয়। এই স্বপ্নের তাবীর এভাবে করা হয়েছে কারণ উলঙ্গ হয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা তো বৈধ নয়। আর উলঙ্গ থাকে শিশুরা। আর তারা তো নিষ্পাপ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি এই তাবীর করেছেন। তখন মহিলা বললেন সেই লোকটি হলেন আপনি।
তাই অন্তরে আল্লাহর মুহাব্বত সৃষ্টি করতে হবে। আর তা হবে বেশী বেশী কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে। হুসনে তেলওয়াত আল্লাহর মানশা। তাই সুন্দরভাবে তাজবীদেও দিকে খেয়াল করে কুরআন তেলাওয়াত করবে।
তোমাদেরকে কয়েকটা আমলের কথা বলি। সকলে আমল করার চেষ্টা করবে। আমলগুলো করলে অনেক ফায়দা পাবে। ১) আদাবে যিন্দেগী। অর্থৎ জীবনে চলার পথে যতো আদাব আছে সকলেই ঐ আদবগুলোর একটি কওে আদবের উপর নিয়মিত আমল করবে। মনে করো আজকে নিয়ত করলে আজ থেকে সবাইকে সালাম দিবো। আরেকদিন আরেকটি আদবের ব্যাপারে নিয়ত করবে। এভাবে পরিকল্পনা করে আমল করবে।
২) রাতে এশার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট যার তেলাওয়াত সুন্দও তার কাছে মশক করবে। তেলাওয়াত সুন্দর করার জন্য চেষ্ট করবে।
৩) যে আয়াত মশক করবে সেই আয়াতের তরজমা শিখবে। এভাবে আমল করলে আমল বাড়বে। সাথে সাথে এলেমও বাড়বে।
কুরআনের বা কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত সমূহ
১. দিলের জং ( গুনাহের কালিমা) মুছে যায়।
( শুআবুল ঈমান:৩ ,৩৯, হা:নং ১৮৫৯)
২. আল্লাহ তাআলার মহাব্বত বৃদ্ধি পায়্ ।
(সূরা আনফাল, ২/শুআবুল ইমান ৩/ ৩৯৪, হা: নং ১৮৬৩)
৩. প্রত্যেক হরফে কমপক্ষে ১০টি করে নেকী পাওয়া যায়, না বুঝে নড়লেও । (তিরমিযী, হা:নং ৩১৩৫,মুস্তাদরাক, হা:নং ২০৪০)
৪. কুরআন তেলাওয়াত কারীগন আল্লাহর ঘনিষ্ট লোক।
(মুসনাদে আহমদ হা:নং ১২২৯২)
৫. কুরআন তেলাওয়াত কারীগণ দ্বারা ফেরেশ্তাদের শ্রেণীভূক্তহওয়া যায়।
(সহীহ মুসলিম হা:নং ৭৯৮)
৬. কষ্ট সাধ্যকরে কুরআন পাঠকারীর জন্য দু’টি পুরস্কারের প্রতিশ্র“তি রয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: নং: ৭৯৮)
৭. জান্নাতের উচ্চ স্তর পাওয়া যায়।
(মুসনাদে আহমদ হা: ৬৭৯৯)
৮. জান্নাতে সম্মানের টুপি পারাবে।
( আল মুসতাদরাক লিল হাকাম:২০৮১)
৯. তেলাওয়াত কারীর পিতা-মাতা নূরের টুপি লাভ করবে।
(সুনানে আবু দাউদ হা: ১৪৫৩)
১০. কুরআন তেলাওয়াত কারীর আশপাশ বরকত ময় ও নূরময় হয়ে ওঠবে। (সুনানে তিরমীযী হা: ৩০৯৭)
১১. কুরআন জাতির মর্যাদাকে উন্নত করে।
(সহীহ মুসলিম হা: ৮১৭)
১২. কুরআন শিক্ষা গ্রহণকারী ওশিক্ষা প্রদানকারী সর্বোত্তম ব্যক্তি।
(সহীহ বুখারী হা: ৫০২৭)
১৩. কুরআন নিয়ে মশগুল থাকার কারনে যিকির ও দোয়া করার জন্য অবসর না পাওয়া বক্তিকে দোয়া কারীদের থেকে ও বেশী দেওয়া হয়।
( সুনানে তিরমিযী হা: ৩১৫৩)
১৪. কুরআন তেলাওয়াতের যোগ্যতা একটি ইর্ষানীয় বিষয়।
(সহীহ বুখারী হা: ৫০২৫)
১৫. কুরআনশরীফকে কোন চামড়ার ভিতর রাখিয়া আগুনে ফেলিয়াদেওয়া হয়, তাহলে তা পুড়িবেনা।
১৬. কোন দল যদি কোন ঘরে আল্লাহর পাকের কুরআন তেলাওয়াত করাতে থাকে। তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহর রহমত তাদেরঢেকে নেয়। রহমতের ফেরেশ্তারা তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলে আর আল্লাহ পাক ফেরেশ্তাদের মজলিসে তাদেরনিয়ে আলোচনা করেন। ( সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫৫)
জাহেরী আদব
১. গভীর শ্রদ্ধা ও এহতেরামের সহিত ওযুসহ কেবলামুখী হইয়া বসিবে।
২. পড়ার সময় তাড়াতাড়ি না করিয়া তারতীল ও তাজবীদের সহিত পড়িবে।
৩. উপরে উল্লেখিত নিয়মে রহমত ও আজাবের আয়াতসমূহের হক আাদায় করিবে।
৪. ভান করিয়া হইলেও কান্নার চেষ্টা করিবে।
৫. রিয়া – লোক দেখানেরর ভয় হইলে বা অন্য কোন মুসলমানের কষ্ট বা অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা হইলে চুপেচুপে পড়িবে,নতুবা জোরে পড়িবে।
৬. মিষ্ট স্বরে পড়িবে। কেননা কালামেপাক মিষ্ট স্বরে পড়িবার জন্য বহু হাদীসে তাকীদ আসিয়াছে।
৭. কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করে নেওয়া উত্তম।
৮. ভালো পোশাক পরিধানকরে খুশবু মেখে এবং পরিপাটি হয়ে তেলাওয়াতে বস্ া।
৯. তেলাওয়াতেরসময় টেক বা হেলান না দেওয়া।
১০. কুরআন তেলাওয়াতের স্থান পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হওয়া উ্ত্তম।
১১. দরদ এবং ওয়াজদ (মহব্বত) এর স্বরে তেলাওয়াত করা উত্তম।
১২. কুরআন শরীফ রেহাল /বালিশ/ প্রভৃতি উচু কিছুর রেখে তেলাওয়াত করবে।
বাতেনী আদব
১. কালামে পাকের আজমত ও মর্যাদা অন্তরে রাখিবে যে, ইহা কত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কালাম্
২. যে মাহান আল্লাহ তায়ালার এই কালাম, তাহার উচ্চ শান , মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে রাখিবে।
৩. অন্তরকে ওয়াসওয়াসা ও বাজে খেয়াল হইতে পবিত্র রাখিবে।
৪. অর্থের প্রতি চিন্তা করিবে এবং স্বাদ লইয়া পড়িবে।
হুজুর সা: একবার সাররাত্র এই পড়িয়া কাটাইয়া দিয়েছেন্ إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থ হে আল্লাহ আপনি যদি তাহাদিগকে শাস্তি দেন তবে তাহার তো আপনারই বান্দা। আর যদি মাফ করিয়া দেন তবে আপনি পরাক্রমশালী ও হিকমতওয়ালা। ( সূরা: মায়েদাহ. ১১৮)
হযরত সাইদ ইবনে জুবায়ের (রাযি ) একরাত্রে এই আয়াত পড়িতে পড়িতে সকাল করিয়াছেন। وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ অর্থ হে অপরাধীদল আজ (কিয়ামতের দিন) তোমরা অনুগত বান্দাদের হইতে পৃথক হইয়া যাও। (সূরা ইয়াসীন: ৫৯)
৫. যখন যে আয়াত তেলাওয়াত করিবে তখন অন্তরকে সেই আয়াতের অধীন ও অনুগত করিয়া লইব্।ে যেমন , রহমতের আয়াত তেলাওয়াত করিবার সময় অন্তর আনন্দে ভরিয়া উঠিব্ েআজাবের আয়াত তেলাওয়াত করিবার সময় অন্তর আনন্দে ভরিয়া উঠিব্ েআজাবের আয়াত তেলাওয়াত করিবার সময় অন্তর কাঁপিয়া উঠিবে।
৬. উভয় কানকে এমন নিবিষ্ট করিয়া রাখিবে যেন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং কথা বলিতেছেন আর তেলাওয়াতকারী নিজ কানে শুনিতেছেন্ আল্লাহ তায়ালা দয়া করিয়া আমাকে ও আপনাদিগকে এই আদবসমূহের প্রতি লক্ষ রাখিয়া তেলাওয়াত করার তওফীকত দান করুন। আমনি।
৭. তিলাওয়াতকারী মনে মনে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তাআলা হুকুম দিচ্ছেন পড়, দেখি আমার কালাম কত সুন্দর করে পড়তে পার।
৮. আর শ্রবণকারীরা অন্তরে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম তিলাওয়াত করা হচ্ছে,সুতরাং অত্যন্ত ভক্তি, মহব্বত ও মনযোগসহ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শ্রবণ করা অপরিহার্য। (সূরা: আ’রাফ :২০৪)
৯. খুশু -খুযু ও বিনয়ের সাথে তেলাওয়াত করা উত্তম্
১০. আমলের নিয়তে তেলাওয়াত করা।
কুরআনের নূর হাসিল করার উপকরণ সমুহ:
১. মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং তার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা,সম্মান প্রদর্শন করা ও তার ভালো বাসা অন্তরে জাগ্রত করা: কারন বান্দার মাঝে যখন আল্লাহর ভক্তিও ভালোবাসা জম্মানে তখন তার মাঝে নিজের অজান্তেই কুরআনের প্রতিও ভালোবাসা জন্মাবে এবং কুরআনের নূরে আলোকিত হওয়ার পথ সহজ হয়ে যাবে। বিখ্যাত বুযুর্গ সাহল বিন আব্দুল্লাহআততসতুরী (রা:) বলেন:
حب الله عزوجل حب القران و حب رسول الله صرالعمل سنته ٤١
ইকরিমা বিন আবু জাহেল (রা:) যখন কুরআন খুলতেন তখন তিনি মূছেগিয়ে বলতেন: এই কুরআন আমার প্রভুর কালাম এই কুরআন আমার প্রভুর কালাম। বস্তুত আল্লাহর মুহাব্বত থাকার কারণে কুরআন খোলার পর তিনি এতটাই প্রভাবান্বিত হতেন।
২. অন্তেরের সজীবতা , নিষ্কুলতা ও উপস্থিতি:
আল্লাহর ঈমানে সজীব দুনিয়ার প্রবত্তি থেকে নিষ্কুলুষ ও দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত আল্লাহর কালামের শিক্ষা গ্রহনের জন্য ুউপস্থিতও প্রস্তুত হৃদয়াবান ব্যক্তিই শুধু মাত্র কুরআনের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। কুরআনে কারীমে মূলত এধরনের হৃদয়বান্বিত হতে পারে। কুরআনে কারীমে হৃদয়বান ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ ও শিক্ষা, উপদেশ গ্রহনের যোগ্যতার স্বীকৃতি এসেছে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিমা (রা:)
অনেক সুন্দর এবং দরকারি পোষ্ট । আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ ভাবে কোরআন তেলাওয়াতের তাওফীক দাও। এবং লেখক মহোদয়কে আরো এমন উপকারী পোষ্ট দেওয়ার তাওফীক দাও। (আমীন)
দুঃখিত লেখক মহোদয় ”কে” হবে। অনাকাক্ষিত ভুলে জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।