মৃত ব্যক্তির যাকাতের বিধান ও যাকাত আদায় নাকরার শাস্থি।
মোঃ আতিকুর রহমান
সরকারী চাকুরীজীবি
কিশোরগঞ্জ।
সম্মানিত মুফতী সাহেব
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুলিল্লাহ
আমার ৪ টি প্রশ্ন ছিল। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যাকাত আদায় প্রসঙ্গে।
১। আমার মামা গত কিছু দিনপূর্বে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জীবদ্দশায়আমার জানামতে
নেসাব পরিমাণ মাল থাকা স্বত্ত্বেও তিনি যাকাত আদায় করেন নি। তার রেখে যাওয়া দুই সন্তানও মরহুমের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য জানেননা। এমতাবস্থায় তার উত্তরাধীকারীগণ কিভাবে মরহুমের
অনাদায়ী যাকাত আদায় করবেন ?দীর্ঘদিনের অনাদায়ী যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে ?
২। উত্তরাধীরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মালের যাকাত এখন থেকে কিভাবে আদায় করবে? এরদায়িত্ব কার উপর বর্তায় ? মরহুমের স্ত্রী না ছেলেদের মধ্যে যে বড় না দুইভায়ের উপর ?
৩। মরহুমের স্ত্রীর ব্যবহৃত অলংকারাদিরও কি যাকাত আদায় করতে হবে ? করতে হলেকিভাবে?
৪। যাকাত আদায় না রেখে মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যুর পর আজাব হয় কি ?
মেহেরবাণী করে প্রসঙ্গ বিবেচনাপূর্বক জরুরী ভিত্তিতে শরীঈ উত্তর প্রদানে উপকৃত করবেন।
আল্লাহ আপনাদের আরো ইসলামের খেদমত করার তাওফীক দান করুন। আমিন।
بسم الله الرحمن الرحيم
وعليكم السلام و رحمة الله و بركاته
উত্তরঃ(১,২,৪)যাকাত আদায় না করলে ভয়াবহ শাস্থিপেতে হবে।আলকুরআনুল কারিমে যাকাত পরিত্যাগকারীর ভয়ঙ্কর আজাবের হুশিয়ারী দিয়ে ইরশাদ হচ্ছে,
وَاَلَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ* (التوبة (৩৪-৩৫
অর্থঃ “আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হবে এবং উহা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যাহা পূঞ্জীভূত করেছিলে তাহা আস্বাদন কর ।” (সুরা তওবা-৩৪-৩৫)
হাদীস শরিফেও ভয়াবহ শাস্থির কথা এসেছেঃ
رواه الامام البخاري في صحيحه (رقم 1338) عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من آتاه الله مالا فلم يؤدي زكاته مثل له يوم القيامة شجاعا أقرع له زبيبتان يطوقه يوم القيامة ثم يأخذ بلهزميه يعني شدقيه ثم يقول أنا مالك أنا كنزك ثم تلا { لا يحسبن الذين يبخلون } . الآية )
হযরাত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেনঃ যারা যাকাত আদায় করেনা, কেয়ামতের দিন তাদের সম্পদ ভয়ঙ্কর বিষধর সাপের আকৃতি ধারন করবে এবং তার চেয়াল পেঁচিয়ে ধরবে, আর দংশন করে করে বলবে, আমি তোমার সম্পদ ! আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ ! তারপর তিনি
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ:- سورة آل عمران -180,
আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।(সহীহ বুখারী,হাদিস নং ১৩৩৮)
এছাড়াও যাকাত আদায় নাকরার আরো ভয়াবহ শাস্থির কথা এসেছে, আল্লাহ তাআলা আমাদের আজাব থেকে পরিত্রান দান করুন। আমীন।
- যাকাত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত,যা ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে অধিকাংশ স্থানে নামাজ কায়েমের সাথে সাথে যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এটাইতো যথেষ্ট।যাকাত আদায় করা ফরজ হবার সাথে আথে তা দিয়ে দেয়া অত্যান্ত জরুরী। এতে গড়িমসি করা কছুতেই উচিৎ নয়। যাকাত আদায় নাকরে মারা গেলে মারাত্মক গোনাহগার হবে।এর জন্য তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।তাই কোন কারণে নিজ জীবদ্দশায় যাকাত আদায় নাকরে যেতে পারলে অসিয়ত করে যেতে পারে।অসিয়ত করে গেলে ওয়ারিসরা তার পরিত্যক্ত সম্পদের (বন্টনের পূর্বে) একতৃতীয়াংশ থেকে তার যাকাত আদায় করে দিলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিসদের জন্য তা আদায় করা আবশ্যক না।তবে যাকাত না দেয়ার কারণে মৃতব্যক্তিকে ভয়াবহ শাস্থির সম্মুখিন হতে হবে। তাই ভালোবাসার দাবী হল,তাকে কঠোর শাস্থি হতে রক্ষা করার জন্য নিজেদের পক্ষ থেকে তার যাকাত আদায় করে দেয়ার চেষ্টা করা ও তার রুহের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা। আশা করা যায় এতে করে আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিবেন।(কিতাবুল ফাতাওয়া ৩/৩৩৬)
আপনার মামাত ভায়েরা যেহেতু তাদের বাবার সম্পদের সঠিক পরিমান জানেননা তাই তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করে আনুমানিক সম্পদের একটি হিসাব দাড়করিয়ে বিগত বছরের যাকাত প্রতি বছরেরটা শতকরা ২.৫ টাকা হারে আদায় করে দিতে পারেন। (আপকে মাসায়েল-৫/৯৯)
(৪) ব্যবহৃত অলংকার যদি নেসাব পরিমান হয় এবং এর উপর চন্দ্র বর্ষের এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে সেটার উপর যাকাত ফরজ হয়ে যায়।তবে নেসাবটা ঋনমুক্ত হওয়া শর্ত অর্থাৎ কারো কাছে যদি এই পরিমান ঋন থাকে যে ঋন পরিশোধ করলে; নেসাব পরিমান সম্পদ থাকে না, তাহলে যাকাত ফরজ হবেনা। নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি আর রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি ।তবে কারো কাছে যদি অলংকারের সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগদ অর্থ থাকে বা উভয় প্রকারের অলংকারই থাকে এবং সেগুলোর সমষ্টিগত মূল্য স্বর্ণ বা রূপার নেসাবের সমমূল্য হয় তাহলেও যাকাত দিতে হবে।নেসাব পরিমান সম্পদের মালিকের জন্য প্রতি চন্দ্র বছরে শতকরা ২.৫ টাকা হারে যাকাত আদায় করা ফরজ।যদি কোন বছর যাকাত আদায় করা না হয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করে দেয়া উচিত।একাধিক বছরের যাকাত আদায় করা নাহলে তা আদায় করার পদ্ধতি হল, ১ম বছর নেসাব পরিমান যে সম্পদ ছিল তা থেকে ২.৫ পার্সেন্ট যাকাত আদায় করবে। এরপর এই ২.৫ পার্সেন্ট টাকা বাদ দিয়ে পরের বছরের যাকাতের টাকা হিসাব করে ২.৫ পার্সেন্ট যাকাতের টাকা আদায় করবে।এর পরের বছর আবার এই টাকাগুলো বাদ দিয়ে হিসাব করবে।তবে কোন বছরের শেষে যদি কখনো সম্পদ বেড়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেই সম্পদও হিসেবে এনে যাকাত দিতে হবে।(ফাতাওয়া রহিমিয়্যাহ-৭/১৪৭)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে
মাওলানা মুহাম্মাদ আরমান সাদিক
ইফতা বিভাগ
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
সত্যায়ন ও সার্বিক তত্তাবধানে
মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com