আরশের নিচে ছায়া প্রাপ্তি প্রসঙ্গে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
প্রশ্নঃ আমি এক সময় এক বিদেশি লোকের স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম(এখানে বলা দরকার যে,ঐ মহিলাই প্রথমে আমাকে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়)এবং আমি না বুঝে তার শরীরেও হাত দেই ।কিন্তু আমি তার সাথে কখনো সহবাস করিনি ।এখন আমি বুঝতে পারছি যে,ঐ কাজটা আমার উচিত হয়নি এবং আমি ঐ কাজ থেকে ফিরে এসেছি (আল্লাহ তাআলার ভয়ে) আমার জানার বিষয় হলো,আমি কি এখন আরসের নিচে ছায়া পাওয়ার ঐ সাত ব্যক্তির মধ্যে পরি?
بسم الله الرحمن الرحيم
উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভয়ংকর এক গোনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করেছেন, যে ভয় আপনার অন্তরে এসেছে তা সারাজীবন আপনার অন্তরে উজ্জীবিত থাকুক। আমীন। আপনি যে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে,
عن أبي هريرة : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال :﴿ سبعة يظلهم الله يوم القيامة في ظله يوم لا ظل إلا ظله إمام عادل وشاب نشأ في عبادة الله ورجل ذكر الله في خلاء ففاضت عيناه ورجل قلبه معلق في المسجد ورجلان تحابا في الله ورجل دعته امرأة ذات منصب وجمال إلى نفسها فقال إني أخاف الله ورجل تصدق بصدقة فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما صنعت يمينه ﴾ رواه البخاري في صحيحه (رقم :629، 6429)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর(আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না;(তারা হল)ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা),সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়,সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে;যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে,কিন্তু সে বলে,আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে;এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে,তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে;ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’[সহীহ বুখারি, হাদীস নং-৬২৯, ১৩৫৭, ৬১১৪, ৬৪২৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১০৩১,সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং-২৩৯১, সুনানে নাসয়ী হাদীস নং- ৫৩৮০,মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ৯৩৭৩, মুয়াত্তা মালিক , হাদীস নং-৩৫০৫]
এই হাদীসের আলোকে যেটা বুঝা যাচ্ছে, কোন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত রমনীর খারাপ কাজের প্রতি আহবান থেকে আল্লাহ তাআলার ভয়ে ফিরে আসার কারণে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন আরসের নিচে ছায়া দিবেন। এখন আপনি এই শ্রেণীর অন্তরভুক্ত হবেন কিনা এটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। হাদীস শরীফের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি এই এই শ্রেণীর ব্যক্তি আরশের নিচে ছায়া পাবে,কিন্তু কোন ব্যক্তি বিশেষের কথা বলা আমাদের সাদ্ধের বাইরে। এটা কেবল আল্লাহ পাকই ভাল জানেন।
মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এসেছে,
عن عائشة أم المؤمنين قالت دعي رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى جنازة صبي من الأنصار فقلت يا رسول الله طوبى لهذا عصفور من عصافير الجنة لم يعمل السوء ولم يدركه قال أو غير ذلك يا عائشة إن الله خلق للجنة أهلا خلقهم لها وهم في أصلاب آبائهم وخلق للنار أهلا خلقهم لها وهم في أصلاب آبائهم -صحيح مسلم – ( رقم-2662) (4 / 2050(
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক আনসার বলকের জানাযার দাওয়াত করা হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর বড়ই খোশ নসীব। বেহেশতের চড়ুইদের সেও একটি চড়ুই। কেননা সে কোন গুনাহ করেনি বা গোনাহ করার বয়সও পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর বিপরিতটা কি হতে পারেনা আয়েশা? আল্লাহ একদল লোককে তো বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।তারা যখন তাদের পিতাদের ঔরসে ছিল তখনই তাদেরকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। অপরদিকে দোজখের জন্যও একদল লোক সৃষ্টি করেছেন। তারা যখন তাদের পিতাদের ঔরসে ছিল তখনই তাদেরকে দোজখের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭৮,ইফাবা)
এখানে আম্মাজান আয়েশা রা.এক নাবালেগের ব্যপারে জান্নাতি হবার কথা বলেছেন,বাচ্চাদের যেহেতু কোন গোনাহ লেখা হয়না। তাই তিনি ঐ বাচ্চার ক্ষেত্রে এরকম কথা বলেছেন অথচ সে জান্নাতি নাকি জাহান্নামি এটা নির্দিষ্টভাবে তার পক্ষে জানা সম্ভবনা। কে জান্নাতি বা জাহান্নামি এটা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন,মানুষের পক্ষে তা নির্দিষ্ট ভাবে জানা সম্ভবনা; এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এই কথাটাকে সামর্থন করেননি। পরকালে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি কি অবস্থায় থাকবে এটা আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ জানেননা। তিনি না জানালে কারো পক্ষে জানা সম্ভবওনা। সুতরাং আপনার এই আমলের প্রতিদান আল্লাহ কি দিবেন তিনিই ভাল জানেন।
যারা আল্লাহ তাআলার ভয়ে নফসের প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে তাদের ব্যপারে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وأما من خاف مقام ربه ونهى النفس عن الهوى ٭ فإن الجنة هى المأوى [النازعات: 40-41]
পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হইতে নিজেকে বিরত রাখে। জান্নাতই হবে তার আবাস।(সূরা নাযি’আত-৪০-৪১)
ولمن خاف مقام ربه جنتان [الرحمن: 46]
আর যে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান।(সূরা রহমান-৪৬)
সুতরাং আশা রাখা যায় আপনি এখন আল্লাহর ভয়ে আর খারাপ কাজে না জড়ালে এই সু-সংবাদের অংশিদার হতে পারবেন।
والله اعلم بالصواب .
উত্তর প্রদানে .
মাওলানা মুহাম্মাদ আরমান সাদিক .
ইফতা বিভাগ .
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
সার্বিক তত্তাবধানে
মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া