হযরয়াতুল আল্লাম মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী এর বর্ণাঢ্য জীবন
হযরয়াতুল আল্লাম মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী
উস্তাযুল হাদীস দারুল উলুম দেওবন্দ ভারত
ভূমিকাঃ– বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ প্রবাদতুল্য ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজারের মেধার সাথে তুলনা করে যাকে যামানার “ইবনে হাজার” বলা হয়। তার স্মরণশক্তি যেন উম্মাহ্র শুরুর প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয়। মাহমায়ে দারুল উলুম “আলকাসেম” এর সম্পাদক, এবং ত্রিশেরও বেশি কিতাব প্রণয়নকারী দক্ষ কলম সৈনিক হযরত মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী ।
জন্মঃ-এই বিখ্যাত মুহাদ্দিস মহাভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলায় ১৩৬২ হিজরী মোতাবেক ১৯৪২ ইসায়ী সনে জন্ম গ্রহন করেন।
শিক্ষার সুচনাঃ–পাঁচ বছর বয়সেই শিক্ষাজীবনে সূচনা হয়। নিজ এলাকারই বুজুর্গ হাজী মুহাম্মাদ শিবলী রহ. এর কাছে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। জামাতে পাঞ্জুম পূর্ন করার পাশাপাশি ফার্সী ছোট বড় কয়েক কিতাব পড়ে আজমগড়ের একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান “মাদরাতুল ইসলাম সারাইমজীর” এ ভর্তি হন।এরপর বানারস মাদরাসা এবং দারুল উলুম মৌ ইত্যাদি মাদরাসায় জালালাইন-মেশকাত জামাত পর্যন্ত সম্পন্ন করেন।
নিজের ইলম পিপাসা নিবারন করার জন্য ১৩৮২ হিজরীতে দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন এবং সেখানে ইসলামী শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ও বিজ্ঞ ইলমি ব্যক্তিদের কাছে পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।১৩৮৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৬৪ ইসায়ী সনে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
কর্ম জীবনঃ– প্রাতিষ্ঠানিক ইলম অর্জন সমাপ্ত করার পর হযরত মাওলানা ফুলপুরী রহ. এর নির্দেশে তাবলীগের খেদমত আঞ্জাম দেন।ইত্যবসরে ১৯৬৫ইসায়ী সনে জামিয়া মাতলাউল উলুম বানারস এর আহবানে শিক্ষকতার জন্যে বানারস চলে যান। সেখানে ইলম পিপাশুদের তৃষ্ণা নিবারণ করতে থাকেন। তার ইলম সাধনা ও স্মৃতি শক্তির কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮০ ঈসায়ী সনের ১লা মে ফিদায়ে মিল্লাত ও আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়্যিদ আস’আদ মাদানী রহ. এর আহবানে দারুল উলুমের ফুযালাদের সম্মেলনে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে আসেন এবং পরবর্তীতে তাকে মাসিক পত্রিকা “আল কাসিম” এর সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৮১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে মুদাররিস পদে যোগদান করেন। তার অসামান্য প্রতিভার কারণে দারুল উলূমের মজলিসে শুরা শিক্ষকতার পাশাপাশি মাহনামায়ে দারুল উলুম সম্পাদনার দায়িত্বও তার হাতে ন্যাস্ত করেন।
১৪১৪ হিজরীতে শাবান মাসে মজলিসে শুরা তার অসামান্য যোগ্যতার মূল্যায়ন স্বরূপ তাকে দাওরায়ে হাদীসের কিতাব পড়ানোর দায়িত্ব দেন। তখন থেকেই তিনি দরসে হাদীসের মসনদকে অলংকৃত করে আসছেন।দরসের মসনদে তার পান্ডিত্বপূর্ণ আলোচনা ছাত্রদেরকে বিমুগ্ধ করে। তার তাত্ত্বিক আলোচনার প্রসংশায় সবাই পঞ্চমুখ।
রচনাবলীঃ– রচনার ময়দানেও রয়েছে তার অসামান্য দক্ষতা। তার কলম থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টির অধিক কিতাব লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা তার জন্যে ইসালে সাওয়াব হিসাবে কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তার ইলমী পান্ডিত্যের সাক্ষর বহন করবে। বর্তমানে তার কয়েকটি পুস্তিকা একত্রিত করে একটি কিতাব ‘মাকালাতে হাবীবি’ নামে প্রকাশ পেয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রর্থনা তিনি যেন এ মহান ব্যক্তিকে দীর্ঘ হায়াত দান করেন।