হজ্বের ধারাবাহিক কার্যাবলী
হজ্বের ১ম দিন ৮ই যিলহজ্ব, ইহরাম বেঁধে মিনায় অবস্থান
৮ই যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর সকল হাজীকে ইহরাম অবস্থায় মিনায় গমন করতে হবে। যোহর থেকে পরবর্তী দিনের ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া এবং ৮ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭
হজ্বের ১ম ফরয ইহরাম: ইফরাদ হজ্ব ও কিরান হজ্ব আদায়কারী ৮ই যিলহজ্ব মিনায় যাওয়ার আগে হজ্বের ইহরাম বাঁধবে। ইহরাম বাঁধার নিয়ম আগের মতোই।
হজ্বের ইহরাম বাঁধার স্থান: তামাত্তু হজ্বের ইহরাম বাঁধার জন্য পুরুষ-মহিলা কারো জন্যই মসজিদে হারামে যাওয়া জরুরি নয়। মহিলারা নিজ নিজ অবস্থানস্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে। পুরুষরাও ইচ্ছা করলে হোটেল বা আবাসস্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে পারে। তবে পুরুষদের সম্ভব হলে মসজিদে হারামে এসে ইহরাম বাঁধা ভালো। -গুনইয়াতুন নাসিক ২১৬
তালবিয়া পড়ার সময়কাল: হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ তারিখ জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবে। কংকর নিক্ষেপের সময় থেকে তালবিয়া বন্ধ করবে। -মানাসিক ২২৫; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭০
মাসআলা: ৮ তারিখ দিবাগত রাতে যদি কেউ মিনায় অবস্থান না করে কিংবা এ তারিখে মোটেই মিনায় না যায় তাহলে সে ক্ষেত্রেও তার হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে মাকরুহ হবে। -মানাসিক ১৮৮-১৮৯; আহকামে হজ্ব ৬২
নির্ধারিত সময়ের আগেই মিনায় রওনা
মিনায় রওনা হওয়ার সময় হলো ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়ি রওনা হয়ে যায় এবং রাতে রাতেই মিনায় পৌঁছে যায়। যদিও ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর রওনা হওয়ার নিয়ম এবং এটিই ভালো, কিন্তু অধিক ভিড়ের কারণে আগে আগে চলে যাওয়া দোষণীয় নয়।
-মানাসিক ১৮৮; গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭
মাসআলা: ৯-১৩ যিলহজ্ব প্রতি ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া হাজীদের উপরও ওয়াজিব। প্রত্যেকের এ বিষয়ে যতœবান হতে হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৯
দ্বিতীয় দিন ৯ই যিলহজ্ব
উকুফে আরাফা, হজ্বের ২য় ফরয: ৯ই যিলহজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন আদায়ের দিন। ৯ই যিলহজ্ব মধ্যাহ্নে সূর্য ঢলার পর থেকে আগত রাতের সুবহে সাদিকের মধ্যে সামান্য সময়ও আরাফায় উপস্থিত থাকলেই এ ফরয আদায় হয়ে যায়। তবে এ দিন সূর্যাস্তের আগেই আরাফায় পৌঁছে গেলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব।
-গুনইয়াতুন নাসিক ১৫৭
আরাফার উদ্দেশ্যে রওনা
৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া উত্তম।
-রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩; গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬-১৪৭
সূর্যোদয়ের আগে আরাফায় যাওয়া
ভিড়ের কারণে বহু লোক ৮ তারিখ রাতেই আরাফায় চলে যায়। মুআল্লিমের গাড়িগুলোও রাত থেকেই হাজী সাহেবদের আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করে। রাতে চলে গেলে একাধিক সুন্নতের খেলাফ হয়। যেমন: এক. রাতে মিনায় থাকা সুন্নত। এটি আদায় হয় না। দুই. ৯ তারিখ ফজর নামায মিনায় পড়া সুন্নত। এটাও ছুটে যায়। তিন. সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া মুস্তাহাব। সেটাও আদায় হয় না। তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে, যেন বাসগুলো অন্তত ফজরের পর ছাড়ে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে বৃদ্ধ ও মহিলারা মাহারামসহ আগে চলে যাবে। আর সুস্থ সবল হাজ্বীগণ মিনায় ফজরের নামায পড়ে আরাফার পথে রওনা হবে। মিনায় ফজর পড়ে হেঁটে গেলেও সুন্দরভাবে দুপুরের আগেই আরাফায় পৌঁছা সম্ভব।
আর গাড়িতে গেলে যানজটের কারণে একটু বিলম্ব হলেও সময়ের ভেতরই আরাফায় পৌঁছা যায় তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় একবারে তাঁবুর নিকটে পৌঁছা যায় না। কিছুটা আগে নেমে যেতে হয়। তাঁবু খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। তাই মাযূর হাজীগণ রাতেও যেতে পারবেন। আর যারা সুস্থ সবল, হাঁটতে তেমন সমস্যা হয় না, তাদের জন্য সূর্যোদয়ের পরই রওনা হওয়া উচিত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩