সাদা মোরগের ফযিলত সম্পর্কিত হাদীস প্রসঙ্গে
মোঃসাইফুল ইসলাম
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রশ্নঃ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহঃ প্রনীত জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস বইটির ১৫৭ ও ১৫৮ পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, সাদা মোরগ বরকত
(হাদীস) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনাব রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সাদা মোরগ রাখবে। কেননা যে বাড়িতে সাদা মোরগ থাকে, তার কাছে না শয়তান ঘেঁসতে পারে আর না জাদুকর। এমনকী তার (সাদা মোরগ বাড়ির) আশেপাশের বাড়িতেও (ও জাদুকার) যায় না।
(হাদীস) হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনাব রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মোরগ নামাযের জন্য আযান দেয়। যে ব্যক্তি সাদা মোরগ রাখে তাকে তিনটি জিনিস থেকে হিফাযত করা হয়- শয়তানের অনিষ্ট থেকে, জাদুকরের অনিষ্ট থেকে এবং জ্যোতিষীর অনিষ্ট থেকে।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জনাব রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ঝুঁটিওয়ালা সাদা মোরগ আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু জিবরাঈলেরও বন্ধু। এ(ঝুঁটিওয়ালা সাদা মোরগ) নিজের বাড়ির হিফাজত করে এবং সেই সাথে হিফাযত করে আপন প্রতিবেশির ষোলটি ঘরও- হিফাযত করে-চারটি ডানদিক থেকে, চারটি বামদিক থেকে, চারটি সামনে থেকে এবং চারটি পিছন থেকে।
(হাদীস) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) কতৃক বর্ণিত, জনাব রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সাদা মোরগকে তোমরা ভর্সনা করো না । ও আমার বন্ধু। আমিও ওর বন্ধু। ওর যে শত্রু সে আমারও শত্রু। ওর আওয়াজ যতদূর পৌছায়, ততদূর পর্যন্ত ও জ্বিনকে তাড়িয়ে দেয়।
আমার প্রশ্নগুলো হচ্ছেঃ
১) এই হাদীসগুলোর উপর আমাল করা যাবে কিনা?
২) হাদীস গুলোর রেফারেন্স দিলে ভালো হতো?
৩) সাদা মোরগ যে বাড়িতে রাখা হয় সেই বাড়িতে কি জ্বিন ও শয়তান প্রবেশ করতে পারে না?
৪) এখানে সাদা মোরগ বলেতে কী বোঝানো হয়েছে, সমস্ত শরীর সাদা রংয়ের হতে হবে না এর সাথে অল্প কালো বা হলুদ রং থাকলেও সাদা মোরগ বলা যাবে কি বা না?
بسم الله الرحمن الرحيم
উত্তর: সাদা মোরগের বিষয়ে যে সকল হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্য হতে প্রথমোক্ত হাদিসটি আল মু’জামুল আউসাতে (১ নং খন্ডের ২১০ নং পৃষ্ঠার হাদিস নং- ৬৭৭) বর্ণিত হয়েছে। উল্লিখিত হাদিসটি জাল হাদিস। (দেখুন- মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৫/১১৭ হাদিস নং ৮৪৮১, আল মাক্বাছিদুল হাসানা ২১৮ নং পৃষ্ঠা হাদিস নং- ৪৯৯, আল মানারুল মুনীফ ৫৬ নং পৃষ্ঠা)
আর দ্বিতীয় হাদিসটি উমর রাযি. এর সূত্রে উল্লেখ করা হলেও হাদিসের কিতাবে তা ইবনে উমর রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং তা শু’য়াবুল ইমানে উল্লিখিত হয়েছে। (৭/১৫৮, হাদিস নং- ৪৮১৪) এই হাদিসটি অগ্রহণযোগ্য। (দেখুন- হাশিয়াতুল মুয়াল্লিমী আলাল ফাওয়াইদিল মাজমু’য়া, পৃষ্ঠা- ১৬২, আল মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা- ৫৬)
তৃতীয় হাদিসটি আল যুয়াফাউল কাবীর লিল উকাইলীতে (১/১২৭ ক্রমিক নং-১৫৫) উল্লেখিত হয়েছে। এই হাদিসটি ও জাল। (দেখুন আল ফাওয়ায়েদুল মাজুমুয়া, পৃষ্ঠা-১৬১, হাদীস নং- ৫০৪, আল মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা-৫৬)
আর চতূর্থ হাদিসটি কিতাবুল মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিছীন লি-ইবনে হিব্বানের (২/৪০ ক্রমিক নং-৫৭৩) এ উল্লেখিত। এই হাদিসটিও জাল। (দেখুন- আল মাউযুয়াত লি-ইবনিল যাউজী, ৩/১৩৩-১৩৪, হাদীস নং-১৩৪৭, আল মাক্বাছিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা- ২১৮-২১৯ হাদিস নং-৪৯৯, আল মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা-৫৫-৫৬ ক্রমিক নং-৭৬, তানজিহুশ শারীয়াতিল মুরফুয়া, পৃষ্ঠা-২৪৯-২৫০, আল লু’লুউল মারছু, পৃষ্ঠা-২১৯, হাদীস নং-৬৯৪)
শরীয়তের দৃষ্টিতে জাল হাদীস হিসেবে বর্ণনা করা ও সে অনুযায়ী আমল করা হারাম। তাই উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ অনুযায়ী আমল করা যাবে না। বরং এ বিষয়ক নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত দু’টি হাদীস আমাদের আমলের জন্য আমাদের সামনে রাখা উচিত-
১. গূনানে আবু দাউদে (হাদীস নং-৫১০) বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন,
لا تسبوا الديك فانه يوقظ للصلاة
অর্থাৎ তোমরা মোরগকে গালি দিওনা। কেননা মোরগ নামাযের জন্য লোকদেরকে জাগিয়ে দেয়।
২. নাসায়ী রহ. রচিত ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লায়লা’তে (পৃষ্ঠা-৫২৫, হাদীস নং-৯৪৪) বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন-
اذا سمعتم صياح الديكة فسلوا الله من فضله فانها رأت ملكا و اذا سمعتم فهيق الحمار فتعوذوا بالله من الشيطان فانها رأت شيطانا.
অর্থাৎ তোমরা যখন মোরগের ডাক শুনবে তখন আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ প্রার্থণা কর। কেননা এই সময় মোরগ ফেরেশতাদের দেখে থাকে। পক্ষান্তরে যখন গাধার চিৎকার শুনবে তখন শয়তানের চক্রান্ত থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা কর। কেননা গাধা এই সময় শয়তান দেখে থাকে।
যেহেতু উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসগুলো জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে সেহেতু তৃতীয় ও চতূর্থ নং প্রশ্নের উত্তর প্রদানের প্রয়োজন থাকছে না। তবে ছহিহ মুসলিমে (হাদীস নং- ৭৮০) বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন,
لا تجعلوا بيوتكم مقابر ان الشيطان فيفر من البيت الذى تقرأ فيها سورة البقرة
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরের মত করে রেখ না। নিশ্চয় শয়তান ঐ ঘর থেকে পালিয়ে যায়, যেই ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়।
والله أعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে.
মুফতী আতাউস সামাদ
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া.
সার্বিক তত্তাবধানে
মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
শুকরিয়া