ইহরাম অবস্থায় করণীয় ও বর্জনীয়
১. ঝগড়া-বিবাদ করা।
২. সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা।
৩. পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরীকৃত বা সেলাইকৃত পোশাক পরা এবং পায়ের পাতার উঁচু অংশ ঢেকে যায় এমন জুতো পরিধান করা।
৪. স্বামী-স্ত্রী কর্তৃক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে কামোত্তজক কথা বলা বা কাজ করা।
৫. বন্য পশু-পাখি শিকার করা।
সাজ-সজ্জা গ্রহণের বিবরণ:
সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা নিষেধ। কেননা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, “উত্তম হজ্জ্ব পালনকারী সেই ব্যক্তি, যার চুল উষ্কখুষ্ক এবং দেহ সুগন্ধিমুক্ত। (তিরমিযী: ৫/৭৫, হাদীস নং-২৯৯৮)
তাই ইহরাম অবস্থায় সবধরণের সাজ-সজ্জা ত্যাগ করতে হবে। আর সাজ-সজ্জার জন্য চুলে বা শরীরে তেলও ব্যবহার করা যাবে না।
পুরুষের পোশাক ও জুতো পরিধান করার বিবরণ:
পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরীকৃত বা সেলাইকৃত পোশাক পরা এবং পায়ের পাতার উঁচু অংশ ঢেকে যায় এমন জুতো পরিধান করা নিষেধ। যেমন: পাঞ্জাবী, জুব্বা, শার্ট, গেঞ্জি, কোর্ট, সোয়েটার, সেলোয়ার, প্যান্ট, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি। আর জুতোর ক্ষেত্রে এমন জুতো বা স্যান্ডেল ব্যবহার করতে কোন সমস্য নেই, যা পরলে ঐ উঁচু অংশ খোলা থাকে। অর্থাৎ দু’ ফিতা বিশিষ্ট স্যন্ডেল। তবে মহিলাদের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয এবং তারা স্বাভাবিক পোশাক, ঢিলেঢালা পোশাক, রঙিন পোশাক ও বাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ পোশাক ও পা ঢেকে যায় এমন জুতোও পরতে পারবে। (সহীহ বুখারী: ২/১৩৩, হাদীস নং-১৫৪২-১৫৪৩, ফাতাওয়া শামী: ২/৪৮৯-৪৯০)
এমনিভাবে পুরুষের জন্য লুঙ্গিও সেলাইবিহীন পরাই উত্তম, সেলাইযুক্ত পরা মাকরূহ। তবে এ কারণে কোনো প্রকার দম বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না। কারণ এটা শরীরের আদলে সেলাইযুক্ত পোশাক পরিধানের মতো নয়। তাই একেবারে বৃদ্ধ বা রোগী, যারা সেলাইবিহীন পরলে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরিধান করাই বাঞ্ছনীয়। (আহকামে হজ্জ্ব: ৩৪, তরীকায়ে হজ্জ্ব ও উমরা: ১০৬)
স্বামী-স্ত্রী কর্তৃক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে কামোত্তজক কথা বলা বা কাজ করার বিবরণ:
এটিও নিষেধ। তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পাশাপাশি বসা, চলাচল করা ও হাত ধরে রাখাতে কোন সমস্যা নেই। (সূরা বাকারা: ১৯৭, মানাসিক: ১১৭)
বন্য পশু-পাখি শিকার করার বিবরণ:
বন্য পশু-পাখি শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষেধ। তবে হাঁস-মুরগীসহ যে কোন গৃহপালিত পশু জবাই করাতে কোন সমস্যা নেই। (সূরা মায়েদা: ৯৫-৯৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৮৭৬, ফাতাওয়া হিনদিয়া: ১/২২৪)
ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ নয় তার বিবরণ:
১. মাথা ও মুখ ছাড়া গোটা শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা। কান, ঘাড়, গলা ও পা ঢাকা। আর মহিলাদেও জন্য অবশ্যই মাথা, চুল ও মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে। পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যাবে না।
২. মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া। তবে পুরো মুখমন্ডল বালিশের উপর রেখে শোয়া যাবে না। তদ্রƒপ চাদর, লেপ ইত্যাদি দিয়ে মাথা, মুখ ঢাকা যাবে না। (মানাসিক: ১২৩-১২৪)
৩. ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে ময়লা বা নাপাক না হলেও পরিবর্তন করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫০১০, মানাসিক: ৯৮)
৪. ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে বা তালি লাগিয়ে পরিধান করা। (মানাসিক: ৯৮, ফাতাওয়া শামী: ২/৪৮১)
৫. টুথপেষ্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা ও সাবান না লাগিয়ে গোসল করা। তবে ইচ্ছাকৃত শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা বা উঠানো যাবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫৯-৬৩, মানাসিক: ১২০-১২২, গুনইয়াতুন নাসিক: ৯০)
৬. মশা-মাছি, পিঁপড়া, বিচ্ছু ও কষ্টদায়ক পোকা-মাকড় মারা। (মানাসিক: ৩৭৯)
৭. মাথা-দাড়ি চুলকানো। তবে চুল পড়ে যাবার আশঙ্কা থাকলে কম চুলকাতে হবে। ((মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫১৭৮, মানাসিক: ১২৫)
মহিলা, না-বালেগ অবুঝ শিশু ও পাগলের ইহরাম এর বিবরণ:
১. নাবালেগ ছেলে-মেয়ে যারা বুঝমান তারা নিজের ইহরাম নিজেই করবে। অর্থাৎ নফল উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। তদ্রƒপ হজ্জ্বের সময় নফল হজ্জ্বের নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। আর অবুঝ শিশু ও পাগলের পক্ষ থেকে তার ইহরামসম্বলিত কাজ তার সফরসঙ্গী-অভিভাবককে করে দিতে হবে এবং হালাল হবার সময় বড়দের মত তাদেরও চুল কেটে দিতে হবে। অর্থাৎ এভাবে নিয়্যত করবে যে, আমি আমার ছেলে বা ভাই অথবা অমুকের পক্ষ থেকে ইহরাম করছি। তবে নিজে করার সামর্থ থাকলে তার পক্ষ থেকে অন্যের করে দেয়া যায়েয হবে না। (মানাসিক: ১১২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৪৩০১)
২. তাওয়াফ-সাঈসহ সকল আমলে বাচ্চাকেও সাথে রাখতে হবে এবং তার পক্ষ থেকেও নিয়ত করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫১১০)
৩. নাবালেগ, অবুঝ শিশু ও পাগলকেও ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে তাদের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি হয়ে গেলে জরিমান বা দম অথবা সদকা ওয়াজিব হবে না। তবে সদকা বা দম দিয়ে দেয়া উত্তম। (মানাসিক: ২৬৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫১১৪, আল মাবসূত লিস সারাখসী ৪/৬৯)