মহিলাদের হজ্জ্ব
মাহরামের সাথে হজ্জে যাওয়া মহিলাদের জন্য আবশ্যক
মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ্জ্বের সফরে যাওয়া জায়েয নেই। অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়েও হজ্বে যাওয়া নাজায়েয। স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হওয়া র্পযন্ত মহিলাগণ হজ্জে যাওয়ার জন্য অপক্ষো করবেন। যদি মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হয় আর এভাবেই এমন র্বাধক্য এসে যায় যে, নিজ হজ্ব করার শক্তি না থাকে তাহলে ঐ সময় কাউকে পঠিয়ে বদলী হজ্ব করিয়ে নেবে বা বদলী হজ্জ্বের অসয়িত করে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।’ জনৈক ব্যক্তি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অমুক অমুক বাহিনীর সাথে জিহাদে যাওয়ার ইরাদা করেছি। এ দিকে আমার স্ত্রীও হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা করেছে (আমি এখন কী করতে পারি?) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমিও তার সাথে (হজ্জ্বে) যাও।’-সহীহ বুখারী ১/২৫০; সহীহ মুসলিম ১/৪৩৪, বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেছেন, ‘নারী মাহরাম ছাড়া হজ্ব করবে না।’
রাই নামক স্থানের অধিবাসি একজন নারী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, তিনি একজন বিত্তবান নারী। কিন্তু তার স্বামী নেই এবং কোনো মাহরাম পুরুষও নেই। আর ইতিপূর্বে তিনি হজ্ব করেননি। (এখন তিনি কি স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্বে যেতে পারবেন?) উত্তরে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. লিখেছেন-
إِنَّ هَذَا مِنْ أَمْنِ السَّبِيْلِ الَّذِيْ قَالَ اللهُ، وَلَيْسَ لَكِ مَحْرَمٌ فَلاَ تَحُجِّيْ إِلَّا مَعَ بَعْلٍ أَوْ مَحْرَمٍ.
‘মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হওয়া হজ্জ্বের সার্মথ্যের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদের এই আয়াতে বলেছেন- وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا র্অথাৎ মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (কাবা ঘরে) পৌঁছার সার্মথ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্ব করা ফরয। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)
অতএব আপনার যেহেতু মাহরাম পুরুষ নেই। তাই স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়া যাবে না।’ অনুরূপ সিদ্ধান্ত তাউস, আমের, ইকরামা ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত মনীষী তাবেয়ীদের থেকেও বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৬৩৬-৬৪১, ফাতহুল কাদীর ২/৩৩০; মানাসিক ৪৩৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৫)
এ বিষয়ে সকলেই একমত যে পুরুষের মত কোন মহিলা সম্পদশালী হলে তার উপরও হজ্ব ফরজ হয়। কেননা হজ্জ ফরজ সংক্রান্ত আয়াতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপরই হজ্জ ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসুলে কারীম সা. এর হাদীস থেকেও প্রমানিত যে, নারী পুরুষ সকলের উপরই হজ্জ ফরজ। ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদ সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। উপরন্তু হযরত আয়শা থেকে বর্ণিত একটি হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে নারীদের উপরও হজ্জ ফরজ। হযরত আয়শা রা. বলেন, আমি রাসুলে কারীম সা. এর দরবারে প্রশ্ন করেছি, হে আল্লাহর রাসুল! নারীদের উপর কি জিহাদ নেই? তিনি জবাব দিলেন, হ্যা,ঁ নারীদের উপরও জিহাদ আছে তবে এই জিহাদ কিতাল তথা সশস্ত্র সংগ্রাম নয়। কেননা নারীদের সর্বত্তোম জিহাদ হচ্ছে কবুল হজ্জ। (বুখারী: ২/১৩২, হাদীস নং-১৫২০)
নারীদের উপর হজ্জ ফরজ। এ বিষয়ে সকলে একমত হলেও তাদের সাথে মাহরাম থাকা র্শত কিনা, কিংবা পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে অপর বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে হজ্জে যেতে পারবে কিনা এ বষিয়ে আলেমেদর মধ্যে একাধিক মত রয়েছে:
মহিলাদের মাহরাম প্রসঙ্গ
মহিলাদের সাথে মাহরাম থাকা হজ্জ এর জন্য অপরিহার্য র্শত কিনা এ নিয়ে ফকীহদের মধ্যে মতভেদ আছে।
১. ইমাম আবু হানিফা রহ. ও আহমদ রহ. এর মতে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোন মহিলা হজ্জ করতে যেতে পারবেনা। ইমাম আবু হানিফার মতে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজ্জ করতে পারবে, কিন্তু তিন রাত-তিন দিন বা তার চেয়ে বেশী হলে একাকী হজ্জ করতে পারবেনা। হাসান, ইকরীমা, ইবরাহীম নাখয়ী , তাউস, শা’বী, ইসহাক, সাওরী ও ইবনে মুনযির প্রমুখ এই মতের সর্মথক। (আল বাহরুর রায়েক: ২/৩৩৯)
ইমাম অবু হানিফা রহ. এর মতের সমর্থনে নিম্নের দলিলসমূহ:
হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসুলে কারীম সা. কে বলেত শুনেছি কোন মহিলা তার মাহরাম ছাড়া নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকবেনা। আর কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া সফর করবেনা। একথা শুনার পর জনৈক ব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করলো হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে আর আমি অমুক জিহাদে নাম লিখিয়েছি। এতদশ্রবনের পর আল্লাহর রাসুল বলেলন! তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর। ( মুসনাদে আহমাদ: ১২/১৫৮, )
ইবনে উমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন কোন মহিলা তিন দিনের দুরত্বে মাহরাম ছাড়া ভ্রমন করবেনা ( সহীহ বুখারী: ২/১৪০, ১৭২৭)।
হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলে কারীম সা. বলেছেন, মাহরাম ছাড়া কোন মহিলা হজ্জ করবেনা (দার আল ক্কুতনী: ৩/২২৭, হাদীস নং-২৪০)।
২. স্বামী কিংবা অপর মাহরাম যদি যেতে না পারে বা মাহরাম না থাকে তাহলে ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ীর মতে অপরাপর বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে যেতে পারবে। আসান ফিকহ গ্রন্থে ইমাম শাফেয়ীর অপর নির্ভরযোগ্য মহিলার ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া হেয়ছে যে, কিছুসংখ্যক মেয়েলোক যদি তাদের মাহরাম লোকরে সাথে হজ্জে যায়। তাহলে এধরনের দলের সাথে স্বামী বা মাহরামহীন মেয়েলোক হজ্জ করার সুযোগ আছে। ইমাম মালেক এর মতে এধরনের দলে যদি মাত্র একজন মহিলা থাকে তাহলে অপর কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া যাওয়া ঠিক নয়। হাম্মাদ (র ) বলেন মুসলিম নেককার যে কোন গ্রুপরে সাথে একজন মহিলা হজ্জ করতে পারে। ইমাম আওযায়ীও অনুরূপ মত পেশ করেন। (আল উম্ম: ২/১২৭, মুসনাদুশ শাফেঈ: ১/৩৮৫ )
উল্লেখ্য যে মাহরাম ঐ ব্যক্তি যার সাথে স্থায়ীভাবে ববিাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম। বংশীয় কারণে বা অন্য বৈধপন্থায় একে অপরের মাহরাম হতে পারে। বংশীয়ভাবে মহিলাদের জন্য যারা মাহরাম তাদের মধ্যে অন্যতম হ”ছে:
১. পিতা, দাদা, নানা বা তদুর্ধের যারা
২. ছেলে, নাতি, বা তদনিম্নের যারা
৩. ভাই, (আপন, বৈমাতৃয় ও বৈপিতৃয়)
৪. ভাতিজা, ভাগ্নে ও তদনিম্নের যারা
৫. চাচা ও মামা
আরো উল্লেখ্য, বংশীয় কারণে যেমনিভাবে মাহরাম হয় তেমনিভাবে শৈশবকালে শরীয়ত নির্ধারিত মেয়াদের ভেতর দুধপানের মাধ্যমেও মাহরাম হতে পারে। হাদীস অনুযায়ী বংশীয় কারণে যারা মাহরাম হোন তাঁরা দুধপানের মাধ্যমেও মাহরাম হয়। বৈবাহিক বন্ধনের কারণে যারা স্থায়ীভাবে মাহরাম হোন তাঁদের সাথেও হজ্জে যাওয়া বৈধ। যেমন,
১. স্বামী
২. স্বামীর পিতা।
৩. মেয়ের স্বামী বা জামাতা।
৪. স্বামীর অন্য ঘরের ছেলে ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, বৈবাহিক বন্ধনের কারণে অস্থায়ীভাবে যারা মাহরাম হোন তাদের সাথে বা তাদেরকে নিয়ে হজ্জের সফরে যাওয়া বধৈ নয়। যেমন স্ত্রীর বোন, ভাতিজিও স্বামীর জন্য অস্থায়ীভাবে মাহরাম। এ কারণে স্ত্রীর মৃত্যুর পর বা তালাক দিলে তাদেরকে বিবাহ করা ঐ স্বামীর জন্য বৈধ। এধরনের অস্থায়ী মাহরাম যারা, তাদের সাথে হজ্জের সফরে যাওয়া বৈধ নয়।