মেয়ের প্রতি এক বাবার অবিস্মরণীয় চিঠি
[ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ হযরত আস’আদ মাদানী র. কর্তৃক তার মেয়ের প্রতি প্রেরিত চিঠি]
প্রিয় মেয়ে,
আল্লাহ তোমাকে উভয় জাহানের সুখ ও সমৃদ্ধি দান করুন। আমীন।
স্নেহের কন্যা। (শুনে রাখো) এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার চাকচিক্যের লোভে পড়ে, নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলাফেরা করে চিরস্থায়ী আখেরাতের যিন্দেগীকে ভুলে যেওনা। এই মিছে দুনিয়াকে ভালোবেসে নিজেকে ধোকার মধ্যে ফেলো না এবং নিজেকে নিজের দুশমন বানিয়ো না।
এখন তুমি বড় হয়েছো। নিজেই নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছো। আমরা তো বার্ধক্যে উপনীত হয়ে গিয়েছি। আর কারো মাতা-পিতা চিরদিন সন্তানদের পাশে থাকতে পারে না। তাই নিজের ভালো ও মঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য করে প্রতিটি কাজ বুঝে-শুনে করতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হবে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি লক্ষ্য করে। তোমার ভালো-মন্দ সম্পর্কে সর্বজ্ঞাত ও তোমার শুভাকাঙ্খী তো একমাত্র আল্লাহ তাআলাই। বাদশাহী যিন্দেগী ও এসব ধন-দৌলত তোমাকে কখনো সুখি করতে পারবে না। চিরসুখের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি ভয় ও ভালোবাসা এবং তাঁর সাথে সুসম্পর্ক রাখার মাধ্যমেই তুমি চিরসুখি হতে পার।
এই দুনিয়াকেই যদি তুমি ভালোবেসে থাকো, তাহলে মনে রেখ! কখনও যদি তোমার এ অঢেল সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যায়, কোনভাবেই এ পার্থিব জগতের সামান্য উপায়-উপকরণ তোমার গৌরব ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে না। বরং তুমি তো এমন এক বংশের মেহমান হতে চলেছ, যেখানে তোমার প্রতিটি পদক্ষেপকে সযত্নে মূল্যায়ন করা হবে। তবে যদি তুমি কোন বিষয়ে স্বীয় দাদার আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ করো, তাহলে শুনে নাও! এক্ষেত্রে তুমি তোমার দাদার সম্মানে আঘাত করলে এবং নিজেকে নিজেই লজ্জিত করলে।
আরো শুনে রাখো! পোশাক-পরিচ্ছেদের আড়ম্বরতার পেছনে না পড়ে দ্বীনদারী ও লজ্জাশীল ও বিনয়ী হবার প্রতি যত্নশীল হও। একাধিক মানুষের সাথে অধিক সম্পর্ক রাখা কখনই কাম্য নয়। কেননা বাচালতা বা অধিকা কথাবার্তা বলা থেকে ও মানুষেদের সাথ অধিক সম্পর্ক করা থেকে বেঁচে থাকলে তুমি অনেক বিপদ থেকেই মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। সর্বদা বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করবে।
আগত মেহমানদের সাথে সদালাপ ও উত্তম চরিত্র প্রকাশ করবে। হাসিমুখে তাদেরকে বরণ করে নেবে। নিজেকে সর্বদা তুচ্ছ মনে করবে এবং অপরজন খারাপ হলেও তাকে নিজের চে’ ভালো মনে করবে। শশুরবাড়ির বড়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদেরকে মঙ্গলকামী মনে করে চলাফেরা করলে, কখরই লজ্জিত হতে হবে না ইনশাআল্লাহ।
বিবাহের পূর্বে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার পর বাবা-মা সম্মানের পাত্র হয়ে থাকেন। কিন্তু বিবাহের পর আল্লাহ তা’আলার পর পিতা-মাতার চে’ স্বামীর মর্যাদাই বেশি হয়ে থাকে। তাই স্বামীর অবাধ্য হয়ে চলা সত্যিই পরিতাপের বিষয়। কখনও স্বামীর অবাধ্যতাকে আপন করে নিও না। বরং অন্তর থেকে শ্রদ্ধার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে জীবন পরিচালনা করতে থাকো এবং মন উজাড় করে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে তার খেদমত করতে থাকো। দেখবে, তুমি সবার স্নেহের ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে গিয়েছো। অন্যের থেকে খেদমতের আশা করো না এবং আরামপ্রিয় হয়ে যেয়ো না। অন্যথায় সবার স্নেহ ও শ্রদ্ধা হারিয়েও ফেলতে পারো!
ঘরের ছোট-বড় সবকিছুর প্রতি যত্নশীল হবে। কোন জিনিসকেই উপেক্ষা করে চলবে না। বরং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ঘরের সবকিছুর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে। যখনই যেখান থেকে কোন কিছু নেয়ার প্রয়োজন হবে, কাজ শেষ করে তা সস্থানে রেখে দিবে। যেনো সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস চাইলেই কাছে পাওয়া যায়। কোনকিছু খোলামেলা বা অনির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিবে না। চাই তা যতই সামান্য থেকে সামান্য জিনিসই হোক না কেন। হোক সেটা কোন মসলার পাত্র, চায়ের কাপ কিবা বোতল অথবা কোন আচার সংরক্ষণের পাত্র।
এছাড়াও নামাজ শুদ্ধ করে, ধীরস্থীরতা সাথে ও মন দিয়ে পড়ার প্রতি যত্নশীল হও এবং এভাবে আমলের প্রতি অভ্যাস গড়ে তোলো। সর্বশেষ মনে রেখো! অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ ও গীবত করা মহিলাদের অনেক বড় একটি বদ অভ্যাস, এর থেকে সর্বদা বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।