জিলহজ্ব মাসের ৫টি বিশেষ আমল
১. প্রথম দশকে দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা:
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠতে হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত সম্ভব হলে দিনে নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা। যথা: নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত:
أخرج الإمام الترمذي بالسند المتصل في سننه ( رقم : 758 ) عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ما من أيام أحب إلى الله أن يتعبد له فيها من عشر ذي الحجة يعدل صيام كل يوم منها بصيام سنة وقيام كل ليلة منها بقيام ليلة القدر
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় । (তিরমিজী শরীফ, সিয়াম অধ্যায়,দশ দিনের আমল পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড,১৫৮ পৃষ্ঠা)
أخرج الإمام البخاري بالسند المتصل في صحيحه ( رقم : 926 ) عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال: ما العمل في أيام العشر أفضل من العمل في هذه . قالوا ولا الجهاد ؟ قال ولا الجهاد إلا رجل خرج يخاطر بنفسه وماله فلم يرجع بشيء
অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের নেক আমল আল্লাহর নিকট যত বেশী প্রিয় আর কোন দিনের আমল তাঁর নিকট তত প্রিয় নয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদ কি এই দশকের আমল থেকে উত্তম নয়? তিনি বললেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও এই দশকের আমলের তুলনায় উত্তম নয়; তবে ঐ ব্যক্তির (জিহাদ এর চেয়ে উত্তম) যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং শেষে কিছুই ফিরে এলোনা (সম্পদও শেষ হল সেও শহীদ হয়ে গেল)। (বুখারী শরীফ, দুই ঈদ অধ্যায়, আইয়ামে তাশরীক পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)
২. চুল-নখ না কাটা:
সকলের জন্য জিলহজ্বের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব।
হাদীস:
أخرج الإمام مسلم بالسند المتصل في صحيحه ( رقم : 5233 ) عن أم سلمة ترفعه قال إذا دخل العشر وعنده أضحية يريد أن يضحى فلا يأخذن شعرا ولا يقلمن ظفرا
অনুবাদঃ হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করবে, তারা যেন [এই ১০ দিন] চুল ও নখ না কাটে। ( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫২৩৩ ,সুনানে ইবনে মাজাহ, কুরবানী অধ্যায়, যে কুরবানী করবে তার জন্য চুল-নখ না কাটার বর্ণনার অধ্যায়, পৃষ্ঠা-২২৭, )
أخرج الإمام ابو داود بالسند المتصل في سننه ( رقم : 2789 ) عن عبد الله بن عمرو بن العاص أن النبي صلى الله عليه و سلم قال ” أمرت بيوم الأضحى عيدا جعله الله عزوجل لهذه الأمة ” قال الرجل أرأيت إن لم أجد إلا منيحة المنيحة شاة اللبن ونحوها تعطى للفقير ليحلب ويشرب لبنها ثم يردها أنثى أفأضحي بها ؟ قال ” لا ” ولكن تأخذ من شعرك وأظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فتلك تمام أضحيتك عند الله عزوجل
অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আমার প্রতি আযহার (১০ই যিলহজ্ব) দিন ঈদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাকে আল্লাহ এই উম্মতের জন্য (ঈদ হিসেবে) নির্ধারণ করেছেন। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, (যদি আমার কুরবানীর পশু কিনার সামর্থ না থাকে) কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরী থাকে-যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি। আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। বরং তুমি তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেল এবং নাভির নীচের চুল পরিষ্কার কর। এ-ই আল্লাহর নিকট তোমার কুরবানী ( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৭৮৯,২য় খন্ড ৩৮৫ পৃষ্ঠা; সুনানে নাসাঈ হাদীস নং-৪৩৭৭, ২ খ. ১৭৯ পৃ.; ত্বহাবী শরীফ, ২ খ. ৩০৫ পৃ.; ইলাউস সুনান, ১২ খ. ২৬৮ পৃ. )
৩.আরাফার দিন রোজা রাখা
প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজ্বে নফল রোযা রাখা। (তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)
ফযীলতঃ
أخرج الإمام الترمذي بالسند المتصل في سننه ( رقم : 749 ) عن أبي قتادة أن النبي صلى الله عليه و سلم قال صيام يوم عرفة إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده قال وفي الباب عن أبي سعيد
অনুবাদঃ হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। (তিরমিজী শরীফ, সাওম অধ্যায়, আরাফার দিনে রোযার ফযীলত পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১২৪ পৃষ্ঠা)
৩. তাকবীরে তাশরীক বলা
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হল-
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”
(ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)
৫.স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা:
১০, ১১ অথবা ১২ ই জিলহজ্বের যে কোন দিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ,অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। (ফাতাওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)
ফযীলত:
أخرج الإمام ابن ماجه بالسند المتصل في سننه ( رقم : 3127 ) عن زيد بن أرقم قال أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم يا رسول الله ماهذه الأضاحي ؟ قال سنة أبيكم إبراهيم قالوا فما لنا فيها ؟ يا رسول الله ، قال بكل شعرة حسنة قالوا فالصوف ؟ يا رسول الله ، قال بكل شعرة من الصوف حسنة
অনুবাদঃ যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা রা. গণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা (রা.) পুনরায় আবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা (রা.) আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)
কঠোর হুশিয়ারী:
أخرج الإمام ابن ماجه بالسند المتصل في سننه ( رقم : 3123 ) عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : من كان له سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا
অনুবাদঃ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)