মেসওয়াকঃ গুরুত্ব, ফযীলত ও পদ্ধতি
মেসওয়াকের গুরুত্বঃ
মেসওয়াক শব্দটি আরবী সিওয়াক ধাতু থেকে নির্গত। অর্থ মাজা, ঘসা ইত্যাদি। তাই দাঁত ঘসে-মেজে পরিষ্কার করাকে মেসওয়াক করা বলা হয়, বিশেষত যখন তা গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে হয়ে থাকে। মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিস্কার করা আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যান্ত পছন্দনীয় কাজ। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন এবং উম্মতকে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। এ প্রসংগে হযরত আবু উমামা রা, কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেনঃ
عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما جاءني جبريل قط إلا أمرني بالسواك حتى لقد خشيت أن أحفي مقدم فمي»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরাইল (আ) আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মেসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশংকা হচ্ছিল যে, (মেসওয়াকের কারণে) আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি।(আল মুযামুল কাবীর লিত তবারানী, হাদীস নং৭৮৪৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২২৬৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াকের গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে ইরশাদ করেন,
لولا أن أشق على أمتي أو على الناس لأمرتهم بالسواك مع كل صلاة»
আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং৮৮৭, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং২৫২)
অন্য হাদীসে এসেছে প্রত্যেক উযুর সময় আদেশ দিতাম (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭৪১২)
মেসওয়াকের ফজিলতঃ
মিসওয়াকের বহু ফজিলত হাদীসে বর্ণিত আছে। এব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
السواك مطهرة للفم مرضاة للرب
মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায় (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ৫)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فضل الصلاة التي يستاك لها على الصلاة التي لا يستاك لها سبعين ضعفا» تفرد به يحيى بن معاوية بن يحيى الصدفي ويقال إن ابن إسحاق أخذه منه
মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুন বেশী ফযীলত রয়েছে।(শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫১৯)
এছাড়াও অন্যান্য হাদীসে আরো উপকার বর্ণিত আছে, তা হল, এটা একটি সুন্নত যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রেজামন্দি হাসিল হয়, ফেরস্তারা খুশি হয়, নেকী বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়,দাঁতের গর্ত দূর হয়, মাড়ি শক্ত হয়, শ্লেষ্মা দূর হয়, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় ইত্যাদি। (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫২১)
মেসওয়াকের পদ্ধতিঃ
# রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইতুন (অলিভ, আমাদের দেশের জলপাই নয়) ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করেছেন। তাই এই দুটো হলে উত্তম। এছাড়া তিক্তস্বাধ যুক্ত গাছের ডাল হলেও ভাল। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মেসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়। আমরা যেটাকে যাইতুনের ডাল বলে চিনি সেটা হচ্ছে পিলু গাছের ডাল। এটা সবসময় যেহেতু নরম থাকে তাই এর মাধ্যমে মেসওয়াক করা যেতে পারে।
মেসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মেসওয়াক করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেশী ফায়দাও পাওয়া যাবে।
# অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে উযুতে হাত ধোয়ার পর কুলি করার পূর্বে মেসওয়াক করা উত্তম। তবে কোন কোন আলিম উযুর পূর্বে মেসওয়াক করার কথাও বলেছে। উযুর সময় ছাড়াও যে কোন সময় মেসওয়াক করা যাবে।
# মেসওয়াক ধরার পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মেসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মেসওয়াক ধরা। এতে করে মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসওয়াক করা যায়। এপদ্ধতিটি হযরত ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত আছে।
# মেসওয়াক করার মাসনূন পদ্ধতি হল, মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মেসওয়াক করা। আড়াআড়ি ভাবে না করা। মেসওয়াক করার সময় দাঁতের ভিতর বাহির সহ মেসওয়াক করা এবং জিহবাও গোড়া পর্যন্ত মেসওয়াক করা।
# মেসওয়াসের মাঝে দুটি বিষয় সুন্নত, এক. মুখ পরিষ্কার করা। দুই. গাছের ডাল হওয়া। তাই গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে দাঁত মাজলে একটি সুন্নত আদায় হবে। অপরটি হবেনা। সুতরাং মেসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল ও শুকনো কাপড় দ্বারাও মেসওয়াক করা যেতে পারে। ব্রাশের মাধ্যমেও দাঁত মাজা যেতে পারে।
# ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ও ঘুমানোর পূর্বে, নামাজের আগে, মজলিসে উপস্থিত হবার পূর্বে, কুরআন ও হাদীস পাঠের পূর্বে, খাওয়ার পর মেসওয়াক করা মুস্তাহাব
আল্লাহ আমাদের মেসওয়াকের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর উপর আমল গড়ার তাউফিক দান করুন। আমীন
খুব ভাল লাগল পোষ্ট টা পরে,, আরু ভিবিন্য বিষয়ে পোষ্ট করার আবেদন রইল।
ইতি >>>#লোকমান_হুসাইন<<<