৫ম বার্ষিক ইসলাহী জোড়
৫ম বার্ষিক
ইসলাহী জোড়
তারিখঃ ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী-২০১৭, রোজ শনি, রবি ও সোমবার
স্থানঃ মাদানী কমপ্লেক্স
(মসজিদ, মাদরাসা ও খানকা)
হাফিজনগর, পূর্ব রাখিরকান্দি, দিঘীরপাড় বাজার সংলগ্ন, মুন্সীগঞ্জ সদর, মুন্সীগঞ্জ।
দ্বীন ও মিল্লাতের কা-ারী ফেদায়ে মিল্লাত হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী রহ.। যিনি ছিলেন শায়খুল আরব ওয়াল আজম, কুতবুল আলম, শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসায়ন আহমাদ মাদানী রহ. এর জৈষ্ঠ পুত্র। পাশাপাশি তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকতা ও রূহানিয়তের জগতে আকাবিরদের যিন্দা নমুনা। বংশপরম্পরায় তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৩৬তম পুরুষ। ভারতীয় দেওবন্দি আলেম ও রাজনীতিবিদ হবার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন ইসলামি ব্যক্তিত্ব। মুসলমানদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনার জন্য নিখিল ভারতের পাড়ায় পাড়ায় পদচারণা করে মুসলিম ফান্ড গঠন ও ভারত উপমহাদেশের দ্বীনী মারকায “দারুল উলূম দেওবন্দ”-এর উন্নতিকল্পে আজীবন মজলিসে শূরার পৃষ্ঠপোষকতা তার কর্মময় জীবনের উজ্জ্বল কারনামা।
ফিদায়ে মিল্লাত রহ. ছিলেন অসহায় মানুষের খুবই আপন। দুঃখ-দুর্দশায় ছুটে যেতেন তাদের কাছে পাগলের মতো। তাদের কল্যাণে নিজের জান-মাল বিলিয়ে দিতেন অকাতরে। এ জন্যই তাঁকে বলা হয়ে থাকে ফিদায়ে মিল্লাত তথা জাতির কল্যাণে উৎসর্গীত।
তাঁর সুলূকের সুধা পানে ধন্য হন বিশ্বের হাজারো ভক্ত মুরীদান। তাঁর রুহানী ফয়েজ পেয়ে ধন্য এমনই এক ব্যক্তিত্ব ‘হযরত মাওলানা মুফতী হাফীজুদ্দীন দা.বা.।’ যিনি হযরত আস‘আদ মাদানী রহ. এর মূর্তপ্রতীক। হযরতের অক্লান্ত পরিশ্রম, সজাগ নেগরানী ও দুআর বরকতে মুন্সিগঞ্জের দিঘীরপাড় বাজার সংলগ্ন পূর্ব রাখিরকান্দির হাফিজনগরে শাখা পদ্মানদীর কোলঘেষে নির্মিত হয়েছে পদ্মানদীর স্বচ্ছ পানি বিধৌত ‘মাদানী কমপ্লেক্স’। আলহামদুল্লিাহ এ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ক্বলব স্বচ্ছ করার মেহনত তিন দিনব্যাপি ‘ইসলাহী জোড়’-২০১৭। বিগত ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং রোজ শনিবার থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিক আমলের মধ্য দিয়ে চলা এই ইসলাহী জোড়- ২১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বাদ ফজর দু’আর মাধ্যমে শেষ হয়। ফেদায়ে মিল্লাত আওলাদে রাসূল (রাসূলের বংশধর) হযরত মাওলানা সায়্যিদ আস’আদ মাদানী রহ. এর সুযোগ্য খলীফা- পীরে কামেল হযরত মাওলানা মুফতী হাফীজুদ্দীন দা.বা. ছিলেন এর আহ্বায়ক।
তিন দিনব্যাপী চলা এ ইসলাহী জোড়ে দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখগণ তাশরীফ রাখেন। আগত মেহমানদের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতারাম উস্তাদ হযরত মাওলানা মুজীবুল্লাহ সাহেব দা.বা.। দেশবরেণ্য অন্যান্য যেসব উলামায়ে কেরাম তাশরীফ এনেছিলেন; যাদের মুক্তোঝরা বয়ানে ইসলাহী জোড়ের আগত পিপাসার্তদের পিপাসা নিবারণ করেছিলেন, তাঁরা হলেন,
১. হযরত মাওলানা মুজীবুল্লাহ সাহেব (মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত)
২. শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল হক্ব (পীর সাহেব-মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস: জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মাদরাসা, ময়মনসিংহ)
৩. হযরত মাওলানা মুফতী আনোয়ার মাহমূদ (মুহাদ্দিস, আরজাবাদ মাদরাসা, ঢাকা)
৪. হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমাদ (মুহতামিম, ইকরা শাহী ঈদগাহ মাদরাসা, সিলেট)
৫. হযরত মাওলানা মুফতী রাশেদ আহমাদ (মুফতী, হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম)
সম্মানিত বুযুর্গানে দ্বীন উলামায়ে কেরাম এর উপস্থিতি ও ইসলাহী বয়ান এবং দিকনির্দেশনার মাধ্যমে উপস্থিত হাজারো সালেকীন, মুতাআল্লিকীন ও মুহিব্বীন ক্বলবের ইসলাহী খোরাক সংগ্রহ করতে সক্ষম হোন। যাদের শুভাগমন ও ইখলাসপূর্ণ অংশগ্রহণে মুখোরিত ছিল মাদানী কমপ্লেক্স। শুধু মুন্সীগঞ্জবাসীই নন, এ ইসলাহী জোড়ে আগমন করেন ঢাকা বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগসূমের বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানগণ। প্রতিটি বিভাগের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছিল আলাদা আলাদা খিত্তা। সুচারুরূপে ও গোছালো পরিবেশে আয়োজন করা হয়েছিল এ ইসলাহী জোড় এর। যেখানে ছিল না কোন যাতায়াত কিবা আহারকষ্ট। এছাড়াও প্রত্যহ নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী আমল এ শরীক হয়েছিলেন আগত সবাই। আমলে জুড়ানোর সাথীবর্গও ছিলেন এ বিষয়ে সদা তৎপর। পাঠক মহলের সুবিধার জন্য নি¤েœ চব্বিশ ঘন্টার আমলের রুটিন উল্লেখ করে দেয়া হলো-
২৪ঘন্টার আমলের সূচি
সময় আমল
রাত ০৪:০০ থেকে ফজর পর্যন্ত তাহাজ্জুদ, জিকির ও দুয়া
বাদ ফজর থেকে ০৬:৩০ মিনিট পর্যন্ত সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত ও ‘ছয় তাসবীহর’ আমল
সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের পর মুখতাসার বয়ান (১৫ মি:) ও ইশরাক্ব নামাজ
সকাল ০৭:০০ থেকে ০৮:৩০ বিশ্রাম
সকাল ০৮:৩০ থেকে ০৯:৩০ পর্যন্ত নাস্তা
সকাল ০৯:৩০ থেকে ১০:১৫ পর্যন্ত তাসাউফের তালিম
সকাল ১০:১৫ থেকে ১১:১৫ পর্যন্ত ঈমান-আকিদা ও মাসায়েল শিক্ষা
(ঈমান, কুফুর ও শিরক)
বেলা ১১:১৫ থেকে ১২:১৫ পর্যন্ত সূরা কেরাতের মশক
বেলা ১২:১৫ থেকে ০১:০০ পর্যন্ত গোসল, নামাযের প্রস্তুতি ও ইনফিরাদী আমল (শায়খের সাথে খুসুসী সাক্ষাত ও ব্যক্তিগত হালত পেশ করা)
বাদ যোহর সূরা ফাতাহ্ তেলাওয়াত ও তা’লীম
তেলাওয়াত ও তা’লীমের পর
০২:৩০ থেকে ০৩:৩০ পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া
দুপুর ০৩:৩০ থেকে বিকাল ০৪:০০ পর্যন্ত নামাযের প্রস্তুতি
বাদ আসর সূরা নাবা তেলাওয়াত
সূরা নাবা তেলাওয়াতের পর সুন্নাতের বয়ান
বয়ান চলা কালীন সময় খুসূসী গাশত
বাদ মাগরীব সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত ও ‘ছয় তাসবীহর’ আমল
সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াতের পর বয়ান
বাদ ইশা সূরা মুলক তিলাওয়াত
সূরা মুলক তেলাওয়াতের পর বয়ান ও জিকির ও বাই‘আত
বাদ বয়ান খাওয়া দাওয়া ও ঘুম
সব মিলিয়ে এ মাদানী কমপ্লেক্স ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর সহীহ ঈমান-আমল গঠন ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের পথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। পানি যেমন মৃতভূমিকে সিক্ত করে জাগিয়ে তোলে, ‘মাদানী কমপ্লেক্স’-র ইসলাহী এ জোড়ও হাজারো মুমিনের হৃদয়কে আল্লাহর যিকির ও মুহাব্বতের বারি দ্বারা সিক্ত করেছে। আল্লাহ তা’আলা এ কমপ্লেক্সকে সারা বিশ্বের হেদায়াতের যরীআ হিসাবে কবুল করুন। আমিন।