বিশেষ আয়োজন
গত ১২ জুলাই ২০১১ ঈসাব্দ মোতাবিক ৯ই শাবান ১৪৩২ হিজরী রোজ মঙ্গলবার জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকায় তাশরীফ আনেন এ যুগের উম্মতের কামিয়াব রাহনুমা (ইলমী-রূহানী ও সামাজিক) ফিদায়ে মিল্লাত মাওলানা সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী রহঃ এর সুযোগ্য খলিফা হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ সাহেব দাঃ বাঃ সিলেটী জামিয়ায় তাশরীফ আনেন। বাদ যোহর হযরত জামিয়ায় ইফতা বিভাগের ছাত্রদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন।
হামদ ও সালাতের পর বয়ানে তিনি বলেন-ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী রহঃ যেই ফিকর ও নিরলস কর্মতৎপরতা চালিয়ে গেছেন উম্মতের ইসলাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আমি তার ঝলক দেখতে পাচ্ছি মুফতী হাফীজুদ্দীন সাহেবের মধ্যে। অল্প সময়ে তিনি দ্বীনী যে খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তা সত্যিই ঈর্ষাজনক। ফিক্বহ ও ফাতওয়ার এই গবেষণা মারকায সেই খিদমতের ধারাবাহিকতার একটি জ্বলন্ত প্রতিফলন।
প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! আসলে মুফতীর জন্য প্রধান শর্ত হল মুত্তাকী হওয়া। তাক্বওয়া না থাকলে এই মুফতী হয়ে কোন লাভ নেই। ফিক্বহ ও ফাতওয়া অন্যকে জানিয়ে নিজে এর উল্টো করলে এর দ্বারা কোন ফায়দা হয়না। ফাতওয়া মানে হল আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশাবলী মানুষকে জানানো, সুতরাং এক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। নতুবা উম্মতের মাঝে যেই ফেৎনা হবে এই ফাতওয়ার কারণে এর দায়ভার মুফতীর উপর এসে আপতিত হবে। আমি যখন দারুল উলুম দেওবন্দে ইফতা পড়ি তখন মুফতী নিজামুদ্দীন রহঃ ছিলেন ইফতার প্রধান। সে সময় আমি একটি বাইরের তালাকের ইস্তেফতার তামরীন করলাম। ফাতওয়ায়ে শামীর রেফারেন্স দিয়ে আমি ইস্তেফতার জবাব লিখে মুফতী হাবীবুর রহমান খায়রাবাদী সাহেবকে দেখালাম। তিনি তাসদীক করে দিলেন। কিন্তু ফাতওয়াটি যখন মুফতী নেজামুদ্দীন রহঃ এর কাছে গেল। তখন তিনি আমাকে খবর পাঠালেন। আমি তার সামনে যেতেই তিনি প্রচন্ড রেগে গেলেন। রাগ করে আমাকে বললেন-তুমি এটা কিভাবে লিখলে? আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম-হযরত! ফাতওয়ায়ে শামীর ইবারত দেখে আমি এটি লিখেছি। তখন তিনি ঝাঁজের সাথে বললেন-“তুমি ফাতওয়ায়ে শামীর এই ইবারত দেখেছ অথচ দুই পৃষ্ঠা পর বাকি ইবারত কেন দেখনি? আমি দেখলাম সত্যিই আমার ফাতোয়াটি ভুল ছিল। পরের ইবারত না দেখে আমার এটি লিখা ঠিক হয়নি। তখন তিনি বললেন-এই ফতোয়া বাইরে প্রকাশিত হলে যেই সমস্যা হত তার দায়ভারতো তোমার ঘাড়ে এসে আপতিত হত। এই জন্য ফাতওয়া লিখার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
যেই তালাক পতিত হয়নি তা যদি তালাক বলে ফাতওয়া দেয়া হয়, কিংবা এর উল্টো করা হয় চিন্তা করুন এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ! এই জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে তৌফিক চাইতে হবে যেন সঠিক জবাব তিনি মাথায় ইলক্বা করে দেন। এই খোদা প্রদত্ব মেধার জন্য প্রয়োজন তাক্বওয়া ও খোদাভীতি। আমাদের আকাবীরদের সবার মাঝেই যা পরিপূর্ণ। সুতরাং এই সিফাত অর্জন করতে হবে পরিপূর্ণভাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বীনী ইলম সঠিকভাবে শিখে দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দিন। আমীন
হযরতের সংক্ষিপ্ত বয়ান শেষে এক আবেগঘন দুআর মাধ্যমে শেষ হয় এই গুরুত্বপূর্ণ মাহফিল। দু’আয় কায়ামানোবাক্যে জামিয়ার উন্নতি অগ্রগতি ও জামিয়া সংশ্লিষ্ট সবার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের ঐশী কল্যাণ কামণা করা হয়।