হজ্জ-পরবর্তী নতুন জীবনে আমাদের করণীয়-১
১. আকীদা-বিশ্বাসের দুরস্তি। ইতিপূর্বে শয়তানের ধোকায় কোনো প্রকারের শিরকী-বিদআতী কাজের সাথে যুক্ত হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে তা থেকে দূরে থাকার পাকা ইরাদা করা এবং হক্কানী আলিমদের সাহচর্যের মাধ্যমে শিরক-বিদআত সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা। সবধরণের কুফরী ও বেদ্বীনী চিন্তা-চেতনা ও কর্মকা- থেকে আত্মরক্ষার জন্য এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা।
২. ইবাদত-বন্দেগীর দুরস্তি। ইসলামের ফরয ইবাদতগুলো, যেমন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময়মতো আদায় করা, সম্পদের যাকাত দেওয়া, রমযান মাসের রোযা রাখা, ফরয হজ্জ আদায় করা (এটা তো আল্লাহর রহমতে আদায় করা হয়েছে) ইত্যাদি বিষয়ে খুব যত্নবান হতে হবে। সুন্নতে মুআক্কাদার গুরুত্ব দিতে হবে। সাধ্যমত নফল আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। এর পাশপাশি নিয়মিত কিছু পরিমাণে হলেও কুরআন তিলাওয়াত, বিভিন্ন সময়ের মাসনূন দু’আ, কিছু পরিমাণে আল্লাহর যিকর ও ইস্তিগফার ইত্যাদি ইবাদতে মনোযোগী হলে ইনশাআল্লাহ অনেক খাইর ও বরকতের কারণ হবে।
৩. লেনদেনে হারাম উপার্জন ত্যাগ করা এবং অন্যের পাওনা পরিশোধ করা অতি জরুরী। মনে রাখতে হবে, লেনদেনে হারাম ছাড়তে না পারলে দ্বীনদার হওয়া যায় না। সুদ, ঘুষ, ও অন্যান্য হারাম থেকে সম্পুর্ণরূপে মুক্ত হয়ে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করতে হবে এবং হালাল উপায়ে যতটুকু উপার্জন হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৪. সমষ্টিগত জীবনের নীতি ও বিধান জেনে তা অনুসরণের চেষ্টাও জরুরী। এর সারকথা হল, প্রত্যেকের হক্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তা আদায় করা। পিতা-মাতার হক্ব, আত্মীয়-স্বজনের হক্ব, পাড়া-প্রতিবেশীর হক্ব, সহক্বর্মী ও দায়িত্বশীলের হক্ব, সাধারণ মুসলমানের হক্ব, এমনকি অমুসলিম ও পশু-পাখীর হক্বও ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী নিজের কর্ম ও জীবন পরিচালিত করতে হবে।
৫. আখলাক তথা স্বভাব-চরিত্রের দুরস্তি। এটা ইসলামের অনেক বড় অধ্যায় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। স্বভাবের ভালো প্রেরণা ও বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন বিনয়, নম্রতা, ক্ষমাশীলতা, উদারতা, সংযম, পরোপকার, অন্যের হীত কামনা ইত্যাদি জাগ্রত ও কার্যকর করা এবং স্বভাবের মন্দ প্রবণতাগুলো যেমন অহংকার, ক্রোধ, কৃপণতা, অসংযম, অন্যের অনিষ্ট কামনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা একজন ভালো মানুষ হওয়ার বিকল্পহীন বিষয়। আর এ তো স্বীকৃত কথা যে, একজন ভালো মুসলমান নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ।
মানুষের স্বভাব-চরিত্র যেহেতু তার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই আচার-ব্যবহার সুন্দর হওয়ার জন্য স্বভাব-চরিত্র ভালো হওয়া জরুরী। একজন সাধারণ মানুষের অসৎ আচরণের চেয়ে একজন মুসল্লী বা একজন হাজী ছাহেবের অসৎ আচরণ অধিক দৃষ্টিকটু। একারণে তাদের আচার-ব্যবহার সুন্দর ও শালীন হওয়া অধিক কাম্য। তো জীবনের এই যে ধারা পরিবর্তন, তা কারো কারো কাছে অতি কঠিন, এমনকি অসম্ভবও মনে হতে পারে। বাস্তবেও তা অনেকের জন্য কঠিন তবে সংকল্প ও সৎসাহসের সাথে সঠিক উপায়ে অগ্রসর হলে তা অসম্ভব থাকে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার জন্য তা সহজ করে দেন। সেই সঠিক উপায়ের একটি হচ্ছে, ‘সাহচর্য’। বেদ্বীন লোকদের সংশ্রব ত্যাগ করে দ্বীনদার ভালো মানুষের সাহচর্য অবলম্বন করলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। মানুষের কর্ম ও আচরণের ক্ষেত্রে পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতা অনেক বড় প্রভাবক বিষয়। একারণে ইসলামে সৎসংগের খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, সঠিক সূত্র থেকে নির্ভুল জ্ঞান ও উপলব্ধি। দ্বীনের উপর চলার জন্য দ্বীনী ইলমের কোনো বিকল্প নেই। তাই হক্কানী আলিমদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় দ্বীনের অতিপ্রয়োজনীয় ইলম অর্জনের পাশাপাশি সঠিক দ্বীনী রুচি, নির্ভুল উপলব্ধি, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা অর্জনও অতি প্রয়োজন। এই পথে যদি জীবন গড়ার মেহনত জারি রাখা যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন এক নির্মল, পবিত্র ও নতুন জীবনের সন্ধান দিবেন যার তুলনা পৃথিবীর কোনো সুখ-সম্পদের সাথেই হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।