রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেভাবে কাজ করছেন উলামায়ে কেরাম-২
আলেমদের মধ্যে যারা কাজ করছেন তারা সাময়িক ত্রাণের পাশাপাশি স্থায়ী কিছু করারও ব্যবস্থা করছেন
যেমন স্থায়ী ক্যাম্প করে দেয়া, মসজিদ করা, নারী পুরুষ আলাদা গোসল করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেয়া, মক্তব, নলকূপ করে দেয়া, যারা কুরআন পড়তে পারে তাদের জন্য কুরআন শরীফের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি লঙ্গরখানাও খুলেছে। এই চিন্তাগুলো খুবই জরুরি। কারণ মিয়ানমার যতদিন পর্যন্ত এদের কোনো ব্যবস্থা না করবে ততদিন তারা এখানেই থেকে যাবে। সুতরাং তাদের জন্য স্থায়ী কাজগুলো জরুরি।যারা আগামীতে ওখানে সাহায্য করার চিন্তা করছেন তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন বলেন, তাবলিগ জামাত বা ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামাসহ অন্যান্য দল যারা স্থায়ীভাবে সরকারের পারমিশন নিয়ে ওখানে কাজ করছেন তাদের সঙ্গে যদি কাজ করা হয় তাহলে তাদের জীবন রক্ষার পাশাপাশি ঈমান রক্ষাটাও হবে।
তাবলিগ জামাতের কী পরিমাণ সাথী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে জানতে চাইলে মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, ওখানে নিয়মিত জামাত পাঠানো হচ্ছে। এটা নির্দিষ্ট নেই। প্রতিটি জামাত এসে তিনদিন করে গাশতের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ করছে এবং চলে যাচ্ছে। আবার নতুন জামাত আসছে। এতে সুবিধা হলো তারা নতুন করে অর্থ ও ত্রাণ আনতে পারছে, কাজেও সুবিধা করতে পারছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শ্রম ও অর্থ দেয়া আলেমদের পরিমাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যত জায়গায় গিয়েছি চা খেয়েছি হোটেলে বা নামাজ পড়েছি দেখেছি বিপুল পরিমাণ বাইরের আলেম ওলামা। দশটা গাড়ি যদি যায় তার মধ্যে ৭ টাই আলেমদের।
অতীতের আলেমও সমাজকর্মের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বরিশালে যখন সিডর হলো, তখন বিপুল পরিমাণ আলেম ওলামা সেখানে গিয়ে অর্থ ও শ্রম দিয়েছেন। এছাড়াও নেত্রকোণায় একবার বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় হলো সেখানেও আলেম ওলামা ছুটেছেন। সে সময় ওই অঞ্চলের সবগুলো মাদরাসার ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছিল যাতে করে ছাত্র শিক্ষকরা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও সম্প্রতি যে বন্যা হয়ে গেল উত্তরবঙ্গে সেখানেও আলেমদের আধিক্য দেখা গেছে।সেসময় নেত্রকোণার ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তরা বলেছেন, রাজনৈতিক লোকেরা আসে অল্প কিছু নিয়ে আর বেশি বেশি ছবি তোলে। আপনাদের থেকেই আমরা কিছু পাচ্ছি।
মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, সব প্রাকৃতিক দুর্যোগেই আলেমরা সবার আগে এগিয়ে এসেছে। ছুটেছে সাহায্য নিয়ে। কিন্তু তাদের প্রতি মিডিয়ার অনিহার কারণে এসব ফুটে উঠেনি। এ জন্য দেখা গেছে কেউ কিছু তালগাছ লাগিয়েছে সে সাদা মনের মানুষ, কেউ কিছু বিড়াল পালে তাদের খাওয়ায় তিনি সাদা মনের মানুষ। মিডিয়া তাদের হাইলাইট করেছে।তিনি আওয়ার ইসলামকে লক্ষ করে বলেন, আলেমদের এই দলিলগুলো তৈরি করতে হবে আপনাদের। আপনারা এগুলোতে হাত দিন। একটা ভালো প্রিন্টকপি প্রকাশ করুন এই কাজগুলো নিয়ে। যেন এই দলিলগুলো আমাদের সবার হাতে হাতে থাকে। অর্থ শ্রম লাগলে মানুষ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে ইনশাল্লাহ।
শরণার্থী রোহিঙ্গাদের এই মুহূর্তের মনোভাব কী জানতে চাইলে মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গারা কখনোই ভালো ছিল না। কখনোই তারা মর্যাদাশীল জীবন যাপন করতে পারেনি। প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটা সময় তাদের উপর অন্যায় জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে।
ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন বলা হয়েছিল তাদের আলাদা রাজ্য দেয়া হবে কিন্তু তারা সেটি আজও পায়নি। তারা অবেহেলার শিকার হতে হতে সর্বশেষ ১৯৮২ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসে। তখন জিয়াউর রহমান তাদের হুমকি দিয়ে ফেরত নিতে বাধ্য করেন। সেসময় হুমকি দেয়া হয়েছিল তোমরা এদের ফেরত না নিলে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে রাখাইনে পাঠানো হবে।
এখনো হয়তো সেরকম কোনো হুমকি বাংলাদেশ কিংবা বিশ্ব থেকে আসত তবে মিয়ানমার অনেকটাই গুটিয়ে যেত। দুর্ভাগ্যক্রমে সেরকম কিছু দেখিনি আমরা। তুরস্ক, মালয়েশিয়া বিষয়টিতে তৎপর হলেও তারাও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সূত্র : OURISLAM24.COM