সংস্কৃতিচর্চায় আদর্শিক বিচ্যুতি কাম্য নয়
মাওলানা ইউনুস হুসাইন
বৈশাখ। বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। কৃষিপ্রধান গ্রাম বাংলার নবান্নের মাস। এ মাসের পহেলা তারিখটি গ্রামীণ অর্থনৈতিতে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত জমিনে উৎপাদিত ফসলে বাদশাহর খাজনা আদায়ের সময়কে সুনির্দিষ্ট ও সহজ করতে বাংলা ক্যালে-ারের সূচনা। মোঘল স¤্রাট বাদশাহ আকবরের সময় হিজরী সনের সূচনাকাল থেকে হিসাব করে বাংলা বর্ষের প্রচলন করা হয়।
ফসল কাটার মাস বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখকে খাজনা আদায়ের দিন হিসাবে ধার্য্য করা হয়েছিল। এ দিন প্রজারা বাদশাহর খাজনা আদায় করত। এ উপলক্ষে বাদশাহর পক্ষ থেকে প্রজাদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হত। ফলে এটি একটি উৎসবমূখর দিবসে পরিণত হত।
আমাদের সমাজেও দেখা যায় ব্যবসায়ীরা বছরব্যাপী নগদ ও বাকীতে লেনদেন করেন, আর বৈশাখ মাসে বকেয়াগুলো আদায় করে। এ সময় তারা মিষ্টান্ন বা চা-বিস্কিটের আয়োজন করেন। ব্যবসায়ীরা এরপর হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। তেমনিভাবে নতুন ফসল ঘরে তুলে কৃষকেরা ঘরে ঘরে পিঠা-পুলির আয়োজন করে। আল্লাহর দেয়া নতুন নেয়ামত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে।
মূলত পহেলা বৈশাখের উৎপত্তিগত প্রেক্ষাপটে খারাপ কিছু ছিল না। কিন্তু দিন দিন এটি আর খাজনা আদায় বা হাল খাতা কেন্দ্রীক কোন ব্যাপার এবং নবান্ন্রে শুকরিয়া আদায়ের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এটিকে একটি রুসুমে পরিণত করা হয়েছে। আর এটি উদযাপনে কেবল বাঙ্গালী সংস্কৃতিতেই সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে বিজাতীয় সংস্কৃতি এবং অনেক অপসংস্কৃতির মিশ্রণ যে ঘটিয়ে ফেলা হয়েছে তা সম্প্রতি বছরগুলোতে স্পষ্ট।” এর ফলে নানান অনাকাঙ্খিত ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক।
বিশুদ্ধ বাঙ্গালী-সংস্কৃতির সাথে বিজাতীয় সংস্কৃতি এবং অপসস্কৃতির অবাধ চর্চা যেন না হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আদর্শিত শুদ্ধতা যেন কলুষিত না হয়। আমি যেন কারো প্ররোচণায় নিজের স্বকীয়তাকে বিনষ্ট না করি।
বিষেশতঃ অভিভাবক মহলকে লক্ষ্য রাখতে হবে- আমার সন্তানের নৈতিকতা যেন দূষিত না হয়। আমাদের সংস্কৃতির চর্চা হওয়া চাই আমাদের আদর্শিক চেতনার বলয়ে থেকে। অপসংস্কৃতির বেশামাল জোয়ার যদি আমাদের নতুন প্রজন্মের নৈতিকতাবোধ নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে এর দায় নেবে কে ?
জায়েয-নাজায়েয সকল ক্ষেত্রে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ-অনুকরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামী মূলনীতির তা পরিপন্থী। বে-পর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বিনোদনের নামে অশ্লীলতা, অর্থের ব্যাপক অপচয় কারো জন্যই শুভনীয় নয়।
মনে রাখতে হবে আমার সংস্কৃতিচর্চায় আদর্শিক বিচ্যুতি যেন না ঘটে। ঈমান ও আমল যেন বিনষ্ট না হয়। নতুন প্রজন্মের নৈতিকতা যেন কলুষিত না হয়।
শরীয়তগর্হিত সব ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জহন্য আবশ্যক।
সুতরাং পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির নামে অন্য ধর্মের লোকজনের সাথে আনন্দ-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে শরিক হওয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নেই। কেননা ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ও জীবনবিধান । জীবন ব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে সকল কিছুর সমাধান ইসলাম দিয়েছে। অন্য ধর্ম বা মতবাদ থেকে কোন কিছু গ্রহণ বা নেয়ার আদৌ কোন প্রয়োজন ইসলামে নেই। সুতরাং অন্য সব কিছুর মত উৎসব সর্ম্পকেও ইসলামের নিজস্ব বক্তব্য আছে। আয়োজন আছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।