শায়খুল হাদীস আল্লামা নাসির আহমদ খাঁন রহ.
মুফতী হাফীজুদ্দীন
জন্ম: ২১ রবিউল আউয়াল ১৩৩৭ হিজরি মোতাবেক ২৩ ডিসেম্বর ১৯১৮ ঈসায়ি।
মৃত্যু: ১৮ সফর ১৪৩১ হিজরী মোতাবেক ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১০ ঈসায়ি ।
ফারাগাত: ১৩৬২ হিজরী, দারুল উলূম দেওবন্দ।
বুখারীর দরস দান: ১৩৯৭ থকে ১৪২৯ হিজরী মোট ৩২ বছর।
জীবন কাল: হিজরী সন হিসাবে ৯৪ বছর।
ঈসায়ী সন হিসাবে ৯২ বছর।
সমাধী: মাকবারায়ে কাসেমী, দারুল উলূম দেওবন্দ, ইউ.পি, ভারত।
হযরত মাওলানা নাসির আহমদ খাঁন রহ. ছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদীস, সদরুল মুদাররিস ও ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম।
ভারতের বুলন্দশহর জেলার বসী নামক এলাকায় তাঁর জন্ম। বুলন্দশহরের প্রশিদ্ধ মাদরাসা মামবাউল উলূম গিলাওটি মাদরাসায় শুরু থেকে দাওরা হাদীস পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ছাত্র যামানা থেকেই একাগ্রতা ও পূর্ণ উদ্যমতার সাথে পড়ালেখা করতেন। যে কোন কাজ একাগ্রতা ও সুশৃঙ্খলতার সাথে আঞ্জাম দেয়া তাঁর অনন্য গুণ ছিল। জীবনের শেষ পর্যন্ত সেই গুণের স্বাক্ষর রেখেছেন পদে পদে।
তাঁর পিতা জনাব আব্দুশ্ শাকুর রহ. ছিলেন অত্যন্ত নেককার, পরহেযগার ও খোদাভীরু ব্যক্তি। তিনি ছিলেন হযরত মাওলানা খলীল আহমদ আম্বেঠী রহ. এর মুরিদ। আলেম ওলামাদের প্রতি তাঁর ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল অগাধ| তাই ইংরেজদের শাসন আমলে শাইখুল হিন্দ রহ. এর তর্কে মুআলাত – ইংরেজদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা এর ঘোষনায় ফৌজদের উচ্চ পদস্থ পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে বের হয়ে আসেন ।
হযরত মাওলানা নাসির আহমদ খাঁন রহ. গিলাওটি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্তির পর দারুল উলূম দেওবন্দর আকাবিরের সুহবত ও তাদের থেকে ইলমের সুগন্ধি আহরণের জন্য ১৩৬২ হিজরিতে দারুল উলূম দেওবন্দ ভর্তি হন এবং দ্বিতীয়বার দাওরায়ে হাদীস পড়েন। এরপর ১৩৬৩ হিজরতে ইলমে তাজবীদ, ইলমে কেরাত, সাবআ, আশারা ও তাকমলিুল উলূমুল আলিয়া বিষয়ে পড়ালেখা করেন।
শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ও তার আপন বড় ভাই মাওলানা বশির আহমদ খাঁন এবং মাওলানা আবদুল হক সাহেব গুড়া খটক তাঁর বিশেষ উস্তাদ।
তিনি ১৩৬৫ হিজরি থেকে দারুল উলূম দেওবন্দের উস্তাদ পদে আত্মনিয়োগ করেন। ইলমি ইনহিমাক, প্রাজ্ঞতা, যুহদ, তাকওয়ার সাথে মাদরাসার দায়িত্ব সুন্দর ও সুচারুরূপে আঞ্জাম দেওয়ায় পর্যায়ক্রমে ৬ সফর ১৩৯১ হিজরতে উচ্চ স্তরের উস্তাদ ও নায়েবে মোহতামিম পদে তাঁকে সমাসিন করা হয়। এছাড়াও তিনি দারুল ইকামা, তালিমাত ও মাদরাসার বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৩৯৭ হিজরি থেকে বুখারী শরীফ ১ম খণ্ডের দরস প্রদান শুরু করেন। অতপর ১৪১২ হিজরিতে সদরুল মুদাররিস এর পদে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তাঁর দরস ছিল আকাবিরের তাযকিয়া, আসলাফের আকলি ও নকলি দলিল এবং ইলম ও মারিফতের এক অনন্য বাগান। ছাত্ররা চাতক পাখির ন্যায় দরসে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। তাঁর দরসে তারাজিমুল আবওয়াব-বুখারী শরীফের অধ্যায় ও শিরোনামের চমৎকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্যের। নরম ভাষা ও স্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ তাঁর অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল। ফেরেশতাসুলভ চেহারা ও আচরণে আকাবিরের যিন্দা নমুনা ছিলেন তিনি। দরসে শায়খুল ইসলাম রহ. এর আলোচনা আসলেই চোখের পানি তিনি ধরে রাখতে পারতেন না। আর আপন উস্তাদ শায়খুল ইসলাম রহ. এর নাম বাদে তাঁর দরস চলত না বললেই চলে। তাঁর জীবনে ৩ বার হজ্জ আদায়ের সৌভাগ্য অর্জন করেতে পেরেছিলেন।
১৪২০ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৯ ঈসায়ি সালে আল্লাহ তাআলা আমি নালায়েককে হযরতের দরসে বসার তাওফীক দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ পুরা বছরে তাঁর দরস একদিনও বাদ যায়নি।
আল্লাহ তাআলা হযরতের দ্বীনি খিদমাতগুলো কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।