শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল হক আজমী রহ.
মুফতী হাফীজুদ্দীন
জন্ম: রজব মাস ১৩৪৬ হিজরী মোতাবেক ১৯২৮ ঈসায়ি।
মৃত্যু: ১ রবিউস সানী ১৪৩৮ হিজরী শুক্রবার মোতাবেক ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ঈসায়ি ।
ফারাগাত: ১৯৪৮ ঈসায়ি, দারুল উলূম দেওবন্দ।
বুখারীর দরস দান: দারুল উলূম দেওবন্দে ৩৩ বছর।
জীবন কাল: হিজরী সন হিসেবে ৯২ বছর।
ঈসায়ী সন হিসেবে ৮৭/৮৮ বছর।
সমাধী: মাকবারায়ে কাসেমী, দারুল উলূম দেওবন্দ, ইউ.পি., ভারত।
হযরত মাওলানা আবদুল হক আজমী রহ. ছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদীস। তিনি ১৯২৮ ঈসায়ি সালে আজমগড় জেলার জগদেশপুর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয় নিজগ্রামের মকতবে । অত:পর বাইতুল উলূম সারায়েমীর মাদরাসায় ফারসি ও আরবি কিতাবাদি অধ্যয়ন করেন। এরপর দারুল উলূম মউ মাদরাসায় মিশকাত জামাত পড়ার পর ১৯৪৮ ঈসায়ি দারুল উলূম দেওবন্দে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হন।
শায়খুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ., আল্লামা ইবরাহীম বিলয়াবি রহ., শায়খুল আদব আল্লামা এজায আলি রহ. সহ তৎসময়ের উস্তাদবৃন্দের কাছে হাদীসের দরস গ্রহণে সৌভাগ্যবান হন।
বিভিন্ন ফনের উলূম হাসিল করার পর কয়েকটি মাদরাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। বিশেষ করে ইউ.পি. এর ঐতিহ্যবাহী শহর বানারসে ষোল বছর দরস প্রদান করেন। গড়িরিয়া জিলার ঝারকান্ড মাদরাসা এবং দারুল উলূম মউ মাদরাসায়ও দরস দান করেন। ১৪০২ হিজরি মোতাবেক ১৯৮২ ঈসায়ি সালে দারুল উলূম মউ থেকে দারুল উলূম দেওবন্দে উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তাঁর দরসে মাদানি রহ. এর নমুনা ফুটে উঠত। বুখারি শরীফ ২য় খণ্ডের ‘কিতাবুল মাগাজি‘ দরস প্রদানের সময় একজন মুজাহিদের ন্যায় তাকরীর করতেন। শরীয়ত বিরোধী কোন বিষয়ে যেন কারো ভিতর কোন অবহেলা না আসে এ ব্যপারে জোর তাগিদ দিতেন।
২ জুমাদাল উলা ১৪১৯ হিজরিতে বাদ এশা দরসদানের সময় দেশবাসীর প্রতি পরিষ্কার ঘোষণা দেন যে, ‘আমার দেশবাসী! তোমরা শুনে নাও, আমরা এদেশ ছেড়ে কোথাও হিজরত করবো না। এদেশের মাটিতে আমরা চোখ খোলেছি। দেশ ও জাতির বিষয়ে আমাদের খেদমত-সেবা সুস্পষ্ট। আমরা এ দেশের নাগরিক। এদেশ আমাদের। এদেশের প্রতিটি বিন্দুতে আমাদের অংশ আছে। এদেশকে হিন্দু রাজ্য বানানো এবং নতুন সংস্কৃতিতে বদলে দেয়ার যে দুঃস্বপ্ন তোমরা দেখছ -তা কখনো বাস্তবায়ন হবে না। ষড়যন্ত্রকারিরা শুনে নাও! আমাদেরকে ন্যয্য অধিকার দিতে হবে। ‘
তাঁর এসব আবেগপূর্ণ বক্তব্যে নিজ শায়খ থেক প্রাপ্ত চেতনারেই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। তাঁর শায়খ শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বহু জেল জুলুম সহ্য করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলার ফজলে আমি নালায়েকের ১৪২০ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৯ ঈসায়ি থেকে এক বছর প্রতিদিন বাদ এশায় বুখারি শরীফ ২য় খণ্ডের দরসে হযরতের সামনে বসার তাওফীক হয়েছিল। ছাত্রবৃন্দ তাঁকে শায়খে ছানী হিসাবে সম্বোধন করতো। দরসে আসার আগে প্রায়ই তিনি গোসল করে আসতেন। সহজ-সরল ও সাদাসিধে ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। শেষ দরসে বলেছিলেন, তোমরা আমাদের সন্তান, তাই পুরো বছর আদব কায়দার খেলাফ যা কিছু হয়ছিল আজ আমি সব মাফ করে দিলাম।
আল্লাহ তাআলা হযরতের দ্বীনি খিদমাতগুলো কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।