আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.-এর বিদায় ও আমাদের ভাবনা
গত ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ২০২০ ঈ. থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রামে আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমীর শিফা কামনায় দুআ করছিলাম। কেন যেন হাত উঠালেই হুযুরের কথা স্মরণ হয়ে যেত। বারবার মনে এ কথা উদয় হচ্ছিল, মনে হয় এবার হুযুরকে আর হাসপাতাল থেকে ফিরে পাবো না। শুক্রবারও জুমআর নামাযের পর মুসুল্লীদের সবার কাছে দোয়া চেয়ে সবাইকে নিয়ে দুআ করেছিলাম। শনিবার মুন্সিগঞ্জের নয়াদ্দা মসজিদের ইসলাহী বয়ানে হুযুর সম্পর্কে আলোচনা করা হলে, দুআয় কান্নার রোল পড়ে গেল।
দুই দিনের ইসলাহী প্রোগ্রাম। আমি মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন বয়ান ও দ্বীনি কাজে ব্যস্ত। ঘাষিপুকুরপাড় যোহর নামাযান্তে বয়ানের পর মোবাইল অন করতেই চতুর্দিক থেকে একই সংবাদ আসতে লাগল- আল্লামা কাসেমী আর নেই। কিছুক্ষণ পূর্বেও যাকে দা. বা. বলে দুআ করেছিলাম তিনি এখন রহ.। হায়! আল্লাহ হযরতের জন্য জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।
আল্লামা কাসেমীর বিদায়ে আমাদের জন্য অনেক ভাবনার বিষয় ও চিন্তার খোরাক রয়েছে। তিনি তাঁর ৭৫ বছরে দেশ-জাতি, দ্বীন-ধর্মের একজন খাদেম ছিলেন ও অগনিত মাদরাসার সীমাহীন উন্নয়ণ সা্ধন করেছেন আর সারা জীবন দেওবন্দীয়তের চিন্তা-চেতনা বিকাশে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হক ও হক্কানিয়্যতের আপোষহীন নেতা ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল ত্যাগ ও কোরবানীর। কষ্ট ক্লেশে ভরপুর এক মরদে মুজাহিদ হিসেবে সারাটি জীবন কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন দুনিয়া বিমুখ এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ওমানুষ গড়ার কারিগর।
হযরতের কাছে আমার দরসী সবক নেওয়ার সুযোগ না হলেও ছাত্র যামানায় ‘লাজনাতুত তলাবার’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত মজলিসে তাঁর ইখলাসপূর্ণ বয়ান ও আকাবিরের চেতনা দীপ্ত তাকরীরে মুগ্ধ ছিলাম। দ্বীনি অনেক মজলিসে আমার প্রতি হযরতের একটি নেক নজর ও নেক তাওয়াজ্জুহ ছিল। বিশেষ করে হযরত ফিদায়ে মিল্লাত রহ.-এর নিসবতের কারণে আমার প্রতি তাঁর বিশেষ স্নেহের নজর ছিল। মাদানিয়্যাত ও মাদানী ভক্তি তাঁর রক্তে ঝরা প্রতিষ্ঠান বারিধারা মাদরাসার নাম দ্বারাই ফুটে উঠে- ‘জামিয়া মাদানিয়া’ নামটি মূলত আকাবিরের ভক্তি ও ফিকরী প্রতিচ্ছবির শিরোনাম।
১৩ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের ইসলাহী মজলিস সমাপ্ত করে সরাসরি রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে বারিধারা মাদরাসায় উপস্থিত হলাম। লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে মুচকি হাসি দিয়ে শুয়ে আছেন আল্লামা কাসেমী রহ.। তাঁর নূরানী চেহারা শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ হলো।
إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَمَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى وَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ
পরের দিন ফজরের পরই নেত্রকোনা কেন্দুয়ার ৭ টি প্রোগ্রাম সামনে নিয়ে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন শুনলাম হযরতের জানাযা সকাল ৯ টায় বায়তুল মুকাররম মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে, তখন মনে হলো, এই জানাযা থেকে মাহরুম হওয়া যায় না। তাই সফর বিলম্বিত করে জানাযার নামাজ পড়ে কেন্দুয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের মতো নালায়েকদের আকাবিরের মিশন এবং বড়দের রেখে যাওয়া আমানত হেফাজতে ব্রত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।