গোনাহ থেকে বাঁচার কার্যকরী পদক্ষেপঃ আল্লাহকে যথাযথ লজ্জা করা
মোস্তফা কামাল
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” اسْتَحْيُوا مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ “. قَالَ : قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا نَسْتَحْيِي وَالْحَمْدُ لِلَّهِ. قَالَ : ” لَيْسَ ذَاكَ، وَلَكِنَّ الِاسْتِحْيَاءَ مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ، أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ وَمَا وَعَى ، وَالْبَطْنَ وَمَا حَوَى، وَتَتَذَكَّرَ الْمَوْتَ وَالْبِلَى، وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدِ اسْتَحْيَا مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ ”
[سنن الترمذي،رقم الحديث-٢٤٥٨،مسنداحمد،رقم الحديث-٣٦٧١،حكم الحديث،حسن]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে লজ্জা করো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা অবশ্যই আল্লাহকে লজ্জা করি- আলহামদুলিল্লাহ। তিনি বললেন, ব্যাপারটা এমন নয়। (অর্থাৎ: প্রকৃত লজ্জা এটা নয় যেমন তোমরা বলছ)
বরং আল্লাহকে যথার্থভাবে লজ্জা করার অর্থ হলো, (১) তুমি তোমার মাথা এবং মাথা সংলগ্ন (চোখ,নাক,কান এবং জিহ্বা) অঙ্গগুলোকে (গোনাহ থেকে) রক্ষা করবে।
(২) তুমি তোমার পেট ও পেটের সাথে লাগুয়া( কলব, লজ্জাস্হান,হাত এবং পা) অঙ্গগুলোকে (গোনাহ থেকে) হেফাযত করবে।
(৩) তুমি তোমার মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী অবস্থাসমূহকে অধিকহারে স্মরণ করবে।
(৪) (আর স্মরণ রাখবে) যে ব্যক্তি আখেরাতের কল্যাণ চায় সে পার্থিব বিলাসিতা ত্যাগ
করে।
যে ব্যক্তি উপরোক্ত কাজগুলি করে, সেই সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে লজ্জা করে”।
[ সূত্র:তিরমিযি,হা/২৪৫৮,মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৭১]
🖊সংশ্লিষ্ট আলোচনা🖋
লজ্জা আল্লাহ প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। লজ্জা মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ এবং স্বভাবজাত গুণ। লজ্জাশীলতা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। লজ্জা মানুষের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে এবং লোকসমাজে ব্যক্তির মর্যাদা ও সম্মান বাড়িয়ে দেয়। লজ্জাশীল মানুষকে সবাই কদর করে এবং মূল্যায়ন করে।
পক্ষান্তরে লজ্জাহীন মানুষ সবখানে অপমানিত এবং অপদস্থ হয়। লোকসমাজে তার কোনই মূল্য থাকে না।
সাধারণত মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে কিংবা ধরা পড়ার আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কোন মন্দকর্ম করে না। গোনাহ করে না। বরং গোপনে, আড়ালে কিংবা অন্ধকারে অপরাধ করে, গোনাহ করে। লজ্জা পায়, না জানি কে কি মনে করে!? বা কে কি বলে ফেলে!?
বিশেষ করে বাবা-মা, শিক্ষক, শ্বশুর-শাশুড়ি, গুরুজন, ছেলে-মেয়ে কিংবা সম্মানিত কোন ব্যক্তির উপস্থিতিতে গোনাহ করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে না। তাদেরকে চরম লজ্জা করে।
অথচ রাজাধীরাজ, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে কোনো কিছুই তো গোপন নয়। প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য, দিন-রাত, আলো-আঁধার সবকিছুই তাঁর কাছে সমান। তিনি সবকিছু দেখেন। সবকিছু শোনেন। তাঁর কুদরত এবং ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান। কোনো কিছু তাঁর ক্ষমতার বাহিরে নেই।
তিনি আমার সামনে আর আমি তাঁর সামনে!
সুতরাং তাঁর সামনে কিভাবে আমি গোনাহ করবো?
হাশরের ময়দানে কিভাবে আমি তাঁর সামনে মুখ দেখাবো? এতটুকুন লজ্জা যদি কারো মাঝে চলে আসে তাহলে তার জীবন গোনাহমুক্ত হয়ে যাবে
ইনশাআল্লাহ।
তার মাথা, চোখ, নাক, কান, জিহ্বা, পেট,কলব এবং হাত-পাসহ প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। আল্লাহর হুকুমের বাহিরে চলবে না। হারাম খাবে না। হারাম দেখবে না। হারাম ধরবেনা। হারামের দিকে যাবে না। ইত্যাদি।
এরপরও শয়তানের ধোঁকায় কখনো গোনাহের শিকার হয়ে গেলে পরক্ষণেই এতটা লজ্জাগ্রস্ত এবং অনুশোচনাদগ্ধ হবে যে তওবার আগ পর্যন্ত আর
পেরেশানি কাটবে না। স্বস্তি পাবেনা। ছটফট করতে
থাকবে।
সুতরাং বুঝা গেল গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য
আল্লাহ তা’আলাকে লজ্জা করার মত গুরুত্বপূর্ণ ও
ফলপ্রসূ কোন আমল নেই।
তাই উম্মতের কান্ডারী, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসে তাঁর প্রিয় উম্মতকে গোনাহমুক্ত জীবন লাভের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে যথার্থভাবে লজ্জা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আল্লাহপাক আমাদেরকে উল্লেখিত হাদীসের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন। তাঁকে সত্যিকার অর্থে লজ্জা করার তৌফিক দান করুন। আমীন। য়া-রাব্বাল আলামীন।