রাসূলের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত
ভালবাসা ও মহব্বত দুই ধরনের হতে পারে।
১. মহব্বতে ইজমালী তথা সম্মানের ভালবাসা।
২. মহব্বতে শফকত তথা স্নেহ ও মমতার ভালবাসা।
প্রথম পর্যায়ের ভালবাসার মাঝে সবচেয়ে ঊর্ধে হলেন পিতা আর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভালবাসার মাঝে সবচেয়ে ঊর্ধে হলো সন্তান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ও আকলী-যৌক্তিক ভালবাসা উক্ত দু’টি ভালবাসার ঊর্ধে হতে হবে। সব ভালবাসাই মানুষের জন্য তার কুপ্রবৃত্তি, অফুরন্ত চাহিদা ও খাহেশাত পুরনের মাধ্যম হয়। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শণপূর্বক তার নির্দেশ মানা ও অনুসরণের মাধ্যমে নিজের নফসের চাহিদা পূরণের মানসিকতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
অথবা বিষয়টি এভাবেও বলা যেতে পারে যে, স্বভাবসূলভ ভালবাসার অন্যতম কারণ হলো ইহসান- দয়া এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক।
এ দু’য়ের মাঝে স্বভাবসুলভ ইহসান-দয়া সবচেয়ে বেশি থাকে পিতার মাঝে। দুনিয়ার জগতে এই পিতাই দয়ার বড় কেন্দ্রবিন্দু আর কারাবাত তথা আত্মীয়তার দিকে সবচেয়ে নিকটতম হলো সন্তান। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইহসান-দয়া রূহানী এবং জাগতিক দু’ক্ষেত্রেই সকল উম্মতের উপর পরিব্যপ্ত। কারণ তাঁর রূহানী ইহসান ও দয়ায় আখেরাতের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে আর রুহের প্রকৃত পরিচর্যা এবং আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচানোসহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনেক ইহসান উম্মতের উপর রয়েছে।
এমনিভাবে জাগতিক ইহসানও উম্মতের উপর রয়েছে অপরিসীম। যতদিন উম্মত রাসূল এর অনুসরণ করে চলবে, ততদিন পর্যন্ত তারাই সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
زُوِيَتْ لِي الْأَرْضُ حَتَّى رَأَيْتُ مَشَارِقَهَا، وَمَغَارِبَهَا، وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ، الْأَصْفَرَ أَوِ الْأَحْمَرَ، وَالْأَبْيَضَ، يَعْنِي الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ، وَقِيلَ لِي: إِنَّ مُلْكَكَ إِلَى حَيْثُ زُوِيَ لَكَ
আমার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমসহ সকল ভূ-পৃষ্ঠকে অনুগত করে দেয়া হয়েছে। অচিরেই আমার উম্মতের নেতৃত্ব পৃথিবীর সর্বত্রই পরিব্যপ্ত হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৫২)
অন্যত্র বর্ণনা রয়েছে,
لَتَفْتَحَنَّ كُنُوزَ كِسْرَى الْأَبْيَضَ
অবশ্যই পারস্য সম্রাটের ভাণ্ডার তোমাদের হস্তগত হবে।
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০৯৮৭)
সন্তানের জন্য বাবা-মা আপন হওয়ার বিষয়টি শুধু জাগতিক বা রক্তের সম্পর্কের কারণে। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তির জন্য তাঁর নবী আরো অনেক বেশী কাছের ও আপন ব্যক্তি। তাই তো ইরশাদ হচ্ছে,
اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَ اَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمْ
অর্থাৎ ঈমানদারের নবীর সাথে সম্পর্ক অনেক গভীরের, সবচেয়ে আপন হওয়ার। এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশী আপন। আর নবীদের স্ত্রী তাদের মা। (সূরা আহযাব, আয়াত: ৪)
উক্ত আয়াত এ কথাটিই সুস্পষ্ট করছে যে, মুমিনদের জন্য সবচেয়ে আপন হলেন নবীÑ যা ‘ اَوْلٰی’ শব্দ দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায়। সুতরাং কোনো ব্যক্তির কাছে তার বাবা মা থেকেও বেশী আপন হবে নবীর ব্যক্তি সত্তা।
গভীরভাবে চিন্তা করলে পরিষ্কার হবে যে, বাবা-মা আপন হওয়ার বিষয়টি একটি কারণে। তা হলো রক্ত-মাংসের সম্পর্ক আর নবী আপন হওয়ার বিষয়টি দুই কারণে।
১. নৈকট্যের সম্পর্কের জন্য।
২. রূহানী ও আত্মিক সম্পর্কের জন্য।
এ কারণে নবীর স্ত্রীদেরকে মুমিনদের রূহানী মা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তি যদি শুধু আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের উপর ঈমান আনে আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান না আনে তাহলে তার ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে কেউ শুধু রাসূলের উপর ঈমান আনে আর আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের উপর ঈমান না আনে তাহলে সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে না।
সুতরাং কারো যদি এ ধরনের বক্তব্য হয় যে, لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) বলা এবং শুধু এর উপর আমল করার দ্বারাই নাজাত পাওয়া যাবে; রাসূলের উপর ঈমান আনার দরকার নেই, তাহলে তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত হবে। (মাকতুব ৮৩, ১/২১০)
(শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর মাকতুবাত থেকে নির্বাচিত)
জাঝাকাল্লাহু খাইরান। অসাধারণ এই লেখাটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।