মুহীউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আবরারুল হক হক্কী হারদুয়ী রহ.
নাম : শাহ মুহাম্মদ আবরারুল হক
জন্ম : ১৩৩৯ হিজরী মোতাবেক ২০ ডিসেম্বর ১৯২০ ঈ.
মৃত্যু : ১৭ ঈ. মে, ২০০৫ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮ টায়
জীবনকাল : ৮৮ বছর
সমাধি : হারদুয়ী, ভারত
পরিচিতি–
নাম : আবরারুল হক। পিতার নাম : জনাব মাহমুদুল হক হক্কী রহ.।
জন্ম : ১৩৩৯ হিজরী মোতাবেক ২০ শে ডিসেম্বর ১৯২০ ঈ. ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী জেলা শহরে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী, আলেমকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. জন্ম গ্রহণ করেন।
হক্কী পরিবারের পরিচয় : মূলত তুরস্ক থেকে ১৪০০ ঈ. আলাউদ্দীন খিলজীর আমলে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে হক্কী পরিবারের আগমন ঘটে আর আলাউদ্দিন খিলজী ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ধর্র্র্র্র্র্মভীরু। তাই তিনি ওলামা মাশায়েখের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি এই হক্কী পরিবারকে সর্বপ্রথম গুজরাট তারপর দিল্লীতে বসবাস করার ব্যবস্থা করেন। এ পরিবারের সদস্যবৃন্দ সমকালীন শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ হযরত সালাহউদ্দীন সোহরাওয়ার্দী-এর সান্নিধ্যে আত্মশুদ্ধি করেন। এ হক্কী বংশের শেখ সাইফুদ্দীনের ঔরসেই জন্ম গ্রহণ করেন বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা মুহাদ্দিস হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেসী দেহলভী রহ.। সেই ঐতিহ্যবাহী বংশের যোগ্যতম উত্তরসূরী ও দীপ্ত প্রদীপ হযরত শাহ আবরারুল হক রহ.।
প্রাথমিক শিক্ষা : মাওলানা আফজাল সাহেব বলেন, এক সময় হারদুয়ী শহরে ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ এমনকি জামাতের সাথে নামায আদায়ের কোনো ব্যবস্থা ও ছিল না। মাদরাসা-মসজিদ কিছুই ছিল না। হারদূয়ী রহ.-এর পিতা হযরত মাহমুদুল হক সাহেব-এর অক্লান্ত প্রচেষ্টার বদৌলতে অত্র এলাকায় সর্বপ্রথম আঞ্জুমানে ইসলামীয়া নামে একটি সংস্থা স্থাপন হয়। পরে তারই একান্ত উদ্যোগে সর্বপ্রথম মসজিদ ও মাদরাসা স্থাপিত হয়। এই মাদরাসা থেকেই শুরু হয় হযরত হারদুয়ী রহ.-এর শিক্ষা জীবন। হযরত রহ.-এর প্রাথমিক শিক্ষা নাজেরা, পবিত্র কোরআন হিফজ করা, উর্দু, ফার্সিসহ প্রাথমিক পড়াশুনা এই মাদরাসাতেই সমাপ্ত করেন। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ওলিকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা সায়্যিদ আজগর হুসাইন সাহেব দেওবন্দী রহ. হযরত শাহ আবরারুল হক হক্কী রহ. কে প্রথম সবক প্রদান করেন। স্বীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক এই ইসলামিয়া মাদরাসাতেই হযরত হারদুয়ী রহ. পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন এবং মাত্র আট বৎসর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে প্রচলিত শিক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য দূরবর্তী এলাকায় সফর শুরু করেন।
দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত : ১৯৪৯ হিজরীতে সাহারাপুরস্থ মাজাহিরুল উলূমে ভর্তি হন এবং শরহে মিয়াতে আমেল, নাহভেমীর, দস্তুরুল মুবতাদী, কুবরা ও কাফিয়া ইত্যাদি কিতাব থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হন। ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে দাওরায়ে হাদীসের শ্রেণী। এই শ্রেণীতেই বুখারী শরীফ, মুসলীম শরীফসহ সিহাহ সিত্তার ছয়টি কিতাব ও হাদীসের অন্যান্য কিতাবসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে শিক্ষা দেওয়া হয়। হযরত হারদুয়ী রহ. এই শ্রেণীতে দুই বৎসর পড়াশোনা করে হাদীস শাস্ত্রে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হন। তিনি ১৩৫৫ হিজরীতে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হন এবং ১৩৫৬ হিজরীতে শেষ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়া শরহে হাদীস ও উসূলে হাদীসের উপর তিনি বিশেষভাবে পড়াশোনা করেন।
তাখাসসুস ফিল উলূম ওয়াল ফুনুন : সাধারণত দাওরায়ে হাদীস থেকে ফারেগ হওয়ার পর ছাত্রগণ কর্ম জীবনে লেগে যায়। যে সমস্ত ত্রুটি বা ঘাটতি থাকে, তা আর সংশোধন বা পূর্ণ করার সুযোগ লাভ হয় না। তাছাড়া বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভের জরুরী কিছু বিষয়ের উপর পড়াশোনা করা একান্ত প্রয়োজন হয়। এ সমস্ত বিশেষ কোর্সসমূহে সাধারণত মেধাবী ছাত্ররাই অংশগ্রহণ করে থাকে। হযরত হারদুয়ী রহ. একে তো ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সাথে সাথে তার জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ তাকে অধীর করে তোলায় তিনি দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করে দু‘বৎসর তাকমীলে ফুনুন-এ পড়াশোনা করেন এবং ১২৫৭ হিজরী পর্যন্ত প্রথম বৎসর তাফসীরে বায়জাবী শরীফ, রসমুল মুফতি, তিরমিযী ও শামায়েলে তিরমিযী, হামাসা, খুলাসাতুল হিসাব, শামসে বাযিগাহ, মুসাল্লামুস সুবূত, মুতানাব্বী, সাদরা, তাওজীহ-তালবীহ, শরহে চগমনী প্রভৃতি কিতাব অধ্যয়ন করেন।
ইলমে কেরাতের সনদ : ছাত্র জীবনেই তিনি তাজবীদ এবং পবিত্র কোরআনের সহীহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষার প্রতি যতœবান হন। মাজাহিরুল উলূমে পড়াশোনার সময় তিনি তাজবীদ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হন। শায়খুল কুররা হযরত মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের কাছে তিনি তাজবীদের গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি অত্যন্ত মেহনতের সাথে অধ্যয়ন করেন। কেবল কিতাবাদি পড়েই ক্ষান্ত হননি, দীর্ঘকাল পর্যন্ত মশকে তিলাওয়াতে নিমগ্ন থাকেন। তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাযের পূর্বে সম্মানিত কারী সাহেবের খেদমতে হাজির হতেন এবং ফজরের নামাযের পরই কারী সাহেবের নিকট থেকে তাজবীদের তালীম গ্রহণ করতেন। তাজবীদের পেছনে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে তিনি একদিন স্বীয় উস্তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হতে সক্ষম হন এবং স্বয়ং উস্তাদের মুখে কারী খেতাবে ভূষিত হন।
মেধা ও স্মৃতিশক্তি : মেধা ও স্মৃতিশক্তি খোদার বিরাট নেয়ামত, এটা সফলতা অর্জন ও উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অনেকে যথেষ্ট স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়, কিন্তু বুঝশক্তি কম হওয়ার কারণে গবেষণা ও তত্ত্ব সন্ধানে পুরোপুরি সফলকাম হতে পারেন না। আবার অনেকে বুঝ এবং উদ্ভাবণী শক্তি যথেষ্ট গভীর হয়, কিন্তু স্মৃতিশক্তির অপ্রতুলতার কারণে সে বাধাগ্রস্থ হয়। কিন্তু মহান প্রভুর অনুগ্রহ হযরত হারদুয়ী রহ. কুরআন শরীফ পুরাপুরি মুখস্থ, কন্ঠস্থ করা এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে অল্প বয়সেই উচ্চশিক্ষার জন্য সফর ও মেহনত করা এবং শিক্ষাজীবনে সমস্ত শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এ সমস্ত বিষয়ে হযরত হারদূয়ী রহ.-এর মেধা ও স্মৃতিশক্তির সুবাদে বহুবার বিশেষ পুরস্কার পান।
হযরত হারদুয়ী রহ.-এর শিক্ষকবৃন্দ : হযরত হারদুয়ী রহ.-এর সফল জীবনের সবচেয়ে বেশি অবদান স্বীয় পিতা হযরত মাহমুদুল হক রহ. এর। যিনি ছিলেন হযরত থানভী রহ.-এর হাতে গড়া বাগানের এক ফুটন্ত ফুল। তিনি তার সন্তানকে প্রথমে সবক দেয়ার জন্য যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও মুহাদ্দিস আওলাদে রাসূল সায়্যিদ আসগর হুসাইন সাহেব দেওবন্দী রহ.-কে নির্বাচন করেন। হযরত রহ. তার নিকট থেকেই প্রথম বিসমিল্লাহ এর সবক নেন।
ইলমে তাজবীদ, প্রখ্যাত বুযুর্গ শায়খুল কুররা হযরত আবদুল খালেক সাহেবের নিকট শিক্ষাগ্রহণ করেন। বুখারী শরীফ প্রথম অংশ শায়খুল হাদীস হযরত যাকারিয়া কান্দলভী রহ.-এর নিকট অধ্যয়ন করেন। বুখারী শরীফ দ্বিতীয় অংশ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আরিফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা আবদুল লতিফ রহ.-এর নিকট পড়েন।
মুসলিম ও নাসায়ী শরীফ হযরত মাওলানা মঞ্জুর আহমদ খান রহ.-এর নিকট অধ্যয়ন করেন। তিরমিযী ও তাহাবী শরীফ বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান কামেলপুরী রহ.-এর নিকট পড়েন। এছাড়া অন্যান্য কিতাব যে সকল শিক্ষকের নিকট পড়েন তারা যেমনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম তেমনি ছিলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠ বুযুর্গানে দ্বীন। হযরত রহ.-এর জীবন সাধনায় তার উস্তাদবৃন্দের বিরাট অবদান ছিল।
শিক্ষকতা : তার অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ জ্ঞান-গভীরতা, চারিত্রিক পবিত্রতা ও কর্তব্যপরায়ণতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই শিক্ষা সমাপ্তির পর তারা হযরতকে মাজাহিরুল উলূমের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। হযরত হারদুয়ী রহ. অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে স্বীয় শিক্ষকবৃন্দের তত্ত্বাবধানে কৃতিত্বের সাথে স্বীয় জিম্মাদারী পালন করে সুনাম অর্জন করেন।
কানপুর মাদরাসায় শিক্ষকতা : হযরত থানভী রহ. প্রথম দিকে কানপুর জামিউল উলূম মাদরাসায় দীর্ঘ ১৪ বৎসর খেদমত করার পর ১৩১৫ হি. স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দিয়ে থানাভবন চলে আসেন। পরে হযরত মাওলানা আবরারুল হক রহ. কে আল্লামা যাফর আহমদ ওসমানীর মাধ্যমে পাঠানো হয়।
হযরত হারদুয়ী রহ. শায়খুল হাদীস মনোনীত : জামিউল উলূমে যোগদানের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যেই হযরত রহ.-এর ইলমী-আমলী দক্ষতা, তাকওয়া-তাহারাত ও শিক্ষকতার সুনাম সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সকল মুয়াল্লিম, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের সর্বাধিক প্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অত্র মাদরাসার শায়খুল হাদীস সাহেব সাময়িক ছুটি গ্রহন করলে প্রথমে সাময়িকভাবে হযরত হারদুয়ী রহ.-কে বুখারী শরীফ পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে তার অসাধারণ প্রজ্ঞা, ইলমী গভীরতা, প্রশস্ততা ও ছাত্রদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকেই স্থানীয়ভাবে শায়খুল হাদীসের দায়িত্বে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্ব ও সফলতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন।
আশরাফুল মাদারিস প্রতিষ্ঠা : হযরত থানভী রহ.-এর নির্দেশ ও পরামর্শে হারদুয়ী হযরত রহ. হারদুয়ী এলাকার ন্যায় কুফর ও শিরকপূর্ণ এলাকায় ইলমে দ্বীনের ঐ চেরাগ প্রজ্বলিত করেন যার উজ্জল আলো থেকে আজ সকল শ্রেণীর মুমিন মুসলমান উপকৃত হচ্ছে। এ হারদুয়ী এলাকায় তিনি আশরাফুল মাদারিস নামে একটি মাদরাসা স্থাপন করেন। এ মাদরাসায় স্থানীয় ছাত্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশ বিশেষত উপমহাদেশের ও ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের ছাত্ররাই উলূমে নববী অর্জন করার জন্য দলে দলে চলে আসে। এর মধ্যে গুজরাট, বিহার, বোম্বাই, হায়দারাবাদ, কলকাতা, মাদ্রাজ, দিল্লী, ইউপি প্রভৃতি অন্যতম।
বর্তমানে এখানে হিফজখানা মক্তব ছাড়াও কিতাব বিভাগ মিশকাত ও দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত পড়াশোনা হচ্ছে। অত্র মাদরাসার প্রায় ৮০টি শাখা ভারতের আনাচে কানাচে দ্বীনের খেদমত করছে।
খেলাফত লাভ : হযরত হারদূয়ী রহ. ছাত্র জীবনেই হাকিমুল উম্মতের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপন করেন। ফারাগাতের পর ভিন্নভাবে বায়আত গ্রহণ করতঃ হযরত থানভী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে ইসলাহে নফসের কঠোর মেহনত ও মুজাহাদায় আত্মনিয়োগ করেন। হযরত থানভী রহ. হযরত হারদুয়ী রহ.-এর ইলমে যাহেরীর উপর যেমন বিশেষ আস্থাশীল ছিলেন, তেমনি ইলমে বাতেন তথা রুহানীভাবেও গভীর আস্থাশীল ছিলেন। তাই ১৩৬১ হিজরীতে ফতেহপুর জামিয়া ইসলামীয়ায় শিক্ষকতাকালে মাত্র ২৩ বৎসর বয়সে হাকিমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. তাকে খেলাফত দান করেন।
বাংলাদেশে হযরত হারদুয়ী রহ.-এর খলিফাদের মধ্যে যারা রয়েছেন
হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান রহ.- পরিচালক, ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা। ঢাকা।
হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান দা. বা.- আমীর, দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ ও মুহতামিম যাত্রাবাড়ি মাদরাসা।
হযরত মাওলানা ফযলুর রহমান সাহেব রহ.
জনাব প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব।
হযরত মাওলানা হিফজুর রহমান সাহেব।
হযরত মাওলানা সায়্যিদ আহমদ সাহেব রহ.। মুহতামিম, ওলামা বাজার মাদরাসা, ফেনি।
জনাব প্রফেসর গিয়াছুদ্দিন আহমদ সাহেব আজিমপুর, ঢাকা।
হযরত মাওলানা হাকীম আখতার সাহেব রহ., করাচী পাকিস্তান।
মুফতী মনসুরুল হক সাহেব দা. বা.। প্রধান মুফতি, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া। ঢাকা।
হযরত মাওলানা হিফজুর রহমান সাহেব। মুহাদ্দিস-জামিয়া রাহমানিয়া, ঢাকা। এছাড়াও পুরা বিশ্বে তাঁর অগণিত মুরীদ ও খলিফা রয়েছে।
ইন্তেকাল : দ্বীন ইসলামের এই মহান দাঈ ও সংস্কারক, সুন্নতে নববীর উজ্জ্বল নক্ষত্র, যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামেল, হাকিমুল উম্মত হযরত থানভী রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা, মজলিসে দাওয়াতুল হকের বিশ্ব আমীর, মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক হক্কী হারদুয়ী রহ. ৮৮ বছর বয়সে ১৭ ইং মে, ২০০৫ ইং মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮ টায় ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী জেলায় নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আমার স্মৃতি : হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. কে আমরা দেখেনি কিন্তু তাঁর মালফুযাত, মাওয়ায়েজ ও বাণী পড়েছি, শুনেছি অনেক। উস্তাদদের কাছে তাঁর আলোচনা, প্রশংসা ও সংস্কারমূলক স্মৃতি কথার দরসগাহ থাকতো মুখরিত। তাই তাকে দেখার ইচ্ছা থাকলেও তাতো আর সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর হাতে গড়া, তাঁর সোহবত সান্নিধ্যে ধন্য কেবল এক ব্যক্তিই বাকি ছিলেন। যিনি রুহানী ফয়জ ও হযরত থানভী রহ.-এর প্রতিনিধি হিসাবে সারা বিশ্বে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হলেন হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক হারদুয়ী রহ.। ‘দাওয়াতুল হক শিরোনামে ইসলাহী ও সংস্কারমূলক খেদমতের জাল ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে, বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলার গ্রামে গঞ্জের আনাচে কানাচে।
আলহামদুলিল্লাহ, তাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের সালানা ইজতিমায় তিনি দুই তিন দিনের জন্য বাংলাদেশে তাশরীফ আনতেন। জীবনের প্রায় শেষ দিকে, হুইল চেয়ারে চলা-ফেরা করতেন। এমন অবস্থায়ও দ্বীনি সফরে আসতেন। শুনতে পেলাম তিনি যাত্রাবাড়ি জামিয়া ইসলামিয়া মাদানীয়া মাদরাসায় বয়ান করবেন। ছুটে গেলাম সেখানে। হযরতের বয়ানের পূর্বে মজলিসের আদব সম্পর্কে মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ দা.বা. বয়ান করছেন। কিছুক্ষণ পর তাশরীফ আনছেন হযরত মাহমুদুল হাসান দা.বা.। তিনি এসে মাইক হাতে নিয়ে শ্রোতাদেরকে সতর্ক করলেন। কোনো আওয়াজ যেন না হয়। হযরতওয়ালা অনেক অসুস্থ। আপনাদের মহব্বতে তিনি ছুটে এসেছেন। এখনই মঞ্চে তাশরীফ আনবেন সুতরাং একটু আওয়াজও যেন না হয়, হযরত মনে যেন কষ্ট না পান। এভাবে বিভিন্নভাবে তিনি সতর্ক করতে করতে জ্যোতির্ময় কান্তি, সাদা রুমাল দ্বারা আবৃত নূরানী চেহারার লোকটি হুইল চেয়ারে করে তাশরীফ আনলেন। মনে হলো যেন নূরে জ্যোতিতে রুহানী আলোয় ঝলমল করে উঠছিল।
অত্যন্ত ভাব গাম্ভির্যতার সাথে বয়ান শুরু করলেন। আমি মজলিসের মাঝখান থেকে তাঁর দিকে কেবল তাকিয়েই ছিলাম। মনে ভরে সেদিন তাঁকে দেখেছি। নুরানী কথাগুলো শুনেছি। সুন্নত মোতাবিক চলার প্রেরণা এবং ইত্তেবায়ে সুন্নতের উপকারিতা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে ছিলেন। আমার তাঁকে দেখা এটাই প্রথম এবং এটাই শেষ দেখা। আল্লাহ তাআলা তাঁর সব খেদমতগুলোকে কবুল করেন। তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতের আলা মাকাম দান করেন। আমাদেরকে তাঁর রেখে যাওয়া মিশনের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করেন। আমীন।