মুহাররম মাসের তাৎপর্য-করণীয় ও বর্জনীয়
আরবী চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাস এর নাম হলো মুহররম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহররমের রোযা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৮, তিরমিজী শরিফ ১/১৫৭)
পবিত্র কুরআনে এ মাসকে সম্মানিত মাস বলা হয়েছে- “আরবাআতুল হুরুম’ অর্থাৎ, চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এ মাস। ইসলামের ইতিহাসে এ মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কিছু ঘটনা সঠিক (সহীহ) সূত্রে বর্ণিত, আবার মওজু (বানানো) অনেক ঘটনার ছড়াছড়িও সমাজে রয়েছে, যা কেবলই মনগড়া। এই মাসের সাথে সম্পর্কিত কিছু ফজিলতসম্পন্ন নেক আমল, আবার বর্জনীয় কুসংস্কারেরও প্রচলন রয়েছে। আমাদের উচিৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করণীয় নেক আমলগুলো করা আর বর্জনীয় কুসংস্কারগুলো পরিহার করা।
করণীয়: এ মাসের দিনগুলোতে যতদিন সম্ভব নফল রোযা রাখা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি। (সহীহ বোখারী ১/২৬৮)
হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করেছিলেন যে,রমজানের পর আর কোন মাস আছে যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখতে আদেশ করেন? তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমজানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও তবে মুহররম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (তিরমিজী শরীফ ১/১৫৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭, তিরমিজী শরীফ ১/১৫৮)
আশুরার রোযা সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে, তোমরা আশুরার রোযা রাখো এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার। (১০তারিখের) আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখো। (মুসনাদে আহমদ ১/২৪১)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখেও রোযা রাখবো।। (মুসলিম শরীফ ১/৩৫৯)
মোট কথা:
১. মুহররম মাসে ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোযা রাখা।
২. কৃত গুনাহের জন্য বিশেষভাবে ১০তারিখে তাওবা করা,ক্ষমা চাওয়া ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। বর্জনীয়: এ মাসে তাজিয়া বের করা, শোকগাঁথা পাঠ করা ও শোনা, কালো কাপড় পরে শোক পালন, মীর মোশাররফ রচিত বিষাদসিন্ধু সম্মিলিতভাবে বসে পাঠ ও ক্রন্দন করা, মিছিল ও র্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অনৈসলামিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। অনেকে এসব কুপ্রথা ও কুসংস্কারের কারণে এ মাসকে অশুভ মাস মনে করে বিয়ে শাদী থেকে বিরত থাকে অথচ মাসের কোন অশুভত্ব নেই। শুভ-অশুভ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়। সুতরাং এ মাসে বিবাহশাদি। সম্পন্ন করাতে কোন সমস্যা নেই। এসবই অনৈসলামিক ধ্যানধারণা ও কুসংস্কার। এগুলো বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
সাবধানতা:
ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সভ্যতা-সাংস্কৃতি পরিহার করে একমাত্র ইসলামী সভ্যতা চালু করা ও আমল করা এ মাসের অন্যতম শিক্ষা। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
রচনায়
মুফতী হাফীজুদ্দীন সাহেব
খলীফা, ফিদায়ে মিল্লাত হযরত আস’আদ মাদানী রহ.
মুহাদ্দিস, জামিয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ, ঢাকা
পরিচালক, জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া ঢাকা
ইমাম ও খতীব, মালিবাগ বাগানবাড়ী জামে মসজিদ