বায়আত সম্পর্কে কুরআনের দুটি আয়াত
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
অর্থ: ( হে রাসূল!) যারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহণ করছে প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছে বায়আত গ্রহণ করছে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। এরপর যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তার অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হবে। আর যে-কেউ অঙ্গীকার পূরণ করবে, যা সে আল্লাহর সঙ্গে করছে, আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন। ( সূরা আল-ফাতহ, আয়াত নং-১০)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থ: হে নবী! মুসলিম নারীগণ যখন তোমার কাছে এই মর্মে বায়আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকেই শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, এমন কোন অপবাদ রটাবে না,যা তারা নিজেদের হাত-পায়ের মাঝখান থেকে রচনা করেছে এবং কোন ভাল কাজে তোমার অবাধ্যতা করবে না, তখন তুমি তাদের বায়আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দুআ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ( সূরাতুল মুমতাহিনা, আয়াত নং-১২)
এই আয়াতের টীকায় হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেছেন, এই আয়াত বায়আতের দলীল হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট। আর রুসমী বায়আত যেখানে আমলের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না, এই আয়াত দ্বারা তা বাতিল বলে প্রমাণিত হয়।
মহিলাদের বায়আত
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থ: হে নবী! মুসলিম নারীগণ যখন তোমার কাছে এই মর্মে বায়আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো জিনিসকেই শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, এমন কোন অপবাদ রটাবে না- যা তারা নিজেদের হাত-পায়ের মাঝখান থেকে রচনা করেছে এবং কোন ভাল কাজে তোমার অবাধ্যতা করবে না, তখন তুমি তাদের বায়আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দুআ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত-১২)
মুমিন-মুসলমান মহিলাদের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধির জন্যে বায়আত হওয়া কুরআন ও হাদীস স্বীকৃত। সংক্ষেপে তাদের বায়আতের পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
হযরত মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ. উক্ত আয়াতের পর বলেন, এই আয়াতে মুসলমান নারীদের বায়আত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। আর তা হলো, এ আয়াতে মুসলমান নারীদের থেকে ঈমান, আকীদা- বিশ্বাস ও শরীয়তের হুকুম আহকামের উপর আমল করার অঙ্গিকার গ্রহণ করা হয়েছে।
হযরত উমায়মা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমরা কয়েকজন মহিলা বায়আত হয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়আতের সময় আমাদের থেকে শরীয়তের হুকুম আহকামের উপর আমল করার অঙ্গিকার নেওয়ার শেষে বললেন- فيما استطعتن و أطقتن
“যতটুকু তোমাদের শক্তি ও সামর্থের সম্ভব হয় ততটুকু তোমরা আমল করবে।”
(তিরমিযী, বাবু বায়আতিন নিসা, হাদীস-১৫২৩; মুয়াত্তা মালেক, হাদীস-১৫৫৬; নাসায়ী, হাদীস-৪১১০)
হযরত উমায়মা রাযি. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন, এ কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের চাইতেও বেশী দয়ালু ও ¯েœহশীল। কেননা আমরা তো কোন শর্ত করা ছাড়াই বায়আত হতে চাচ্ছিলাম, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শর্ত যোগ করে দিলেন যাতে কখনো অপারগতার কারণে কিছু করলেও অঙ্গিকার ভঙ্গ না হয়ে যায়। (মাযহারী ৯/২৬৭)
বুখারী শরীফে মহিলাদের বায়আত সংক্রান্ত আলোচনায় আম¥াজান হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহিলাদের বায়আত শুধু কথার মাধ্যমে হতো। পুরুষদের মতো হাতে হাত দেওয়ার কোন নিয়ম ছিল না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মোবারক কখনো কোন গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ এমন কোন) মহিলার হাতে স্পর্শ লাগেনি। (বুখারী, হাদীস-৭২১৪)
আর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মহিলাদের বায়আত করা শুধু হুদায়বিয়াতেই হয়নি, বরং অনেক বার হয়েছে। এমনকি মক্কা বিজয়ের দিন পুরুষদের বায়আত করার পর সাফা পাহাড়ে মহিলাদের বায়আত নিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়ের উপর থেকে বায়আতের শব্দগুলো বলছিলেন আর হযরত উমর রাযি. ঐ শব্দগুলো জোরে জোরে বলে দিচ্ছিলেন যাতে পাহাড়ের নিচের মহিলারা শুনতে পান।
তখন ঐ মহিলাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান রাযি.-এর স্ত্রী হিন্দাও ছিলেন। তিনি প্রথম দিকে লজ্জার কারণে নিজেকে গোপন রাখতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বায়আতের কয়েকটি বিস্তারিত আহকাম বর্ণনা করা হলে হিন্দা রাযি. নিজেই কিছু জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলেন এবং কিছু প্রশ্নও করলেন। এ ঘটনাটি তাফসীরে মাজহারীতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে। (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন, খ.৭,পৃ.৪১৬)