বাইয়াতের প্রকার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজের উপর বাইয়াত করেছেন। কখনো কাউকে ইসলাম গ্রহণের উপর বাইক করেছেন। আবার কখনো কাউকে পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করার উপর বাইয়াত করেছেন। কখনো নির্দিষ্ট কোন নেক কাজ করার উপর বা নির্দিষ্ট কোন গোনাহ ছাড়ার উপর বাইয়াত করেছেন। যার ফলে বাইয়াত বিভিন্ন প্রকারের হয়েছে। হযরত মাওলানা শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. এর কিতাব ‘আল-কওলুল জামিল’ এ বিষয়ে যে আলোচনা এনেছেন তার আলোকে আমরা মৌলিকভাবে বাইয়াতের পাঁচটি প্রকার খুঁজে পাই।
১. ইসলামের উপর বাইয়াত।
২. জিহাদের বাইয়াত।
৩. খেলাফতের বাইয়াত।
৪. গোনাহে কবীরা থেকে বেঁচে থাকার ওপর বাইয়াত।
৫. নেক আমলের উপর বাইয়াত।
বুঝার সুবিধার্থে সবগুলো প্রকারের সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো-
ইসলামের উপর বাইয়াত: কোন কাফের বা মুশরিক পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করে যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চায়, তখন তাকে ইসলাম গ্রহণের উপর যে বাইয়াত করানো হয় তাকে ইসলামের বাইয়াত বলে।
জিহাদের বাইয়াত: জিহাদ করার উপর যে বাইয়াত করা হয় তাকে জিহাদের বাইয়াত বলা হয়। অর্থাৎ কাফেরদের সাথে মুকাবেলা করবে। জীবন থাকা অবস্থায় কাফেরদের মোকাবেলা করা থেকে পিছনে হটবে না। যেমন হুদায়বিয়ায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে বাইয়াত করেছিলেন।
খেলাফতের বাইয়াত: মুসলমানদের শাসক বা খলীফা নির্বাচনের জন্য যে বাইয়াত নেওয়া হয় তাকে খেলাফতের বাইয়াত বলে। যেমন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর সাহাবা কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি. এর হাতে বাইয়াত হয়ে ছিলেন। এ ধারা চলছিলো। বর্তমান সৌদি আরবে এই নিয়মই চালু রয়েছে যে, যখন বাদশাহ নির্বাচন করা হয় তখন তার হাতে লোকেরা বাইয়াত হয় ।
গোনাহে কবীরা থেকে বেঁচে থাকার ওপর বাইয়াত: এটা এই বাইয়াত যার আলোচনা ২নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে এই বাইয়াত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষ ও মহিলাদের থেকে কোন কোন গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপর বাইয়াত নিয়েছেন, যেমন কিছু মহিলাদের থেকে বাইয়াত নিয়েছিলেন যে, তারা যেন বিলাপ (কোন আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে অস্বাভাবিক কান্না) না করে।
নেক আমলের উপর বাইয়াত: এই প্রকারের বাইয়াত অনেক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আজ পর্যন্ত এ বাইয়াতের ধারা চলে আসছে। যাকে কুরআনের পরিভাষায় ‘তাযকিয়া’ আর হাদীসের পরিভাষায় ‘ইহসান’ বলা হয়। যেমন, হাদীসে জিবরাঈলে এ কথা উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে এটা ‘তাসাউফ’ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে এবং এটাকে পীর মুরুদীও বলা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিম্মায় যে গুরুত্বপূর্ণ চারটি কাজ ছিলো কুরআনের চার জায়গায় উল্লেখ আছে, তার একটা হলো ‘তাযকিয়া’ তথা আত্মশুদ্ধি করানো। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
অর্থাৎ তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে শুনান এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। (সূরা জুমা, আয়াত-০২) কিতাব ও হেকমতের মাঝে দ্বীনের সমস্ত জরুরী ইলম চলে আসছে।